চাকরির সঙ্গে শিক্ষার মিল নেই

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আমার এক বন্ধু বাংলা বিষয়ে ছয়-সাত বছর ধরে পড়াশোনা (অনার্স-মাস্টার্স) করে এখন চাকরি করছেন ব্যাংকে। আরেক বন্ধু ইতিহাসে পড়ে এখন মস্ত বড়ো পুলিশ অফিসার। অন্য এক বন্ধু পড়েছেন পদার্থবিজ্ঞানে, চাকরি করছেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে। আরেক বন্ধু পড়েছেন তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশলে, চাকরি করছেন ‘বিএডিসি’তে। এরকম শত শত উদাহরণ দেওয়া যাবে! বাস্তবতা হলো, এ দেশে চাকরির সঙ্গে শিক্ষার মিল নেই! শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।  

নিবন্ধে আরও জানা যায়, এখনকার শিক্ষিত তরুণেরা তাদের কর্মসংস্থান নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। একজন শিক্ষার্থী একটি বিষয়ে পাঁচ-ছয় বছর ধরে পড়াশোনা করে ভালো ফলাফল করার পরও নিজের পছন্দমতো চাকরি পাচ্ছেন না। চাকরির আশায় আবার আলাদাভাবে সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করে চাকরির পড়াশোনা করতে হচ্ছে। ভালো চাকরির আশায় অনেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে চাকরির পড়াশোনার জন্য আবার কোচিংও করছেন।

একজন গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে রাষ্ট্রকে অনেক টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। আর সেই পড়াশোনা তথা শিক্ষার সঙ্গে যদি চাকরির মিল না থাকে তাহলে সেই বিনিয়োগ যথাযথভাবে কাজে আসে না। নিজের পছন্দের বিষয় বা পছন্দমতো চাকরি না পেয়ে অনেকে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। অনেকে আবার প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে না পেরে অপছন্দের চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু যদি যে যার অনার্স-মাস্টার্সের বিষয় বা নিজের নির্দিষ্ট পড়ালেখা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই চাকরি পেত বা পর্যাপ্ত চাকরির ক্ষেত্র থাকত তাহলে সে নিজের অভিজ্ঞতা ও সেরাটা রাষ্ট্রকে দিতে পারত। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে ধরনের কর্মী দরকার সে অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্র্যাজুয়েট তৈরি হচ্ছে না।

ফলে গ্র্যাজুয়েটরাও তাঁদের চাহিদামতো চাকরি পাচ্ছেন না। দুঃখের বিষয় হলো, পড়াশোনা শেষ করার পর এ দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে আলাদাভাবে চাকরির পড়া পড়তে হয়। তা না হলে ভালো চাকরি পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই! চার-পাঁচ বছর ধরে চাকরির পড়া তথা প্রস্তুতি নেওয়ার ফলে চাকরিপ্রত্যাশী তরুণদের জীবনের সোনালি সময় নষ্ট হচ্ছে। তরুণরা যদি পড়াশোনা শেষ করেই বিষয়সংশ্লিষ্ট চাকরি পেত, তাহলে রাষ্ট্রকে তারা নিজের তারুণ্যদীপ্ত মেধা ও সময় দিয়ে আরো বেশি অবদান রাখতে পারত। প্রশ্ন হলো, চাকরি পাওয়ার জন্য সব তরুণক কেন একই বিষয় (চাকরির জন্য একই ধরনের প্রস্তুতির পড়া) পড়তে হবে। একই বিষয় পড়ে কি তরুণরা একই চাকরি করে? এমনটি নয় যে, চাকরির প্রস্তুতির পড়া একজন চাকরিপ্রত্যাশীর চাকরি পাওয়ার পর তা খুব বেশিদিন মনে থাকে! তবে নিজের অনার্স-মাস্টার্সের বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান সবারই কমবেশি মনে থাকে ও কাজে লাগানো যায়।

পড়ালেখা শেষে আলাদাভাবে চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার ফলে তরুণদের জীবনীশক্তি কিছুটা হলেও ক্ষয়ে যায়! চাকরির সঙ্গে শিক্ষার মিল না থাকায় মেধাবী তরুণরাও যথাসময়ে চাকরি পাচ্ছেন না। দীর্ঘ সময়ব্যাপী বেকার থাকছেন। তথ্যমতে, দেশের শিক্ষিত তরুণদের এখন এক তৃতীয়াংশ বেকার। প্রশ্ন হলো, শিক্ষিত তরুণদের এক তৃতীয়াংশ যদি বেকার থাকে তাহলে সে শিক্ষাকে বা শিক্ষাব্যবস্থাকে কি মানসম্মত ও যুগোপযোগী বলা যায়? চাকরির সঙ্গে শিক্ষার মিল না থাকায় এ দেশে দক্ষ কর্মীর ব্যাপক অভাব রয়েছে। বিদেশ থেকে উচ্চ বেতন দিয়ে বিদেশি কর্মীদের দেশে আনতে হচ্ছে, অথচ দেশের বেকাররা চাকরি পাচ্ছেন না।

গুণগত ও মানসম্মত শিক্ষার মান নিয়ে এখন অনেক কথা হচ্ছে। বর্তমান বাস্তবতায় এ দেশের শিক্ষার মান ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় হয়েছে। পরিমাণগত নয়, গুণগত শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি। বাস্তবতা হলো এখন গ্র্যাজুয়েট আছে, কিন্তু বর্তমান বাজারের চাহিদা অনুযায়ী গ্র্যাজুয়েট ও দক্ষ লোক নেই! তাই এখনই কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। চাকরির বাজারের সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয় করে গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে হবে। তারুণ্যের মেধা কাজে লাগাতে বিভিন্ন দেশের পদ্ধতি, পরিকল্পনা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেতে পারে। একজন গ্র্যাজুয়েট যাতে পড়ালেখা শেষ করেই নিজের বিষয় সংশ্লিষ্ট চাকরি পায় সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা থাকতে হবে, তা না হলে তারুণ্যের মেধা যেমন কাজে লাগানো যাবে না, তেমনি শিক্ষাব্যবস্থায় রাষ্ট্রের বিনিয়োগের পুরোপুরি সুফলও আসবে না।

লেখক : সাধন সরকার, ঢাকা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038540363311768