পীরগঞ্জ টেকনিক্যাল কলেজজাল সনদে অধ্যক্ষ পদে বহাল জামায়াত নেতা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সনদ জালিয়াতি করে চাকরি নেওয়ার প্রমাণ পেয়ে এমপিও ও বেতন স্থগিত করা হয়েছে আব্দুল আজিজের। তারপরও তিনি একটি কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। নিজে বেতন না পেলেও তার স্বাক্ষরেই বেতন পাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের অন্য শিক্ষকরা। প্রভাব খাটিয়ে কলেজের অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিবও হয়েছেন এ জামায়াত নেতা।

আব্দুল আজিজ রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার পীরগঞ্জ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ। শনিবার (২৫ মে) দৈনিক সমকালের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সৌরভ হাবিব।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী কলেজ থেকে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে সমাজবিজ্ঞানে অনার্স ও ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে মাস্টার্স পাস করেন অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজ। একই সময় তিনি বেসরকারি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিএসসি পাসের জাল সনদ যোগাড় করেন। তা দেখিয়ে চাকরি নেন এই কলেজে। শুধু তাই নয়, একইভাবে জাল সনদ তৈরি করে তার ভাই ও জামায়াত নেতা সাইফুল ইসলামকেও কলেজের লাইব্রেরিয়ান পদে চাকরি দেন। 

তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে সনদ জালিয়াতির বিষয়ে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের কাছে জানতে চান জেলা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক মোস্তাক আহমেদ। জবাবে গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. শাহ আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে সিআইডিকে জানানো হয়, আব্দুল আজিজ তাদের শিক্ষার্থী নন। তার জমা দেওয়া সনদটি জাল।

সার্বিক বিষয় তদন্তের পর গত ৬ জানুয়ারি কলেজটির দুই শিক্ষক ও লাইব্রেরিয়ানের এমপিও এবং বেতন স্থগিত করা হয়। তারা হলেন- অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজ, বাংলা বিষয়ের প্রভাষক আনিসুর রহমান ও গ্রন্থাগারিক সাইফুল ইসলাম। তাদের মধ্যে আনিসুর রহমান দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এমপিওভুক্ত হয়ে চাকরি করছিলেন। অন্যদের সনদপত্র জাল। তারা তিনজনই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে আনিসুর রহমান গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নাশকতার মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন।

এতকিছুর পরও দাপটের সঙ্গে চাকরি করে যাচ্ছেন তারা। কারণ তাদের পদ শূন্য করা হয়নি বা তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। তাই এখন নিজে বেতন না পেলেও আব্দুল আজিজের স্বাক্ষরেই অন্য শিক্ষকদের বেতন নিতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, নিজের ক্ষমতা জাহির করার পাশাপাশি অপরাধ ঢাকতে ইচ্ছেমতো অ্যাডহক কমিটি তৈরি করেছেন আব্দুল আজিজ। কমিটিতে নিজে হয়েছেন সদস্য সচিব। আর শিক্ষানুরাগী হিসেবে রাখা হয়েছে আনিসুর রহমানের স্ত্রী হাসনা হেনাকে। এ কমিটি গঠনের জন্য উপজেলা প্রশাসনকেও ম্যানেজ করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজ বলেন, তার এমপিও বাতিল হয়নি। সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। সিআইডিকে দেওয়া এশিয়ান ইউনিভার্সিটির চিঠির বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি। ওই রিটের ফল না আসা পর্যন্ত তিনি অবৈধ নন বলে জানান। রিট বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আব্দুল আজিজ। তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে ফোন কেটে দেন।

বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলেজের সভাপতি জাকিউল ইসলাম বলেন, কারিগরি বোর্ড এমপিও স্থগিত করলেও অধ্যক্ষ পদ থেকে আব্দুল আজিজকে কলেজ থেকে এখনও অব্যাহতি দেয়নি। শিক্ষা বোর্ড তাকে অব্যাহতি দিলেই তার পদটি বাতিল হবে। তিনি আরও বলেন, জালিয়াতির অভিযোগের পর তার বেতন স্থগিত করে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা বোর্ড।

এ জন্য তার বেতন স্থগিত করা হয়েছে। এখন বোর্ড অব্যাহতি দিলে আমরাও তা বাস্তবায়ন করব। জাকিউল ইসলাম আরও জানান, এ ঘটনায় আদালতে পাল্টা-পাল্টি মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। শিক্ষা বোর্ডও বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ধর্ম নিয়ে কটূক্তি: জবি ছাত্রী তিথির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড - dainik shiksha ধর্ম নিয়ে কটূক্তি: জবি ছাত্রী তিথির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে - dainik shiksha একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে ভর্তি পরামর্শ: কলেজ পছন্দ জরুরি - dainik shiksha ভর্তি পরামর্শ: কলেজ পছন্দ জরুরি মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না: হাইকোর্ট - dainik shiksha মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না: হাইকোর্ট শিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচনী হাটে এমপিও শিক্ষকের কপাল ফাটে - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচনী হাটে এমপিও শিক্ষকের কপাল ফাটে অন্ত*র্বাসে লুকানো ডিভাইস, ১০ মিনিটেই শেষ পরীক্ষা - dainik shiksha অন্ত*র্বাসে লুকানো ডিভাইস, ১০ মিনিটেই শেষ পরীক্ষা ১৩ শিক্ষকের ১৪ শিক্ষার্থী, সবাই ফেল - dainik shiksha ১৩ শিক্ষকের ১৪ শিক্ষার্থী, সবাই ফেল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর - dainik shiksha এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031449794769287