প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে মূল্যায়নের চিন্তা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে টানা প্রায় ছয় মাস অনির্ধারিত বন্ধে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এ বছর আর ক্লাস হওয়ার খুব একটা সময় থাকছে না। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ওপরের শ্রেণিগুলোতে ওঠার জন্য মূল্যায়নের নানা বিকল্প চিন্তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে শিক্ষা প্রশাসন। এখন পর্যন্ত সিলেবাস কাটছাঁট করে সংক্ষিপ্ত পরিসরে মূল্যায়নের বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার (১৯ জুন) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।  প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোশতাক আহমেদ। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, তবে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার বিষয়ে ভিন্ন চিন্তাও আসতে পারে। আর পাবলিক পরীক্ষাগুলো পিছিয়ে নেওয়া হবে। পিছিয়ে যাচ্ছে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিও।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব চিন্তার কথা জানা গেছে। তবে তাঁরা বলছেন, আসলে সবকিছু নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। কারণ আগস্টেও যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তাহলে ক্লাস হওয়ার সুযোগ আরও কমে যাবে। তখন বিদ্যালয়গুলোর অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা আদৌ নেওয়া যাবে কি না, তা তখনই বলা যাবে। তবে সেপ্টেম্বরেও যদি পরিস্থিতি ভালো হয় তাহলে যতটুকু ক্লাস নেওয়া যায় তার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা যাবে। কারণ, বিকল্প হিসেবে সিলেবাস ধরেই ইতিমধ্যে টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাস প্রচার করা হচ্ছে। এতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছে। 

অবশ্য কোনো কোনো স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ  বলছেন, যদি পরীক্ষা নিয়েই মূল্যায়ন করতে হয় তাহলে সব বিষয়ের পরীক্ষা না নিয়ে মৌলিক কয়েকটি বিষয়ের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা যেতে পারে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ছুটি আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সরকার থেকে আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে এই ছুটি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গড়াতে পারে। ফলে দীর্ঘ ছুটিতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে প্রাথমিকে প্রথম সাময়িকী পরীক্ষা বাদ হয়ে গেছে। আসন্ন দ্বিতীয় সাময়িকী পরীক্ষাও হওয়ার সম্ভাবনা নেই। একইভাবে মাধ্যমিকের অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষাও বাতিলের খাতায় চলে গেছে। একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দ্বাদশ শ্রেণিতে কীভাবে উঠবে, তা–ও আটকে আছে। 

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আপাতত সিলেবাস কাটছাঁট করে মূল্যায়নের কথাই বেশি ভাবছেন নীতিনির্ধারকেরা। দেশের মাধ্যমিক ও কলেজগুলো দেখভাল করে মাউশি। সংস্থাটির মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, মাধ্যমিকে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা তো আর নেওয়া গেলই না। এখন সেপ্টেম্বরেও যদি স্কুল খুলে তখন হয়তো বাকি ৫০ শতাংশ সিলেবাসের ভিত্তিতে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে মূল্যায়ন করা হতে পারে। এগুলো নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর।

এখন পর্যন্ত দেশে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষাই হলো একমাত্র ব্যবস্থা। এ বিষয়ে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হক বলেন, ইতিমধ্যে যতটুকু ক্লাস হয়েছে বা ভবিষ্যতে যতটুকু ক্লাস নেওয়া সম্ভব হবে তার ওপর ভিত্তি করেই পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে ওপরের শ্রেণিগুলোর সঙ্গে যেসব বিষয়ের সাদৃশ্য আছে কেবল সেগুলোর ভিত্তিতেই মূল্যায়ন হতে পারে। যেমন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার জন্য যে পরীক্ষা (বার্ষিক) হবে সেখানে শিক্ষাক্রমে অষ্টম শ্রেণির সঙ্গে সাদৃশ্য থাকা বিষয়ের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। 

ক্লাস না হওয়ায় মূল্যায়ন কীভাবে হবে, জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন  বলেন, এখন পর্যন্ত টেলিভিশনে চলা ক্লাসের ওপরই তাঁরা গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাঁরা দেখেছেন ৯০ শতাংশের ওপর শিক্ষার্থী টিভির ক্লাসের ওপর কোনো না কোনোভাবে যুক্ত আছে। মূল্যায়নের বিষয়ে তাঁরা কয়েকটি বিকল্প চিন্তা করে রেখেছেন। তবে সেটি নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির স্বাভাবিক হওয়ার ওপর। যখন এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তার ১৫ দিন আগে থেকেই প্রবণতা বোঝা যাবে। তখন কোন বিকল্পটি বেছে নেওয়া হবে, তা জানানো হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, প্রাথমিকেও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ভিত্তিতেই মূল্যায়নের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে  জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ। 

অনিশ্চিত এইচএসসি পরীক্ষা ও একাদশে ভর্তি

উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়া হওয়ার কথা ছিল ১ এপ্রিল থেকে। কিন্তু স্থগিত এই পরীক্ষা এখন কবে হবে, তা ঠিক হয়নি। ফলে ১৩ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী দুশ্চিন্তায় পড়েছে। ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কমপক্ষে ১৫ দিন পর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। আর আটকে থাকা একাদশ শ্রেণির ভর্তিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখন খুলবে তার ১৫-২০ দিন আগে শুরু করা হবে। 

সব মিলিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় করোনা বড় ধরনের আঘাত হেনেছে। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যায়ন কীভাবে হতে পারে—জানতে চাইলে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বলেন, যদি পরীক্ষা নিয়েই মূল্যায়ন করতে হয় তাহলে মৌলিক বিষয় হিসেবে বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের ওপর মূল্যায়ন করা যেতে পারে। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞানের কিছু মৌলিক বিষয়ে মূল্যায়ন হতে পারে। আর পরিস্থিতি বিবেচনায় যদি পরীক্ষা ছাড়াই ওপরের শ্রেণিতে পদোন্নতি দিতে হয় তাহলে সেই সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031979084014893