খেলাধুলার সুযোগবঞ্চিত প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা

মো. সিদ্দিকুর রহমান |
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতি গুরুত্ব প্রদানে প্রতিনিয়ত নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ও সুস্থতার জন্য খেলাধুলাসহ বিনোদনের বিকল্প নেই। খেলাধুলা, বিনোদন ও ব্যায়াম শুধু শিশুদের একার নয়, বড়দের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। প্রত্যেক নর-নারীর শারীরিক মানসিক সুস্থতার জন্য বিনোদনের পাশাপাশি সামর্থ্যানুযায়ী হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করা প্রয়োজন। আমরা অনেকে বিষয়গুলোর
প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে গুরুত্ব না দিয়ে অবহেলা করে দেহ-মনকে অকার্যকর করে অসুস্থ হয়ে পড়ি। তেমনি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, বিনোদন সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে সুস্থ, সবল ও মেধাবী আগামী প্রজন্মের কোন অবস্থান তৈরি করা সম্ভব নয়। শুধু পড়ায় শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশিত জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন বিনোদন, খেলাধুলার মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক সুস্থতা। একটুখানিক বিশ্রাম, ঘুম বা বিনোদন এনে দেবে সুস্থ, সবল দেহে কাজ করার নব অনুপ্রেরণা বা প্রাণশক্তি। কবির ভাষায় ‘বিশ্রাম কাজের অঙ্গ এক সাথে গাঁথা, নয়নের পাতা যেন নয়নের গাঁথা।’ 
 
অথচ  প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোন ইতিবাচক দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নিয়ে শিশুদের খেলাধুলা ও বিনোদনের বিষয়টি গুরুত্বহীন করে তুলেছেন। শিশু শিক্ষার মন্ত্রণালয় শিশুদের প্রতি এ অমানবিক আচরণ উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। খেলাধুলা ও বিনোদন ব্যতিরেকে শিক্ষার্থীর শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক বিকাশে পরিপূর্ণতা লাভ করেন না। শারীরিক সুস্থতা থাকলে শিক্ষার্থী স্বাভাবিকভাবে মেধাবী হয়ে থাকে। এক নাগাড়ে দৈনিক ৬-৭ পিরিয়ড ক্লাসের নামে বিদ্যালয়ে অবস্থান করিয়ে ফুরুৎ ফুরুৎ শিক্ষকের শ্রেণিকক্ষে আসা-যাওয়ার মাঝে শিক্ষার্থী কতটুকু জ্ঞান অর্জন করতে পারেন, তা সকলের উপলব্ধি করা প্রয়োজন। ৭ পিরিয়ডে কম-বেশি দেওয়া বাড়ির পড়া বা কাজের চাপ নিয়ে, ৩টা থেকে  সোয়া চারটা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অবস্থানের পর শিক্ষার্থী ক্ষুধার্ত দেহ-মন নিয়ে বাসায় ফেরেন। ক্লান্ত শরীরে হাত-মুখ কোন রকম ধুয়ে দুপুরের রান্না করা গরম খাবার (যা ঠান্ডা হয়ে যায়) কোন রকম খেয়ে নেন। সারাদিনের ক্লান্ত শরীর খাওয়ার পর দেহ খানিকটা বিশ্রাম চায়। অপরদিকে পড়ন্ত বেলা ভুলতে বসেন বিকাল বেলা খেলাধুলার কথা।  
 
এবারে ভাবুন, সারাদিন আনন্দবিহীন পড়াশুনা, খেলাধুলা, বিনোদন ছাড়া ও ক্ষুধার্ত দেহ-মন নিয়ে সন্ধ্যার পর বাড়ির কাজ বা স্কুলের পড়া শিশু শিক্ষার্থীর ওপর নির্মম চাপ-কতটা শারীরিক মানসিক ও মেধার বিকাশ ঘটাবে । 
 
শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক সুস্থতা, জ্ঞানমুখী শিক্ষা অর্জনে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার নির্দেশনা কার্যকরের জন্য কতিপয় প্রস্তাবনা উপস্থাপন।
 
উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শাখা, কিন্ডারগার্টেনসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিন্ন (শিশুবান্ধব সময়সূচি,  বই ও মূল্যায়ন পদ্ধতি) বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে বৈষ্যম্যহীন শিশু শিক্ষাব্যবস্থা ফলপ্রসূ করা সম্ভব হবে। 
 
সুস্থ, সবল দেহ-মন নিয়ে আগামী প্রজন্ম জ্ঞান অর্জনমুখী শিক্ষায় অগ্রসরমান হবে। এ প্রত্যাশায় শিশুদের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুপুর ২টার মধ্যে ছুটি প্রয়োজন। যাতে, তারা দুপুরে গরম খাবার খেয়ে খানিকটা বিশ্রাম বা ঘুমিয়ে বিকেবলে সুস্থ দেহ-মন নিয়ে খেলাধুলা বা বিনোদনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। 
 
প্রতিদিন ৬-৭ পিরিয়ডের পর বাড়ির কাজ বা পড়া বন্ধ করা প্রয়োজন। বিকেলে খেলাধুলা সুযোগ না দেওয়া, বাড়িতে পড়ার চাপ শিশু মনোবিজ্ঞান পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, এ ব্যবস্থা শিশু নির্যাতনের শামিল। 
 
বর্তমানে শিশু প্রতিষ্ঠানে দৈনিক ৬-৭টা পিরিয়ড অনুষ্ঠিত হয়, এতে শিক্ষার্থীরা নাম ডাকাসহ শিক্ষকের আসা-যাওয়া বেশ সময় নষ্ট হয়। অপর ৩০-৪০-৫০ মিনিটের পিরিয়ডের পাঠদান প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীর সার্বিক জ্ঞান দিতে ব্যর্থ হয়। এতে শিক্ষক বাড়িতে পড়াশোনার  চাপ বা নোট  গাইডের সহযোগিতা নিতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ নেন। এতেই বিকশিত হয় নোট, গাইড ও কোচিং কার্যক্রম। এ কার্যক্রম বন্ধ করতে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪ পিরিয়ডের বেশি কাম্য নয়। প্রতি পিরিয়ডে ১  ঘন্টাসহ শিক্ষার্থীর মূল্যায়নের জন্য আরো কিছু সময় প্রয়োজনে বৃদ্ধি করা যেতে পারে। প্রতিদিন অবশ্যই খেলাধুলাসহ কো-কারিকুলাম  কার্যক্রম থাকা প্রয়োজন।
 
বাড়িতে পড়ার চাপ কমানোর জন্য নতুন পড়া শিক্ষার্থীকে পড়তে দেওয়া ঠিক নয়। যাতে কারো ওপর চাপ সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে শিক্ষকরা অবশ্য সুদৃষ্টি দেবেন। আশা করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিগগির সুষ্ঠু ব্যবস্থা  গ্রহণ করবেন ।
 
লেখক : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ  ও সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।
 

পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027079582214355