প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষানীতি হচ্ছে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

অটিজম, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তিসহ সকল প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য একটি বিশেষ শিক্ষানীতি প্রণয়ন করছে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের একটি শিক্ষা নীতিমালা থাকলেও প্রতিবন্ধী শিক্ষা পরিচালনা, শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি, শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য কোনো নীতিমালা নেই। ফলে নতুন করে একটি নীতিমালা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে সরকারি বেসরকারি ছাড়াও ভবিষ্যতে যে সব প্রতিবন্ধী স্কুল, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, প্রতিবন্ধী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন করবে তাদের শিক্ষাক্রম কী হবে তা এখনই নির্ধারণ করা জরুরী। এই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত নিয়ে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। যা শিগগিরই অনুমোদনের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। শনিবার (২৩ মার্চ) দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন তপন বিশ্বাস। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারি ও সরকারি উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবন্ধী স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অটিজম, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন্স সিনড্রোম ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তিসহ প্রতিবন্ধী শিশুদের মূলধারার বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযোগী করে গড়ে তুলতে জেলায় জেলায় সরকারি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবে। সে লক্ষ্যে একটি বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, দেশে ৫০ প্রতিবন্ধী স্কুল ছিল যেগুলো সুইডেন সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত হয়ে আসছে। পরবর্তীতে ১২ স্কুল এমপিওভুক্ত করা হয়। সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে এই ধরনের স্কুলের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে এবং নিবন্ধন ও এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন জমা পড়েছে।

উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে এমপিওভুক্ত প্রতিবন্ধী স্কুলের সংখ্যা ৬২টি। শিক্ষার্থীর সংখ্যা আট হাজার। তারা শিক্ষার পাশাপাশি প্রতিমাসে সরকার থেকে সাত শ’ টাকা করে ভাতাও পাচ্ছেন। নতুন করে প্রণীতব্য নীতিমালায় প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষকদের সরকারি বেতন ভাতাদির অতিরিক্ত মাসিক আরও ১ হাজার ৫শ’ টাকা করে প্রণোদনা তথা ইনসেনটিভ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশে এখন পর্যন্ত ১২ প্রকার প্রতিবন্ধী রয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সমসুবিধা পাওয়া ও অধিকার প্রদান একটি সাংবিধানিক অধিকার। ইতোমধ্যে প্রণীত প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩, নিউরোডেভেলপমেন্ট প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন ২০১৩ ওই আইনের অধীনে দুইটি বিধিমালাও হয়েছে। বাস্তবে কিছু সমস্যাও রয়েছে। খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত সকল প্রতিবন্ধী স্কুল এই নীতিমালার আলোকে শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচী, মূল্যায়ন, পরিদর্শন ও তদারকি করতে হবে। স্কুলে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, কারিগরি শিক্ষা, খেলাধুলা, বিনোদনসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১শ’ হলে স্বীকৃতি, বেতন ভাতার জন্য আবেদন করা যাবে। তবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ৭৫ শিক্ষার্থী হলেই আবেদন করা যাবে। হাওড়, বাঁওড়, চরাঞ্চল, পশ্চাৎপদ জনপদ, দুর্গম এলাকা এবং পার্বত্য জেলাসমূহের জন্য কমপক্ষে কতজন শিক্ষার্থী হলে স্কুল পরিচালনা, বেতন-ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবে তা সরকার নির্ধারণ করবে। প্রতিটি স্কুলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত হবে ১:১০। অর্থাৎ একজন শিক্ষক ১০ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে পড়াবেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্কুলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত হবে ১:৮। পেশাজীবী স্কুলে অনুপাত হবে ১:২০। স্কুলের আয়া অর্থাৎ সহায়ক হবে ১:১০। প্রতি ৫০ অনাবাসিক শিক্ষার্থীর জন্য একজন ভ্যানচালক হবেন। প্রতি ২৫ শিক্ষার্থীর জন্য একজন ভ্যানচালক থাকবে। নৈশপ্রহরী হবে ২ জন। স্কুলে শিক্ষার্থীদের চাহিদার আলোকে অডিওলজিক্যাল পরীক্ষা, হেয়ারিং এইড, ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, বিহেভিওরাল থেরাপি, কাউন্সিলিং এবং শরীর চর্চার ব্যবস্থা থাকবে। শিক্ষকদের জন্য পাঠদান উপকরণ হিসেবে ট্রেইলর ফ্রেম, টকিংবুক, হুইল চেয়ার, লো ভিশন গ্লাস, পেন্সিল গ্রিপস, বুক হোল্ডার, রিডিং স্ট্যান্ড, সাইন ল্যাংগুয়েজ উপকরণ, সাড়াছড়ি, হেয়ারিং এইড, ক্র্যাচ, গ্লোব, ম্যাপ, ফ্লাশ কারড, টকিং ক্যালকুলেটর, স্ক্রীন রিডারসহ যাবতীয় শিক্ষা উপকরণ থাকবে। আরও থাকবে ছবির বই, পুঁতি, ডিসপ্লে বোর্ড, পাপেট, কাঠি, ব্লক, পাজেল এবং ফ্লোরমেট।

শিক্ষার্থীদের প্রতিবন্ধিতার ধরন, সক্ষমতা ও বয়স অনুযায়ী প্রাক প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখা পড়ার ব্যবস্থা থাকবে। ১৫ বছরের অধিক বয়সী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার পাশাপাশি পুনর্বাসন, প্রশিক্ষণ এবং গুরুতর শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি বিদ্যালয় সহজ, উপযোগী, বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা উপকরণ থেরাপি সংশ্লিষ্ট সরঞ্জমাদির ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে কর্মসংস্থানসহ সকল বিষয়ে পিতামতা যত্নকারী বা পরিবারের সদস্যদের বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন বিশেষ দক্ষতা প্রশিক্ষণ দেবে। পাঁচ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর প্রাক প্রাথমিক শিক্ষাক্রমে ভাষা বিকাশের জন্য স্পীচ থেরাপি বাধ্যতামূলক। শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীদের ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগ্রহ ও চাহিদার ভিত্তিতে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ বুটিক, সেলাই, সুচিকর্ম, ব্লক বাটিক, বই বাঁধাই, ঠোঙ্গা বানানো, মোম বানানো, হাঁস মুরগি পালন, বেকারি প্রশিক্ষণ, বাগান করা, গৃহস্থালি কাজ, হাট বাজার প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, বিউটিফিকেশন, ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার চাহিদা মোতাবেক কাজে লাগানো হবে।

খসড়া নীতিমালায় বিদ্যালয়ের কার্যক্রম অংশে বলা হয়েছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে টক এ্যান্ড টুচ পদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলা, ইংরেজী এবং অন্যান্য বিষয়ে ব্রেইলি পদ্ধতি এবং গণিতের জন্য এ্যাবাকাস ও ট্রেইলর ব্যবহার করতে হবে। অডিও ক্যাসেট ও বিশেষ করে বিজ্ঞান ও ভূগোলের ক্ষেত্রে রেইস ডায়াগ্রাম ব্যবহার করতে হবে। স্বল্প দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য বড় ছাপার বই থাকতে হবে। প্রতি তিন মাসে একটি অভিভাবক সভা করতে হবে। শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক ফিজিওথেরাপি, স্পীচথেরাপি ও অকুপেশনাল থেরাপির ব্যবস্থা থাকবে প্রতিটি বিদ্যালয়ে। মানসিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অন্যান্য শর্তের সঙ্গে তার আগ্রহ, মানসিক অবস্থা, চাহিদা বিবেচনা করে প্রশিক্ষণ সঙ্গীত, অঙ্কন, বাদ্যযন্ত্র বাজানো, খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখতে হবে। জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক প্রতিবন্ধী স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষক সদস্য সচিব থাকবেন। ১৩ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি তিন বছরের জন্য নিযুক্ত হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025959014892578