চানাচুর বেচে জিপিএ ৫ পেয়েছে আল-আমিন

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় একমাত্র জিপিএ ৫ অর্জনকারী আল-আমিন। তার বাবা খোরশেদ ফকির ফুটপাতে চানাচুর বিক্রি করেন। মা আলেয়া বেগম গৃহিণী। এ দম্পতির পাঁচ সন্তান। এর মধ্যে আল-আমিন তৃতীয়। সাত সদস্যের সংসারে অভাব-অনটনের শেষ নেই। উপজেলার কনেশ্বর ইউনিয়নের সৈয়দবস্ত গ্রামে তাদের ভিটা ছাড়া আর কিছু নেই। তাই পড়ালেখার পাশাপাশি বাবাকে চানাচুর বিক্রির কাজেও সহায়তা করত আল-আমিন।

প্রতিবেশীরা জানায়, আল-আমিন নিজের প্রচেষ্টা ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে। তবে অভাবের কারণে ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে তার পরিবার।

পূর্ব মাদারীপুর কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে আল-আমিন। জেএসসি ও এসএসসিতেও জিপিএ ৫ পেয়েছিল সে। পরিবারের শত দুঃখ-কষ্ট, বাধা-বিপত্তি তাকে লেখাপড়া থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।

আল-আমিন বলে, ‘আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানুষের মতো মানুষ হতে চাই। কিন্তু উচ্চশিক্ষার খরচ কিভাবে জোগাব, তা মাথায় আসছে না। মা-বাবার টানাটানির সংসারে আমি আরেক বোঝা। ভবিষ্যতে আমি তাদের দুঃখ-কষ্ট ঘোচাতে চাই। আমি একজন বড় ব্যবসায়ী হব। তাই আমি ফিন্যান্স নিয়ে পড়তে চাই।’

আল-আমিনের বাবা খোরশেদ আলম জানান, অভাবের কারণে তিনি আল-আমিনকে ঠিকমতো পড়ালেখার খরচ দিতে পারেননি। ভালো খাবারদাবার ও পোশাক-আশাক দিতে পারেননি। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও সে ভালো ফল অর্জন করায় পরিবারের সবাই খুশি।

আল-আমিনের মা আলেয়া জানান, সংসার ঠিকমতো না চললেও ছেলেকে উচ্চশিক্ষা দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। সে লেখাপড়ায় ভালো করছে। আল-আমিন রাতে বেশি পড়ার সুযোগ পেত না। তাই দিনে বেশি পড়ত। তার ভালো ফলের জন্য শিক্ষকদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ। শিক্ষকরা তাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। বিনা পয়সায় তাকে প্রাইভেট পড়িয়েছেন।

আল-আমিনের সহপাঠী সানিয়া আফরোজ নাম্মী বলে, ‘আল-আমিনের ইচ্ছাশক্তির কাছে দরিদ্রতা হার মেনেছে। পড়াশোনা ছাড়া সে কিছুই বুঝত না। সে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে পড়ত।’

পূর্ব মাদারীপুর কলেজের অধ্যক্ষ জহিরুল্লাহ বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়, নিয়মানুবর্তিতা আর ইচ্ছাশক্তি দিয়ে  সব কিছু অর্জন করা যায়। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো আল-আমিন। তাকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারলে সে দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পারবে বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ - dainik shiksha অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা - dainik shiksha সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে - dainik shiksha শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ - dainik shiksha এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে - dainik shiksha যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044248104095459