কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কখন কীভাবে ভর্তি পরীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কথা ছিল গত ডিসেম্বরের মধ্যে জেএসসি, এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। কিন্তু আইনি জটিলতায় সেটি পিছিয়ে গেছে। অধ্যাদেশ জারির পর ফল ঘোষণা হবে, পরীক্ষা ছাড়া পাস করবে ১৩ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। কিন্তু উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ভর্তি কীভাবে হবে? ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কী ভাবছে? নানা জায়গার নানা খবরে শিক্ষার্থীরা যেন বিভ্রান্তিতে না পড়ে, তাই এখন পর্যন্ত পাওয়া সব হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরা হলো।

চার স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

পরীক্ষা পদ্ধতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার ২০০ নম্বরের পরিবর্তে ১০০ নম্বরের ভিভিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে। এই ১০০ নম্বরের মধ্যে লিখিত ও বহুনির্বাচনী পরীক্ষার মোট নম্বর থাকবে ৮০ লিখিত পরীক্ষায় ৪০ এবং বহুনির্বাচনী অংশের নম্বর থাকবে ৪০। আর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল থেকে ২০ নম্বর নেওয়া হবে। করোনার কারণে এবার সব বিভাগীয় শহরে পরীক্ষার কেন্দ্র থাকবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের মতো করে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। ১০০ নম্বরের পরীক্ষার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুনির্বাচনী প্রশ্নে (এমসিকিউ) ভর্তি পরীক্ষা হবে। কেবল ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ (এখনো ফল প্রকাশিত হয়নি) শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

মেডিকেল কলেজ

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা আগামী ৫ মার্চ এবং ডেন্টালের ভর্তি পরীক্ষা ২ এপ্রিল হওয়ার কথা থাকলেও এইচএসসির ফল প্রকাশে দেরি হওয়ায় তা পিছিয়ে দেয়ার প্রাথমিক সিদ্বান্ত হয়েছে। 

ভর্তি পরীক্ষার সদস্যসচিবের দায়িত্বে থাকা স্বস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (শিক্ষা) এ কে এম আহসান হাবীব বলেন, এখন ২ এপ্রিল এমবিবিএসের পরীক্ষা এবং ৩০ এপ্রিল ডেন্টালের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। তবে এখনো এটি চূড়ান্ত হয়নি। পর্যালোচনা সভা করে সিদ্ধান্ত হবে। 
 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে স্নাতক (সন্মান) এবং স্নাতক (পাস) কোর্সে প্রথম বর্ষে মোট আসন আছে সাড়ে আট লাখের বেশি। এর মধ্যে সন্মান প্রথম বর্ষে আসন আছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৫টি এবং পাস কোর্সে আসন আছে ৪ লাখ ২১ হাজার ৯৯টি। স্লাতক (সম্মান) পড়ানো হয়, এমন কলেজ আছে ৮৬৭টি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্ষ মো. মশিউর রহমান জানান, তাদের মধ্যে একটি আলোচনা হয়েছে- ১৩টি শতবর্ষী কলেজে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। কিন্তু এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যদি এটি না হয়, তাহলে সব কলেজে গত কয়েক বছরের মতোই এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিডিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে! এইচএসসির মূল্যায়নের ফল ঘোষণার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভর্তির কাজটি অনলাইনে করা হবে।


বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

দেশের ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বর্তমানে ৯৭টির শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি অভিন্ন আইনের অধীনে চললেও তারা পুথক ব্যবস্থায় ভর্তিসহ শিক্ষা কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করে। এখন পর্যন্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেই। অর্থাৎ আগের মতোই শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত আছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তাদের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তির বিষয়টিও সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে।

 ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র ইউনিভার্সিটি, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিভিটাল ইউনিভার্সিটি, নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুনেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববির্যলয়।

পরীক্ষা পদ্ধতি

বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা-_তিন বিভাগের জন্য মোট তিনটি ভর্তি পরীক্ষা হবে। বিভাগ পরিবর্তনেরও সুযোগ থাকবে৷ একজন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী নিজ নিজ বিভাগে ১০০
নম্বরের বহুনির্বাচনী প্রশ্নে পরীক্ষা দেবেন। উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যসূচি অনুযায়ী প্রশ্ন করা হবে।

পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের একটি স্কোর দেওয়া হবে। এরপর গুচ্ছের মধ্যে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ শর্ত ও চাহিদা উল্লেখ করে শিক্ষাথী
ভর্তির বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করবে। তারপর পরীক্ষায় পাওয়া স্কোর অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। পরে আর কোনো পরীক্ষা হবে না।

২০১৯ ও ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস শিক্ষার্থীরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। তবে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীদের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি নেবে, সেটি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক করবে।

মানবিক বিভাগের পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় মোট ভিপিএ-৬ থাকতে হবে। বাণিজ্য বিভাগের জন্য মোট জিপি এ-৬ দশমিক ৫ এবং বিজ্ঞানে মোট জিপিএ-৭ থাকতে হবে। কিন্তু এসএসসি ও এইচএসসি কোনো পরীক্ষায় জিপিএ-৩- এর নিচে থাকলে আবেদন করা যাবে না।

সাত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্বাবিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

গত বহরের মতো এবারও কৃষি ও কৃষির প্রাধান্য থাকা সাতটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমদ্ধিত বা গুচ্ছ ভিভিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য লুৎফুল হাসান জানান, এবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে এই সাত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে

চার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এই চার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গুচ্ছ ভিভিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে নীতিগতভাবে একমত থাকলেও এখনো নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি। এ বিষয়ে বুয়েটের শিক্ষা পরিষদ (একাডেমিক কাউন্সিল) একটি প্রস্তাব দিলেও তা নিয়ে কোনো চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037431716918945