দুদকের কাঠগড়ায় এনসিটিবির কর্তারা, ১৯ লাখ বই মূদ্রণে জালিয়াতি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

২০১৭ শিক্ষাবর্ষের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১৯ লাখ বই ছাপানোর দরপত্রের প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনেকদিন ধরেই তদন্ত করছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বই মূদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান তারা টিপিএস কোম্পানির এমন অভিযোগে দুদকের কাঠগড়ায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অনুসন্ধানে দরপত্রে প্রক্রিয়াগত অনিয়মের বেশকিছু আলামত পেলেও এখনো দুদকের কাছে অনিয়মের পক্ষে পর্যাপ্ত দলিল নেই। ফলে অনুসন্ধান কাজ চলছে ঢিমেতালে।

এরই মধ্যে অভিযোগ অনুসন্ধানে এনসিটিবি ও তারা টিপিএসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নিয়েছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালাম। টিপিএস দাবি করছে, এনসিটিবির সংশ্লিষ্টদের কারণে দরপত্র বাতিল হয়েছে। অন্যদিকে এনসিটিবি বলছে, চাহিদাকৃত নমুণা কাগজ সংযুক্ত না করার জন্য এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে শিগগিরই দুদক এ বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে নিতে সক্ষম হবে বলে দুদকের উর্ধ্বতন একটি সূত্র জানিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য দাতা সংস্থার অর্থায়নে ২০১৭ শিক্ষাবর্ষের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়ের ১০ কোটি ৮৮ লাখ ৪৪ হাজার ৬৩১টি বই ছাপানোর জন্য মোট ২০টি প্যাকেজে ৯৮টি লটে দরপত্র আহ্বান করা হয়। তবে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে দরপত্রের মধ্যে ১৭টি লটের দরপত্র প্রক্রিয়ায়।

দুদকের অনুসন্ধান পর্যায়ের তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠান তারা টিপিএস কোম্পানি লিমিটেড মোট ২৬টি লটে দরপত্র জমা দেয়। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে এনসিটিবির প্রধান কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত অডিটোরিয়ামে সব উপস্থিত দরদাতা ও তাদের মনোনীত প্রতিনিধিদের সামনে দরপত্র উন্মোচন  করে দেখা যায় তারা টিপিএস মোট ১৭টি লটে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মনোনীত হয়েছে। লটনম্বর গুলো হলো- ৭০৪, ৭১০, ৭১৩, ৭১৪, ৭৭৫, ৭৭৬, ৭৮৩,  ৭৮৪, ৭৮৫, ৭৮৬, ৭৮৭, ৭৮৮, ৭৯৩, ৭৯৪ এবং ৭৯৮। ওই বছরের ১ জুন সাত সদস্য বিশিষ্ট দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু করেন এবং ৪ জুনের মধ্যে প্রাথমিক মূল্যায়ন কাজ সম্পন্ন করে। 

কিন্তু মূল্যায়ন প্রতিবেদনের কপি পর্যালোচনায় দেখা যায়, তারা টিপিএস কোম্পানি লিমিটেড ১৭টি লটে প্রাথমিকভাবে সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হলেও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রাথমিক মূল্যায়নের সময় তাদের দরপত্র নেয়া হয়নি। কারণ হিসেবে দেখা যায়, তারা টিপিএস কোম্পানি দরপত্রের সাথে প্রিন্টিং পেপার ও কভার পেপারের স্যাম্পল জমা দেয়নি। শুধু প্রিন্টিং পেপার ও কভার পেপারের একটি শিট দরপত্রের সাথে জমা দিয়ে, যাতে লট নম্বর উল্লেখ ছিল না। অথচ বিড ডকুমেন্টের সেকশন-৩ ‘এক্সপেরিয়েন্স ও টেকনিক্যাল ক্যাপাপাসিটি’ অংশে বলা আছে, প্রত্যেক বিডারকে প্রতিটি বিডের জন্য প্রচ্ছদের নমুনা কপি ও প্রিন্টিং পেপারের নমুনা কপির পৃথক তিন সেট দাখিল করতে হবে, যা বিড ইভালুয়েশন কমিটি কর্তৃক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। পরীক্ষায় যদি উত্তীর্ণ না হয় তাহলে বিড বাতিল বলে গণ্য হবে।

তবে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ ও অভিযোগে তারা টিপিএস বারবার দাবি করেছে তারা প্রয়োজনীয় সকল নমুনা কাগজ সংযুক্ত করেছেন। এনসিটিবির সংশ্লিষ্টরা ওই কাগজ সরিয়ে তাদের দরপত্র বাতিল করেছেন। বর্তমানে দুদক এ বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন বলে সংস্থাটির উর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে।

অন্যদিকে  টিপিএস কোম্পানির বাংলাদেশের প্রতিনিধি হারুন অর রশিদ সই করা অভিযোগে বলা হয়েছে, তারা টিপিএস কোম্পানি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্য পুস্তক মুদ্রণ ও সরবরাহের জন্য ৯৮টি লটের মধ্যে ২৬টি লটের ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। উক্ত দরপত্রে অংশগ্রহণ করে বিধি ও দরপত্রের শর্তাবলি অনুযায়ী ২৬টি লটের প্রয়োজনীয় পে অর্ডার, ব্যাংক গ্যারান্টি, বাৎসরিক টার্ন ওভার, প্রয়োজনীয় সংখ্যক কভারেজ ও প্রিন্টিং কপির নমুনা ও অভিজ্ঞতা সনদপত্রসহ এনসিটিবির টেন্ডার বাক্সে দাখিল করে। এরপর ২৬টি লটে সর্বনিম্ন দরদাতা মনোনীত হয় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু একটি চক্র তারা টিপিএস কোম্পানিকে টেন্ডারে অযোগ্য প্রমাণ করা জন্য কোম্পানির মূদ্রিতব্য কাগজের নমুনা ও স্যাম্পল কপি দরপত্রে সাথে জমা দেয়নি। অথচ তারা টিপিএস আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে তাদের দাখিলকৃত টেবিল অব কনটেন্টস-এ নমুনা জমা দেওয়ার বিষয় লিপিবদ্ধ করে, যা পরবর্তীকালে যাচাইকালেও সংযুক্তির বিষয়টি প্রমাণ পাওয়া যায়। এরই মধ্যে এ বিষয়টি প্রকিউরমেন্ট এনসিটিবির সচিব ও ন্যাশনাল কারিকুলাম অব টেক্সটবুক বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার না পেয়ে ১৭টি লটে সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়া সত্বেও কেন তারা টিপিএসকে কেন কার্যাদেশ দেওয়া হলো না সে বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে দুদকের সাহায্য প্রয়োজন। অভিযোগটি ২০১৬ খ্রিসটাব্দের ৪ আগস্ট দুদকের দাখিল করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে দুদক সচিব ড. শামসুল আরেফিনের কাছে জানতে চাইলে অনুসন্ধান শেষ না হওয়া পর্য্ন্ত কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেন।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ন চন্দ্র সাহা বলেন, এ অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। দরপত্রের শিডিউল ও পিপিআর অনুযায়ী যে সকল ঠিকাদাররা বিট করেছে, তারাই কাজ পেয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042860507965088