গরমে করোনার আক্রমণ বাড়বে না, তা বলা যাবে না: ডা: রুমি আহমেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো রিজিওনাল মেডিকেল সেন্টারে কর্মরত ডা: রুমি আহমেদ খান বলেছেন, বেশি শীতে করোনা বেশি ছড়ায় এবং গরম আবহাওয়ায় এটা হয়তো শীতের মতো বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারে না। কিন্তু এটা অত্যন্ত সংক্রামক। তাই অল্প সময়ে বেঁচে থাকার সামান্য সুযোগ পেলেই এরা মানবদেহকে সংক্রমিত করে ফেলে।

তিনি বলেন, ‘মানবদেহে ঢোকার পরে তারা একই তাপমাত্রায় বেড়ে ওঠে। কারণ, সব আবহাওয়ায় মানবদেহের তাপমাত্রা সমান।তাই গরম বলেই এটা বাড়বে না, তা বলা যাবে না। বাংলাদেশের চেয়ে বেশি গরম যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে। প্রায় একই রকম লুইজিয়ানায়। এই এলাকা দুটি যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ানকভাবে আক্রান্ত এলাকাগুলোর অন্যতম। সিঙ্গাপুরও ঠান্ডার দেশ নয়। মিয়ামিতে আজই (সোমবার) ১ হাজার ব্যক্তির পজিটিভ ফল এসেছে।

রুমি আহমেদ খান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো রিজিওনাল মেডিকেল সেন্টারে কর্মরত এবং ট্রেনিং প্রোগ্রামের পরিচালক। মেডিসিনের (রেসপিরেটরি ও আইসিইউ) সহযোগী অধ্যাপক। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রে যান। টেলিফোনে তিনি কোভিড-১৯ মোকাবিলা নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের সাথে। আজ তাঁর সাক্ষাৎকারটি প্রথম আলোতে প্রকাশ হয়েছে। সেখানেই তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। 

রুমি আহমেদ খান তার হাসপাতাল সম্পর্কে বলেন, মনে রাখতে হবে, পিসিআর দিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী যে টেস্ট চলছে, তার শুদ্ধতার শতকরা হার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। এ কারণে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) আটলান্টার গাইডলাইনে দুধরনের পদ্ধতিতে পদ্ধতিতে নেগেটিভ শনাক্তকরণের কথা বলা হয়েছে। একটি হলো পিসিআর দিয়ে। যে ক্ষেত্রে রোগী কোনো হটস্পট থেকে এসেছেন বা যার প্রাথমিক লক্ষণগুলো স্পষ্ট, চিকিৎসকেরা ধারণা করছেন কোভিড–১৯ সংক্রমণের সব লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তার ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুবার আমরা ‘আরটি পিসিআর’ করে থাকি। এ ধরনের যেসব রোগীর দুবার নেগেটিভ পেয়েছি, তাকে কোভিড–১৯ মুক্ত বলেছি। অন্যদিকে কোনো ব্যক্তি যদি হাইরিস্ক এলাকার না হয়ে থাকেন, তার সিম্পটমের অন্য ব্যাখ্যা থাকে এবং অন্য সব বিষয়ের লক্ষণ রিপোর্টই ভালো থাকে, তাহলে তার জন্য টেস্টের ওপর নির্ভর না করেই নেগেটিভ বলা যায়। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর—সবাই অনেক ক্ষেত্রে দুবার করে টেস্ট করেছে। প্রথমবার নেগেটিভ এসেছে। রোগের লক্ষণ থাকলে ২৪ ঘণ্টা বিরতিতে নতুন করে নমুনা নিয়ে তাকে আবার পরীক্ষা করেছে তারা।

রুমি আহমেদ খান-এর নিজের ইউনিটে কতজন মারা গেছেন? বা তাঁরা কাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘পুরো সংখ্যাটা তো বলা যায় না, হিপা রেগুলেশন আছে। গত এক সপ্তাহে অন্তত তিনজন মারা গেছেন। তাঁরা সবাই নার্সিং হোমে থাকা লোক। বয়স্ক। এটা লক্ষণীয় যে গোটা ফ্লোরিডায় যত লোক আক্রান্ত ও মারা গেছেন, তঁারা কোনো বিদেশি সূত্রের সংস্পর্শে আসেননি। শুধু ফ্লোরিডার প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি মিসর ভ্রমণ করেছিলেন। অধিকাংশ লোক নার্সিং হোমে বসবাস করছিলেন। আজও ২৯ জন পজিটিভ হাসপাতালে ভর্তি আছে। আরও ১৩৬ জন সন্দেহভাজন টেস্টের অপেক্ষায়।

তিনি আরো বলেন, ‘গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিবিসির হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স করেসপনডেন্ট জেমস গালাঘার একটি প্রতিবেদন (করোনাভাইরাসের টেস্ট কি ত্রুটিপূর্ণ) করেছেন। এটি বলেছে, বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, কাউকে চূড়ান্তভাবে করোনামুক্ত বলার আগে ছয়বার পর্যন্ত নেগেটিভ ফলাফল পেতে হয়েছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে রুমি আহমেদ খান বলেন, চীনা সাংবাদিকদের রিপোর্ট অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য। চীনা সাংবাদিকেরা এমন পজিটিভ রোগীও শনাক্ত করেছেন, যাদের ছয়বার নেগেটিভ আসার পরে সপ্তমবারে পজিটিভ এসেছে। দ্য হেলথ কেয়ার ব্লগে সৌরভ ঝা (এমডি) ২৯ মার্চ লিখেছেন, একটি চীনা সমীক্ষায় পিসিআর দিয়ে পরীক্ষার ফল শতকরা ৭০ ভাগ সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। তার মানে ১০০০ আক্রান্তের মধ্যে ৩০০ জন নেগেটিভ রেজাল্ট এসেছে কিন্তু ওরা আসলে আক্রান্ত ছিল। মার্কিন বিশেষজ্ঞরাও এ বিষয়ে একমত।

বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কি জনগণকে বলে দেওয়া উচিত যে একবার নেগেটিভ মানেই এক শ ভাগ নিশ্চিত নয়। এমন প্রশ্নের জবাবে রুমি আহমেদ খান বলেন, এটা মানুষকে ভীত করবে, জনগণ ভুল বুঝবে। তবে অন্তত চিকিৎসকদের এটা জানা দরকার যে কারও ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল সাসপিশন (ডাক্তারি সংশয়) থাকলে নেগেটিভ টেস্টের ওপর খুব একটা বেশি গুরুত্ব না দিতে।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002601146697998