প্রশ্নফাঁস, শিশুর হাতে হাতকড়া ও মিডিয়ার ভূমিকা

রাজীব নূর |

ভেবেছিলাম প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে কথা বলব না। চুপ করেই ছিলাম, খুলনায় প্রশ্ন ফাঁ‌সের দা‌য়ে আটক নয়জনের ছবি আমাকে মৌনব্রত ভাঙতে বাধ্য করেছে,১৭ ফেব্রুয়ারি খুলনায় যে নয়জন‌কে আটক ক‌রা হয়েছে, তাদের অন্তত পাঁচজ‌নের বয়স ১৮ বছ‌রের কম। আই‌নে স‌ন্দেহভাজন শিশু অপরাধী‌দের ছ‌বি প্রকা‌শে নি‌ষেধাজ্ঞা র‌য়ে‌ছে। অথচ আমরা দেখলাম প্রকৃত প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ধরতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হলেও শিশু পরীক্ষার্থীদের যাদের কাছে প্রশ্ন পাওয়া যাচ্ছে, তাদের হাতকড়া লাগানো ছবি প্রকাশ করা হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। অথচ শিশু আইন ২০১৩-তে বলা হয়েছে :
“২৮।(১) শিশু-আদালতে বিচারাধীন কোন মামলায় জড়িত বা সাক্ষ্য প্রদানকারী কোন শিশুর ছবি বা এমন কোন বর্ণনা, সংবাদ বা রিপোর্ট প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম অথবা ইন্টারনেটে প্রকাশ বা প্রচার করা যাইবে না যাহা সংশ্লিষ্ট শিশুকে শনাক্তকরণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহায্য করে।
৪৪।(৩) শিশুকে গ্রেফতার করিবার পর গ্রেফতারকারী পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতারের কারণ, স্থান, অভিযোগের বিষয়বস্তু, ইত্যাদি সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তাকে অবহিত করিবেন এবং প্রাথমিকভাবে তাহার বয়স নির্ধারণ করিয়া নথিতে লিপিবদ্ধ করিবেন। তবে, শর্ত থাকে যে, গ্রেফতার করিবার পর কোন শিশুকে হাতকড়া বা কোমরে দড়ি বা রশি লাগানো যাইবে না।”
আমার মনে হয় ওই আইনের ৭৮-এর উপ-ধারাগুলোও গণমাধ্যমসহ সবার পড়ে দেখা দরকার, যেখানে শিশুকে অসৎ পথে পরিচালনা করানো বা করিতে উৎসাহদানের দণ্ডের বিবরণ রয়েছে।
উল্লেখ্য, একবার ভেবেছিলাম, খুলনার ওই ছেলেগুলোর ছবি একটু ব্লার করে দিয়ে দিই, কারণ ছবি তো যথেষ্ট ছড়িয়ে গেছে। না, মন সায় দিল না। ওরা নিশ্চয়ই অপরাধ করেছে, আমরা যে ওদের শাস্তি দিচ্ছি, ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্ন না দেখার পরামর্শ দিচ্ছি, সেটা মিটসেফের দরজা খোলা রেখে বেড়ালকে দুধ না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার মতো।
নির্মলেন্দু গুণের একটা কবিতা পড়েছিলাম অনেকদিন আগে, ভালো করে মনে করতে পারছি না, ভুল হলে মাফ করে দিয়েন। কবিতাটা এই রকম : ‘আসুন আমরা আগুন সম্পর্কে বৃথা বাক্য ব্যয় না করে একটি দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে দিয়ে বলি: ‘এই হচ্ছে প্রকৃত আগুন।’  মিটসেফ খোলা রেখে, বিড়ালকে উপদেশ দিয়ে অযথা সময় নষ্ট করে লাভ নেই, আসুন আমরা মিটসেফের দরোজাটা বন্ধ করে দেই ।’
আসুন আমরা প্রশ্ন ফাঁসের হোতাদের খুঁজে বের করি। ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্ন দেখার প্রলোভন উপেক্ষা করতে ব্যর্থ পরীক্ষার্থীদের আটক করে গণমাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে দেওয়ায় বীরত্ব জাহির হয় না।

 রাজীব নূর: বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক সমকাল।

পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032720565795898