‘পাবলিক পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনা’ এবং ‘জিপিএ ৫ এর পরিবর্তে জিপিএ ৪’ করার উদ্যোগে ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, নতুন নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ওপর আবারো গবেষণা চালানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বানানো হচ্ছে গিনিপিগ।
পরীক্ষার সময় কমানোর কারণ হিসেবে শিক্ষাবোর্ডের যুক্তি হচ্ছে, অনেক প্রতিষ্ঠানেই কেন্দ্র থাকে। দীর্ঘদিন ধরে পাবলিক পরীক্ষা হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাসসহ অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রমে সমস্যা হয়। এ জন্যই পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার চিন্তাভাবনা হচ্ছে। সোমবার (২৪) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন নিজামুল হক।
তবে অভিভাবকদের মত ভিন্ন। তারা বলছেন, বর্তমানে ৪৫ দিন সময়ে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর ফলে দুটি পরীক্ষার মধ্যে একদিন সময় পাওয়া যায়। এতে শিক্ষার্থীদের মানসিক শক্তি বেড়ে যায়। পরীক্ষার বিষয় অন্তত রিভিশান দেওয়ার সময় পাওয়া যায়। কিন্তু একটানা পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়বে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে। পরীক্ষার ফল খারাপ হবে। ফলে একই স্তরের মেধাবী শিক্ষার্থী হলেও ‘দুই বিষয়ে পরীক্ষার মধ্যে সময় পাওয়া না পাওয়া’ পরীক্ষার্থীদের মধ্যেই ফল বৈষম্য তৈরি হবে। পরীক্ষার সময় কমানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে অভিভাবকদের মতামত গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
আমিরুল ইসলাম নামে এক অভিভাবকের বক্তব্য, চলতি বছর যারা এইচএসসি বা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে তারা দুটি পরীক্ষার মধ্যে অন্তত একদিন সময় পেয়েছে। এ কারণে তারা ভালো ফল করেছে। আগামী বছর বা তার পরের বছর যারা এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষা দেবে তারা কেন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পাবলিক পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার জন্য প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৪ সালে। ঐ সময় শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। ঐ সময় দাবি উঠেছিল, সময় না কমিয়ে প্রয়োজনে পরীক্ষার জন্য পৃথক কেন্দ্র তৈরির। অভিভাবদের প্রতিবাদের কারণে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যায়নি। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন করে আবার এ উদ্যোগ নেওয়া হলো।
বর্তমানে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট- জেএসসি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে সময় লাগে ১৫ দিন। পাঁচদিন কমিয়ে এনে তা ১০ দিনে নেওয়া হতে পারে। এসএসসি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে সময় লাগে ২৮ থেকে ৩০ দিন। এ সময় ১০ দিন কমিয়ে ২০ দিনে সম্পন্নের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আর এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করতে সময় লাগে ৪৫ দিন। এ সময় ১৫ দিন কমিয়ে ৩০ দিনে সম্পন্ন করার চিন্তাভাবনা চলছে।
আর জিপিএ ৫ এর পরিবর্তে সিজিপিএ ৪ করার পক্ষে বোর্ডে যুক্তি হলো, বর্তমানে দেশে পাবলিক পরীক্ষায় সিজিপিএ ৫-এর মধ্যে ফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জিপিএ ৪-এর মধ্যে ফল প্রকাশ করা হয়। আর বিশ্বের অন্যান্য দেশে সব ধরনের ফলই প্রকাশ করা হয় জিপিএ ৪-এর মধ্যে। ফলে এসএসসি আর এইচএসসির ফলের সঙ্গে উচ্চতর শিক্ষার ফলের সমন্বয় করতে গিয়ে দেশের চাকরিদাতারাই মহাসমস্যায় পড়েন।
এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের মত ভিন্ন। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখী করার জন্যই সরকার এ উদ্যোগ নিচ্ছে। তাদের বক্তব্য, বিদেশের কথা মাথায় রেখে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়। দেশের শিক্ষার মান ভালো না করে শিক্ষার্থীদের বিদেশে পাঠানোর জন্য জিপিএ ৪ করার কোনো মানেই হয় না। এতদিন জিপিএ ৫ দিয়ে চললো এখন কেন নতুন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
তারা বলেন, ২০২০ সাল থেকে যদি নতুন গ্রেডে পরীক্ষা হয় তাহলে ২০১৯ সালে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রেড বৈষম্য তৈরি হবে। মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব তৈরি হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা চাকরিপ্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রেই বৈষম্য হবে।