টয়লেটে থেকে মাদরাসা ছাত্রের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি |

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি মাদরাসার গোসলখানা থেকে আবু তালেব নামের এক ছাত্রের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ ওই মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা নোমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার আটি হাউজিং এলাকায় সুলতানিয়া তাহফিজুল কোরআন মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে। আবু তালেবের এ মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। তারা হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করছেন।  

আবু তালেব রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসী ইউনিয়নের গন্ধর্বপুর এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। সে ওই মাদরাসার হেফজ বিভাগের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী।

আবু তালেবের দুই সহপাঠী আতিকুল ইসলাম ও মারুফ বিল্লাহ জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে আবু তালেব মাদরাসার গোসলখানায় গিয়ে দীর্ঘক্ষণ বের না হওয়ায় সহপাঠীদের সন্দেহ হয়। পরে সন্ধ্যায় কয়েকজন শিক্ষক ও সহপাঠীরা মিলে গোসলখানার দরজা ভেঙ্গে আবু তালেবকে গলায় গামছা দিয়ে বাঁধা ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। পরে প্রধান শিক্ষক ও কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে সন্ধ্যার পর আবু তালেবকে নিথর অবস্থায় শহরের খানপুর এলাকায় ৩শ’ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। 

হাসপাতালে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করলে প্রধান শিক্ষক মাওলানা নোমান আবু তালেবের মরদেহ ফেলে রেখেই হাসপাতাল থেকে তড়িঘড়ি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় বিষয়টি সন্দেহ হলে  স্থানীয়রা তাকে আটক করে পুলিশের কাছে তুলে দেয়। খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আবু তালেবের স্বজনরা। তারা বিষয়টিকে হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেন এবং এর সুষ্ঠু তদন্ত চান।

আবু তালেবের দাদী মোসলোমা বেগম জানান, তার নাতি আবু তালেব খুব ভালো ছাত্র এবং নম্র ভদ্র ছেলে ছিল। কারো সাথে ঝগড়া বিবাদ করতো না। মাদরাসায় পড়ালেখা করলেও প্রতি সপ্তাহে ছুটির দিনে বাবা-মা এসে তার সাথে দেখা করতো এবং তাকে বাড়িতে নিয়ে যেতো। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মাদরাসার প্রধান শিক্ষক আবু তালেবের বাবাকে ফোন করে জানান, আবু তালেব গোসলখানায় পেড়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এ খবর পেয়ে তিনি তার এক ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে এসে নাতি আবু তালেবের মৃতদেহ দেখতে পান। গোসলখানায় পড়ে গিয়ে কখনোই মৃত্যু হতে পারে না বলে তিনি দাবি করেন। নাতির লাশের সামনে বসে তিনি আহাজারি করেন এবং সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমার নাতিরে ওরা মাইরা ফালাইছে, আল্লাহ তুমি এর বিচার করো”।

আবু তালেবের চাচা আলমগীর দাবি করেন, তার ভাতিজাকে গোসলখানায় হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আবু তালেব এতোটুকু বাচ্চা ছেলে, সে আত্মহত্যা করবে তা কোনভাবেই হতে পারে না। এছাড়া আত্মহত্যা করার মতো কোন কারণও নেই। তিনি হত্যাকাণ্ড হিসেবে দাবি করে, এর সুষ্ঠু তদন্ত চান। 

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. অমিত রায় জানান, সন্ধ্যার পর আবু তালেব নামে ওই মাদরাসা শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় নিয়ে এলে তিনি থানা পুলিশকে বিষয়টি জানান। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদরের জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্তের পর পুলিশ তার মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে পারবে। 

সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো. সাব্বির খান জানান, লাশের সুরতহাল করা হয়েছে। তবে কি কারণে এই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এ ঘটনায় মাদরাসার প্রধান শিক্ষককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032169818878174