নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ায় ৫০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ বন্ধ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বৈশ্বিক আর্থিক অস্থিরতায় অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়েছে নির্মাণসামগ্রীর। ফলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)-এর অধীনে ৫শ’র বেশি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে আছে।

যেসব ভবনে অন্তত ৮০ শতাংশ কাজ হয়েছে সেসবে কোনোমতে কাজ চালিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। যেসবে কাজ প্রাথমিক বা মধ্যপর্যায়ে রয়েছে সে সব কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রেট বাড়ানোর জন্য ঠিকাদাররা অধিদপ্তরে ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দৌড়াদৌড়ি করেও ফল পাচ্ছেন না। সোমবার (২২ আগস্ট) দেশ রুপান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।

ইইডি’র প্রধান প্রকৌশলী শাহ্্ নইমুল কাদের  বলেন, ‘এটা এককভাবে আমাদের দপ্তরের সমস্যা নয়। সরকারের যেসব দপ্তরে নির্মাণকাজ আছে তাদের সবার একই সমস্যা। আমাদের কাছে সমস্যার কথা পিডিরা বলছেন, ঠিকাদাররা বলছেন। মন্ত্রণালয়ও এ সমস্যার কথা জানে। এর সমাধান করতে হলে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

শাহ্্ নইমুল কাদের বলেন, ‘বড় ঠিকাদাররা, তাদের আর্থিক ক্ষতি হলেও, কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ছোট ঠিকাদাররা সমস্যায় পড়েছেন। আমরা সবাইকে অনুপ্রেরণা দিয়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। যাদের সাড়া একেবারেই পাওয়া যায় না, তাদের বিরুদ্ধে সরকারি ক্রয়-নীতিমালা (পিপিআর) অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সূত্র জানায়, নির্মাণকাজ চলছে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি। ৫ শ’র বেশি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। এসব কাজের বেশিরভাগের আদেশ ২০১৮ সালের রেট অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালের রেট অনুযায়ী কার্যাদেশ নেওয়া কিছু প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজও অসমাপ্ত রয়েছে। যাদের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে, তারা (আর্থিক ক্ষতিতে পড়লেও) দ্রুত কাজ শেষ করে বিল নিতে চাচ্ছেন। বড় ঠিকাদাররাও কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছেন। আগে যেখানে একটা প্রকল্পে ৫০ জন শ্রমিক কাজ করত এখন সে প্রকল্পে শ্রমিক ১০ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইইডির অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প অফিস ভবনের নির্মাণকাজও কোনোমতে চলছে। ছোট বা মধ্যম পর্যায়ের ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ করে বসে আছেন।

ঠিকাদাররা জানান, ‘২০১৮ সালের রেট অনুযায়ী, প্রতি টন রডের দাম ধরা হয়েছিল ৫৭ হাজার টাকা, এখন সে রডের দাম টনে ৯২ হাজার টাকা। প্রতি ব্যাগ সিমেন্টের দাম ধরা হয়েছিল ৩৯০ টাকা, এখন দাম ৪৭৫ টাকা। প্রতি ঘনফুট পাথরের দাম ধরা হয়েছিল ১৭০ টাকা, এখন দাম ২১০ টাকা। প্রতি হাজার ইটের দাম ধরা হয়েছিল ৯ হাজার টাকা, এখন তা কিনতে হচ্ছে ১০ হাজার টাকায়। মোটা বালু প্রতি ঘনফুটের দাম ধরা হয়েছিল ৪০ টাকা, এখন এর দাম ৬০ টাকা। ২০১৮ সালে বিটুমিন প্রতি টনের দাম ধরা হয়েছিল ৪৮ হাজার টাকা, এখন দাম ৬৬ হাজার টাকা। ১০০ মিটার ইলেকট্রিক কেবলের দাম ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা, এখন দাম ১ হাজার ৯১১ টাকা। ২০১৪ সালের রেটের সঙ্গে বর্তমান বাজারদরের তুলনা করলে পার্থক্য আরও বাড়বে।’ 

নাম প্রকাশ না করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন সাবেক প্রকৌশলী বলেন, ‘সরকার ২০২২ সালের নির্মাণসামগ্রীর নতুন রেট প্রকাশ করেছে। নতুন রেট অনুযায়ীই এখন দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। সেখানে যে রেট দেওয়া হয়েছে, তা ভ্যাট-ট্যাক্স বাদ দিলেও বর্তমান বাজারদরের তুলনায় কম। তবে যারা ২০১৪ বা ২০১৮ সালের রেট অনুযায়ী কার্যাদেশ নিয়েছেন ও চুক্তি করেছেন তারা সে রেট অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য।’

তিনি বলেন, ‘ঠিকাদাররা সাধারণত প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ১০ শতাংশ কম দরে কাজ নেন। ফলে ওই রেটে কাজ করলে আর্থিক ক্ষতিতে পড়বেন তারা। এক্ষেত্রে সরকার সাবসিডি দিতে পারে বা রেট অ্যাডজাস্ট করতে পারবে। তা করলে সব দপ্তরের জন্যই করতে হবে, যার সম্ভাবনা খুব কম। কিন্তু রেট অ্যাডজাস্ট না করলে অনেক ঠিকাদার লাইসেন্স টিকিয়ে রাখার স্বার্থে নিম্নমানের কাজ করতে বাধ্য হবেন। এতে ভবনের স্থায়িত্ব কমে যাবে। দেশের জন্য তা বড় ক্ষতির কারণ হবে।’

সম্প্রতি ঠিকাদাররা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাদের সমস্যা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, ‘নির্মাণসামগ্রীর বাজার অস্থিতিশীল, ক্রমবর্ধমান হারে দাম বেড়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের রেট বর্তমান বাজারদরের চেয়ে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ কম। ফলে চুক্তিমূল্য অনুযায়ী কাজ শেষ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ঠিকাদাররা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কাজের মান ঠিক রাখা কষ্টকর। অতিরিক্ত আয়কর ও ভ্যাট তাদের আর্থিক ক্ষতি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে আয়কর ও ভ্যাট কমানোর পাশাপাশি বাজারদর অনুযায়ী আগের রেট সিডিউল সমন্বয় করার দাবি জানাচ্ছি।’ 

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রো ঠিকাদার সমিতির সভাপতি মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘নির্মাণসামগ্রীর অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়ায় আমরা আর্থিক ক্ষতির মুখে আছি। আমাদের সাবসিডি দেওয়া না হলে বা রেট অ্যাডজাস্ট করা না হলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব। আমাদের বিশ^াস, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করে সমাধান বের করবে।’ 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেরিতে এসে স্বপ্নভঙ্গ গুচ্ছে ভর্তিচ্ছু অনেকের - dainik shiksha দেরিতে এসে স্বপ্নভঙ্গ গুচ্ছে ভর্তিচ্ছু অনেকের নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ ৭ দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের মানববন্ধন - dainik shiksha নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ ৭ দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের মানববন্ধন কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে সম্মতি প্রধানমন্ত্রীর - dainik shiksha জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে সম্মতি প্রধানমন্ত্রীর প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিতের অভিযোগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি গ্রেফতার - dainik shiksha প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিতের অভিযোগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ নিজের শিক্ষককে নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢাবি শিক্ষক, প্রশংসায় ভাসছে ফেসবুক - dainik shiksha নিজের শিক্ষককে নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢাবি শিক্ষক, প্রশংসায় ভাসছে ফেসবুক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026781558990479