জামিন পেলে চিকিৎসার জন্য লন্ডন যেতে পারেন খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জামিন পেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যেতে পারেন। তার আগে এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। তবে এই চেষ্টার অগ্রগতি আটকে আছে শর্তের বেড়াজালে। নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত বা জামিন দেয়া হলেও তার আগে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক বক্তব্য, বিবৃতি না দেয়া এবং এ ধরনের কর্মসূচিতে অংশ না নেয়ার নিশ্চয়তা চেয়ে মুচলেকাসহ আরও কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হতে পারে। এ মুহূর্তে এসব শর্তের ব্যাপারে কিছুটা নমনীয় হলেও আদালতের মাধ্যমে জামিনের দিকেই জোর দিচ্ছেন বিএনপি নেতারা। যাতে করে রাজনৈতিকভাবে খালেদা জিয়া বড় ধরনরে ক্ষতিগ্রস্ত না হন। দলীয় ও খালেদা জিয়ার পরিবারের নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

কিছুটা পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে আগামীকাল সোমবার উচ্চ আদালতে আবেদন করতে পারেন তার আইনজীবীরা। এরই মধ্যে জামিন আবেদনটি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আজ রোববার আইনজীবীরা আবার বৈঠকে বসবেন। ওই বৈঠকেই চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হবে। এ নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গেও পরামর্শ করবেন তারা। ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৪২৬(১) ধারায় জামিন আবেদনটি করা হতে পারে বলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, উচ্চ আদালতের মাধ্যমে গুরুতর অসুস্থতা বিবেচনায় খালেদা জিয়ার জামিন লাভের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হবে। শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালত আবারও আবেদন নাকচ করে দিলে তখন ভিন্ন চিন্তা করা হবে। সে ক্ষেত্রে সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার ব্যাপারে ‘হস্তক্ষেপ’ করবে না- এমন নিশ্চয়তার ভিত্তিতে রাজনৈতিক সমঝোতার পথে এগোবে বিএনপি। তবে নাকচ হয়ে যেতে পারে এমন সংশয় থাকলে আর আবেদন করা হবে না।

বিএনপি নেতা ও আইনজীবীরা মনে করেন, সরকারের উচ্চপর্যায় চাইলে জামিনের বিরোধিতা না করে বা ‘সাজা স্থগিত’ করে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যবস্থা করে দিতে পারে। রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে এ ধরনের জামিনের ব্যাপারে অতীতে অসংখ্য নজির রয়েছে। সরকারের সবুজ সংকেত পেলেই আদালত ও প্রশাসন এ ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়া খুঁজে বের করতে পারবে। খালেদা জিয়া, তার পরিবার এবং বিএনপি নেতারা মনে করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সরকার প্রভাব বিস্তার করে তাতে বাধা সৃষ্টি করছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, দেশের প্রচলিত আইনে খালেদা জিয়ার মুক্তি পেতে কোনো বাধা নেই- এটি দেশের সব মানুষই জানেন। তারপরও কেন তিনি জামিন পাচ্ছেন না তাও মানুষ জানেন। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতির কথা বিবেচনা করে আদালতের কাছে আবারও আবেদন করা হবে। আদালত এবার খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়ে সুবিচার করবেন বলে তিনি আশাবাদী।

এদিকে গতকাল এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে বিএনপি নিজেই দ্বিধান্বিত। একদিকে আন্দোলনের ডাক দেয়া হচ্ছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে ফোন করে মুক্তি দেয়ার অনুরোধও জানাচ্ছে। তারা আসলে কি চান, এখনও স্পষ্ট করতে পারেননি। এ সময় তিনি মন্তব্য করেন, কেবল প্যারোলে মুক্তির আবেদন করলেই সরকারের বিবেচনা করার সুযোগ থাকে। এছাড়া খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার এখতিয়ার সরকারের নেই।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হক সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদনটি শুনানির জন্য উত্থাপন করা হতে পারে। এর আগে এই বেঞ্চ চ্যারিটেবল মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেন।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ সর্বশেষ গত ১২ ডিসেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দেন। ওই খারিজ আবেদনের বিরুদ্ধেও রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) করার প্রক্রিয়া চলছে। জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তাছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। ওই সাজা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। এছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন খালেদা জিয়া। সেটি আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। এবার এ মামলায় জামিন চাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন থাকলেও কারামুক্তিতে বাধা মাত্র দুই মামলা। নানা আইনি জটিলতায় মুক্তি মিলছে না খালেদা জিয়ার। খালেদা জিয়ার কারা মুক্তিতে এখন অন্তত দুই মামলায় জামিন পেতে হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা খালেদা জিয়ার ১৭ বছর কারাদণ্ড হয়েছে। এ দুটি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে খালেদা জিয়াকে জামিন নিতে হবে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে খালেদা জিয়াকে জামিন নিতে হবে। এ দুটি মামলায় জামিন পেলেই খালেদা জিয়া কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062391757965088