জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: বিভাগ উন্নয়ন ফি বহালের পক্ষে শিক্ষকরা

জাবি প্রতিনিধি |

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা বিভাগ উন্নয়ন ফি বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন শিক্ষকরা। উত্তোলিত ফি বিভাগের উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ব্যয় করাসহ নানা খাত দেখিয়ে তা বাতিলে আপত্তি জানান তারা। অপরদিকে শিক্ষার্থীরা সেসব খাতের প্রয়োজনীয় অর্থ সরকারের কাছ থেকে আদায়ের দাবি জানান। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ত্রিপক্ষীয় দুই ঘণ্টার আলোচনায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি।

উন্নয়ন ফি বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। পরে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের আলোচনার আহ্বানে অবরোধ প্রত্যাহার করে তারা। সাড়ে ১০টায় সিনেট হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে। দুপুর সোয়া ১২টায় প্রগতিশীল ছাত্রজোট এই আলোচনায় যোগ দেয়। বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতি, ইনস্টিটিউট পরিচালক, ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টাসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষক এতে অংশ নেন। 

শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের বিপরীতমুখী অবস্থানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসহায়ত্বের বিষয়টি ঘুরে ফিরে দৃশ্যমান হয় আলোচনায়।

আলোচনার শুরুতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার অর্থ বিষয়ক সম্পাদক সুমাইয়া ফেরদৌস স্মারকলিপি পাঠ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর ভর্তির সময় নির্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত বিভাগ উন্নয়ন ফি দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। ১৯৭৩’ এর অধ্যাদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এই ফি’র হিসাব অর্থ কমিটিতে থাকে না। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে এ ব্যয়ভার বহন করা সম্ভবও হয় না।’এরপর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল ইউজিসিতে গিয়েছি। কার্যকর সমাধানের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। রাষ্ট্র বারবার অভ্যন্তরীণ আয়ের খাত বাড়ানোর তাগাদা দেয়। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভ্যন্তরীণ আয়ের খাত রয়েছে। আমাদের সেটি নেই। আমরা বিভিন্ন খাতে ব্যয় কমানোর চেষ্টা করছি। নিরুপায় হয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভাগ উন্নয়ন ফি আদায় করতে হয়।’ এসময় আলোচনায় বিভাগ উন্নয়ন ফি ‘অবৈধ’ এবং ‘অপ্রদর্শিত’ হিসেবে উল্লেখ করেন শিক্ষার্থীরা।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার বলেন,’বিভাগগুলোর আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা  নেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়ন রাষ্ট্রকেই করতে হবে। রাষ্ট্রের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে না পারার ব্যর্থতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের।’ 

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয় বলেন, ‘বিভাগের আয়-ব্যয়ের হিসাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটির কাছে থাকে না। অপ্রদর্শিত বিভাগ উন্নয়ন ফি সেই অর্থে কালো টাকা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ শেখ মো. মনজুরুল হক বলেন, ‘বিভাগ উন্নয়ন ফি জবাবদিহিমূলক। একাডেমিক সভার মাধ্যমে বিভাগ আদায়কৃত অর্থ ব্যয় করে থাকে। তাই এটি স্বচ্ছ ও বৈধ। বিভাগের হিসাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটিতে যুক্ত করলে ব্যয়ের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হবে।’

কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বিভাগীয় হিসাব অর্থ কমিটিতে যুক্ত করলে রাষ্ট্রকে ট্যাক্স দিতে হবে। সেক্ষেত্রে ফি আরও বাড়ানোর দরকার হবে।’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি খালিদ কুদ্দুস বলেন, ‘বিভাগ উন্নয়ন ফি বিভাগের শিক্ষা সরঞ্জাম, মাল্টিমিডিয়া সিস্টেম, নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিক্ষা সফর, খেলাধুলা, শিক্ষার্থীদের আপদকালীন সময়ে ব্যয় করা হয়। ফি না নিলে এসবের অনেক কিছুই বন্ধ হয়ে যাবে।’  

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, ‘বিভাগ উন্নয়ন ফি বাতিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগ কার্যকর নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়া জরুরি।’

সমাপনী বক্তব্যে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য ১৪৪৫ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের কল্যাণেই এই অর্থ ব্যয় করা হবে। তারপরও আমি শিক্ষার্থীদের দাবির ব্যাপারে বিভাগে বিভাগে কথা বলবো। কেউ বিবেচনা করলে সেটি ইতিবাচক হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032968521118164