ঢাবি শিক্ষার্থীরা করোনা আতঙ্কে

ঢাবি প্রতিনিধি |

সারা পৃথিবী যখন করোনা ভাইরাস আতঙ্কে একঘরে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন ভিন্নচিত্র। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নেই যথেষ্ট প্রস্তুতি, ক্যাম্পাসে অবাধ চলাচল বহিরাগতদের। ফলে আতঙ্কে দিনযাপন করছেন শিক্ষার্থীরা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে রয়েছেন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন ছাত্র প্রতিনিধি ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, ঢাবির ক্লাস বন্ধের দাবিতে অনশনে বসেছেন পাঁচ শিক্ষার্থী। করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তারা। এ ছাড়াও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ক্লাস বন্ধের দাবিতে ভিসি বরাবর আবেদন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবাধে প্রবেশ করছে বহিরাগতরা। ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারগুলোয় নেই করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের ব্যবস্থা। ফলে করোনা ভাইরাস যেহেতু সংক্রামক তাই যে কোনো সময় এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনগুলোয় দেখা যায়, এসব ভবনের ওয়াশরুমে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হ্যান্ডওয়াশের ব্যবস্থা নেই। হলগুলোয় একই রুমে গাদাগাদি করে থাকছেন প্রায় ৪০-৫০ জন শিক্ষার্থী। ফলে একজন আক্রান্ত হলে পুরো ক্যাম্পাসে এটি ছড়াবে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। সচেতনতা তৈরিতেও কোনো টাস্কফোর্স বা কমিটি করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। করোনা শনাক্তকরণ কিংবা আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য প্রস্তুত নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার।

মেডিকেল সেন্টারের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. সারওয়ারে জাহান মুক্তাফী বলেন, আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য আমাদের কোনো মেডিসিন কিংবা যন্ত্রপাতি নেই। আমরা শিক্ষার্থীদের সচেতন করার জন্য আবাসিক হলগুলোয় সচেতনতামূলক লিফলেট পাঠিয়েছি। তিনি বলেন, বহিরাগতরা ক্যাম্পাসের জন্য আতঙ্কস্বরূপ। কারণ, তাদের মাধ্যমে এ ভাইরাস শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, করোনা একটি সংক্রামক ভাইরাস। এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। হলগুলোয় এক রুমে ৮-১০ জন করে থাকেন। গণরুমগুলোয় থাকেন ৪০ জন। অনেক দেশই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। ঢাবি প্রশাসন ও ডাকসুকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ভাস্কর দে বলেন, শিক্ষার্থীদের করোনা থেকে রক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগ হতাশাজনক। প্রতিদিন ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা জড়ো হচ্ছে, সে বিষয়ে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই। বহিরাগত প্রবেশ বন্ধে ডাকসু ও ঢাবি প্রশাসনকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাই অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হোক।

ডাকসু ভিপি নূরুল হক নূর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেন, টিএসসি এবং ঢাবি ক্যাম্পাসে নানান ধরনের লোক আসে, তাদের মাধ্যমে যে কোনো সময়ই এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। যেহেতু এখন পর্যন্ত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী এতে আক্রান্ত হয়নি তাই আমি ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার ব্যাপারে তিনি বলেন, এত সচেতনতার পরও কোনো কারণে একজন শিক্ষার্থীও যদি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, যেহেতু এই জীবণুটি দ্রুত ছড়ায় তখন বিশ্ববিদ্যালয়েও এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে, তখন কোনো ব্যবস্থা নিয়েও এর বিস্তার ঠেকানো যাবে না। সে ক্ষেত্রে আমার মনে হচ্ছে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করাই উত্তম সিদ্ধান্ত।

করোনা প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সচেতন করছি। ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে এটাকে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে- যেহেতু এটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের কম মবিলিটি করা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনাও মেনে চলার পরামর্শ দেন।

ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ বন্ধ করা হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ জন্য তোমরা সবাই সজাগ থাকবে। অসুস্থদের ঘোরাফেরায় সাধারণভাবেই নিষেধাজ্ঞা আছে, এটা ক্যাম্পাসবিচ্ছিন্ন নয়। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার বিষয়ে ভিসি বলেন, আমরা দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে।

শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় ঢাবির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের দাবিতে অনশনে বসা পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন : টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের মো. হাসান বিশ্বাস, মনোবিজ্ঞান বিভাগের মো. জোনাইদ হোসেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ইয়াসিন আরাফাত প্লাবন ও কেএম তূর্য এবং তাদের সমর্থন জানিয়ে একাত্মতা পোষণ করেছেন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের (আইবি) শিক্ষার্থী সাফওয়ান। এ বিষয়ে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানী বলেন, আমরা একটি পরিবার হিসেবে সবার ভালোর জন্য যে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন সেটাই নেব।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বেশ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা শনিবার স্বেচ্ছায় ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছেন এবং ভিসি বরাবর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার ঘোষণা আবেদন করেছেন। বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ করার কোনো ঘোষণা দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের জন্য শিক্ষার্থীরা ভিসি বরাবর আবেদন করেছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040700435638428