চাকসু নির্বাচন হয়নি ২৮ বছর

আবু বকর রাহাত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় |

চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে ফতেহপুর ইউনিয়নের জোবরা গ্রামে ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এর পরপরই অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ (চাকসু)। শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান, নাগরিক জীবনে সত্যিকারের নেতৃত্ব প্রদান ও অধিকার সম্পর্কে তাদের মতপ্রকাশের জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে গঠিত হয়েছিল চাকসু। বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট নির্বাচন, ডিন নির্বাচন, শিক্ষক সমিতির নির্বাচন থেকে শুরু করে সব ধরনের নির্বাচন হলেও দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে চাকসুর নির্বাচন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নানা অজুহাত দেখিয়ে এ নির্বাচন বন্ধ রেখেছে।

সর্বপ্রথম এ ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। এরপর মাত্র ছয়বার নির্বাচন হয়। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভিপি নির্বাচিত হন নাজিম উদ্দিন ও জিএস হন আজিম উদ্দিন। একই বছর ২২ ডিসেম্বর ইসলামী ছাত্রশিবিরের ক্যাডারদের হাতে নিহত হন ছাত্রসমাজ নেতা ফারুকুজ্জামান। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাকসু কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমিতি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতি; এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের নির্বাচন প্রতি বছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়। শুধু হয় না শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের ছাত্রসংসদ চাকসু নির্বাচন। যাদের জন্য রাষ্ট্র শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছে সেই ছাত্রছাত্রীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার পর্ষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের কণ্ঠ চেপে রাখা হয়েছে ২৮ বছর ধরে। চাকসুর সর্বশেষ ভিপি নাজিম উদ্দিন বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এসেও দীর্ঘদিন ধরে চাকসু নির্বাচন না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক। ফলে আগামীতে দেশ নেতৃত্ব সংকটে পড়বে। যেহেতু চাকসু নির্বাচন ব্যয়বহুল তাই সরকারকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।

চাকসু নির্বাচন না হওয়া বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী জানান, আমরা চাই চাকসু নির্বাচন হোক। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ না থাকলে সে নির্বাচন সম্ভব নয়। চাকসু নির্বাচন সময়ের দাবি উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের গ্রন্থাগার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উপলক্ষ হল শিক্ষার্থীরা। আর শিক্ষার্থীদের কথা বলার জায়গাটি হল ছাত্রসংসদ। অথচ এ ছাত্রসংসদের নির্বাচন বন্ধ ২৮ বছর ধরে। তার মানে এ দুই যুগে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলার মতো কেউ ছিল না। আমরা চাই অবিলম্বে চাকসু নির্বাচন দেয়া হোক; কারণ ছাত্রলীগ তো ছাত্রদের অধিকার আদায়ের কথা বলে।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাকসু ফি বাবদ বছরে কোটি কোটি টাকা আদায় হচ্ছে অথচ চাকসুর নির্বাচন নেই। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের যে প্রতিষ্ঠান সেটিকে একটি মহল অকেজো করে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংগঠন। চাকসু নির্বাচন আমাদেরও দাবি। তবে তার আগে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ, সবার সহাবস্থান ও প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা তৈরি হওয়া দরকার।

এদিকে চাকসু নির্বাচন না হওয়ায় বন্ধ হয়ে আছে হল সংসদের নির্বাচনও। ফলে হলের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে রয়েছে বন্ধ্যত্ব। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে প্রশাসনে শিক্ষার্থীদের একজন প্রতিনিধি থাকবে। আর এতে করে ছাত্রদের মৌলিক দাবিগুলো প্রশাসন থেকে সহজে আদায় করা যাবে বলে মনে করছেন ছাত্রছাত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হল, শাহ আমানত হল, সোহরাওয়ার্দী হলসহ প্রায় সবকটি হলের ছাত্রসংসদ কক্ষে গিয়ে দেখা গেছে, জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে কক্ষগুলো। বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সেখানে অবস্থান নিলেও সেটা অনেকটাই দলীয় কার্যালয় হিসেবেই ব্যবহার হয়ে আসছে।

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030350685119629