প্রশ্নফাঁস মামলার চার্জশিট প্রস্তুত, ঢাবি শিক্ষার্থীসহ অভিযুক্ত ১২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বহুল আলোচিত প্রশ্নফাঁস মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) প্রস্তুত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। দেড় বছরের দীর্ঘ তদন্ত শেষে এই মামলার অভিযোগপত্রে ঢাবির ৮৭ শিক্ষার্থীসহ মোট ১২৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর বাইরে আরও ৭৯ জনের তথ্য যাচাইয়ের কাজ চলছে। নাম-ঠিকানা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, প্রশ্নফাঁস মামলার তদন্ত গুছিয়ে আনা হয়েছে। শিগগিরই আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে। সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাবেন।

সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশব্যাপী আলোচিত এই ঘটনার শুরু হয় ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ অক্টোবর মধ্যরাতে। সে রাতে একজন গণমাধ্যমকর্মীর দেওয়া কিছু তথ্যের সূত্র ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি আবাসিক হলে অভিযান চালায় সিআইডি। অভিযানে মামুন ও রানা নামে দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীকালে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন পরীক্ষার হল থেকে গ্রেফতার করা হয় রাফি নামে ভর্তিচ্ছু একজন শিক্ষার্থীকে। এ ঘটনায় ওই দিনই (২০ অক্টোবর, ২০১৭) শাহবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, তাদের তদন্তে উঠে আসে প্রশ্নফাঁস চক্রটি পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রিন্টিং প্রেস থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করতো। ২০১৫ ও ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে পর পর দুই বছর ফাঁস করা প্রশ্ন নিয়ে সাভারের পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার একটি বাসায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছিল তারা। চক্রের মাস্টারমাইন্ড ছিল নাটোর জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান এছামী, প্রেস কর্মচারী খান বাহাদুর, তার আত্মীয় সাইফুল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বনি ও মারুফসহ আরও কয়েকজন। সে সময় ধারাবাহিক অভিযানে মূলহোতাসহ মোট ৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবাই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, মূলত দুইভাবে প্রশ্নফাঁস চক্রটি কাজ করতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন যেই ছাপাখানা থেকে ছাপা হতো, চক্রের সদস্যরা সেই প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতো। এরপর পরীক্ষার আগের রাতে সেসব প্রশ্নের সমাধান বের করে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করানো হতো। এছাড়া পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে দ্রুত তা সমাধান করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীকে সরবরাহ করা হতো।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, ছাপাখানা থেকে প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের সবাই চিহ্নিত হলেও ডিজিটাল ডিভাইস চক্রটিকে চিহ্নিত করতে তাদের বেগ পেতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত গত বছরের বিভিন্ন সময়ে ডিজিটাল জালিয়াত চক্রটিকেও চিহ্নিত করার পর তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এই চক্রটির মাস্টারমাইন্ড হলো বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাস। তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে ছিল ইব্রাহীম, মোস্তফা কামাল, হাফিজুর রহমান হাফিজ এবং তাজুল ইসলাম। গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাগারে আটক থাকার পর বেশ কয়েকজন আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়েছে।

সিআইডির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, তদন্তে প্রশ্নফাঁস চক্রের মূলহোতাদের অঢেল অবৈধ অর্থ-সম্পদের সন্ধানও পাওয়া গছে। তাৎক্ষনিক তদন্তে প্রায় ২০ কোটি টাকার নগদ অর্থ ও সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে ইতোমধ্যে উত্তরা পশ্চিম থানায় মানিলন্ডারিং আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে ওই মামলাটির তদন্ত চলছে।

যাদের নামে অভিযোগপত্র

যাদের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হচ্ছে তারা হলো ইব্রাহিম, অলিপ কুমার বিশ্বাস, মোস্তফা কামাল, হাফিজুর রহমান, মাসুদ রহমান তাজুল, রিমন হোসেন, মহিউদ্দিন রানা, আইয়ুব আলী বাধন, আবদুল্লাহ আল মামুন, ইশরাক হোসেন রাফি, জাহাঙ্গীর আলম, মামুন মিয়া, অসিম বিশ্বাস, অনোয়ার হোসেন, নুরুল ইসলাম, হাসমত আলী সিকদার, হোসনে আরা বেগম, গোলাম মো. বাবুল, টি এম তানভির হাসনাইন, সুজাউর রহমান সাম্য, রাফসান করিম, আখিনুর রহমান অনিক, নাজমুল হাসান নাঈম, ফারজাদ ছোবহান নাফি, আনিন চৌধুরী, রকিবুল হাসান ইসামী, বনি ইসরাইল, মারুফ হোসেন, সাইফুল ইসলাম, খান বহাদুর, কাজী মিনহাজুল ইসলাম, নাহিদ ইফতেখার, রিফাত হোসেন, বায়েজিদ, ফারদিন আহম্মেদ সাব্বির, তানভির আহম্মেদ মল্লিক, প্রসেনজিত দাস, আজিজুল হাকিম, নাভিদ আনজুম তনয়, সালমান এফ রহমান হৃদয়, সজীব আহাম্মেদ, শিহাব হোসেন খান, এনামুল হক আকাশ, মোশারফ মোসা, মোহায়মেনুল ইসলাম বাঁধন, সাইদুর রহমান, আব্দুর রহমান রমিজ, গোলাম রাব্বী খান জেনিথ, উৎপল বিশ্বাস, বেলাল হোসেন বাপ্পী, মশিউর রহমান সমীর, আবু জুনায়েদ সাকিব, মোস্তাফিজ-উর-রহমান মিজান, আবুল কালাম আজাদ, শরমিলা আক্তার আশা, মাসুদ রানা, জেরিন হোসাইন, শেখ জাহিদ বিন হোসেন ইমন, তাজুল ইসলাম সম্রাট, আবির হাসান হৃদয়, মোর্শেদা আক্তার, সালমান হাবিব আকাশ, আলামিন, শাহ মেহেদী হাসান হৃদয়, অনিকা বৃষ্টি, ফিওনা মহিউদ্দিন মৌমি, সিনথিয়া আহম্মেদ, শাবিরুল ইসলাম সনেট, লাভলুর রহমান লাভলু, ইছাহাক আলী ইছা, আব্দুল ওয়াহিদ মিশন, তানজিনা সুলতানা ইভা, ইশরাত জাহান ছন্দা, আশেক মাহমুদ জয়, নাফিসা তাসনিম বিন্তী, প্রনয় পান্ডে, নুরুল্লাহ নয়ন, জিয়াউল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম আরিফ, জাকিয়া সুলতানা, শাদমান শাহ, সাদিয়া সিগমা, রবিউল ইসলাম রবি, মেহেজাবীন অনন্যা, রাকিবুল হাসান, এম. ফাইজার নাঈম সাগর, সাদিয়া সুলতানা এশা, সামিয়া সুলতানা, ফাতেমা আক্তার তামান্না, নওশীন আফরিন মিথিলা, আমরিন আলম জুটি, সুবহা লিয়ানা তালুকদার, মোহাইমিনুল রায়হান ফারুক, সাফায়েতে নূর সাইয়ারা নোশিন, মাসুদ রানা, ইখতেখার আলম জিসান, রাকিব হাসান, খালিদ হাসান, আজলান শাহ ফাহাদ, সৌভিক সরকার, রিজন আহমদ পাঠান, মাহবুব আলম সিদ্দিকী সম্রাট, হাসিবুর রশিদ, আফসানা নওরিন ঋতু, মারুফ হাসান খান, তৌহিদুল হাসান আকাশ, শাহাদৎ আল ফেরদৌস ফাহিম, আয়েশা আক্তার তামান্না, ফাতেমা তুজ জোহরা মীম, শ্বাষত কুমার ঘোষ শুভ, রাসেল আলী, রাজীবুল ইসলাম রাজীব, আবু মাসুম, জান্নাত সুলতানা, জিএম রাফসান কবির, সাগর সাহা, সাদেকুল ইসলাম সুমন, আব্দুল্লাহ, খাইরুজ্জামান সরকার সুজন, শাহেদ আহমেদ, মুহাইমিনুল ইসলাম মাসুদ, আশরাফুল আলম, হাসিবুর রহমান রুবেল এবং মাকসুদুর রহমান শুভ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029358863830566