প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদ কেনো ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা প্রয়োজন?

জসিম বেপারী, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার দুই নম্বর লক্ষ্য ছিলো সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন। ২০০১-২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এই লক্ষ্য অর্জনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিলো। ৩য় বিশ্বের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এই লক্ষ্য অর্জন করে । এই লক্ষ্য অর্জনে সরকারের অন্যান্য বিভাগের অবদান থাকলেও সবচেয়ে বেশি অবদান ছিলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের। তারাই এই লক্ষ্য অর্জনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আবার একই সংস্থা কর্তৃক ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৭ টি অভিষ্টের মধ্যে চার নম্বর  অভিষ্ট হচ্ছে সকলের জন্য ন্যায্যতা ভিত্তিক ও মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতকরণ।

এসব লক্ষ্য অর্জনে ২০১৬-২০৩০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এই লক্ষ্য অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ। কারণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি মেধাবী তরুণ প্রজন্ম সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দিচ্ছেন।

বর্তমান বিশ্বে ৪র্থ শিল্পবিপ্লব চলছে। ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের সুবিধা ভোগকারী নাগরিক গড়ে তুলতে উন্নত বিশ্ব স্টেম এডুকেশন চালু করছে। আর স্টেম এডুকেশন বর্তমান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বিশ্বের প্রত্যেক সরকারই জানে। যেসমস্ত দেশে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি অত্যন্ত মজবুত এবং টেকসই তারাই এই শিক্ষা ব্যবস্থায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। যেমন ফিনল্যান্ড। ফিনল্যান্ডের প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি আজ বিশ্ব মানের । ফিনল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সর্বাধুনিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে তারা প্রথমেই প্রাথমিক শিক্ষার সংস্কারে হাত দেয় । তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রথমেই তারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আর্থিক , সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা এতো বৃদ্ধি করে যার ফলস্বরূপ সেই দেশের সবচেয়ে বেশি মেধাবীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্য একপ্রকার প্রতিযোগিতায় নামে।

ফিনল্যান্ডের মেধাবীরা শিক্ষকতায় পেশায় এসে সব্বোর্চ্চ সুবিধা পেয়ে তারাও তাদের সব্বোর্চ্চ মেধা প্রয়োগ করে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্বমানের পর্যায়ে নিতে যেতে। যার কারণে ফিনল্যান্ড দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হয়েও আজ তারা উন্নতির চরম শিখরে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য , জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান তথা প্রথম বিশ্ব আজ উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছে তাদের প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি শক্তিশালী বলেই। তার জন্য তারা শিক্ষায় বিনিয়োগের পাশাপাশি শিক্ষকদের পিছনে বিনিয়োগে পিছপা হয় নাই। সেই দিন বেশি দূরে নয় যেইদিন বাংলাদেশও শিক্ষায় ব্যবস্থায় অত্যাধুনিক বিশ্বের মডেল হবে। কারণ বাংলাদেশেও আজ সর্বাধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন একঝাঁক তরুণ প্রজন্ম শিক্ষকতায় পেশায় আসছেন।

শিক্ষকতা পেশায় তাদের ধরে রাখতে রাষ্ট্রকে তার যথাযথ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে । অবশ্যই শিক্ষকদের আর্থিক মর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে তাতে তাদের সামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি পাবে। তাহলেই কেবল মেধাবীরা এই পেশায় আসতে উৎসাহিত হবে আর যারা আছেন তারাও পেশাটাকে স্বতঃস্ফূর্ত ও আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে দেশ গড়ার কাজে সর্বদা নিয়োজিত থাকবেন। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের সহকারী শিক্ষকরা তাদের বেতন গ্রেড নিয়ে অত্যন্ত হতাশ । কারণ জাতি গড়ার কারিগররা কেনো রাষ্ট্রের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী এই প্রশ্নের উত্তর সহকারী শিক্ষকরা আজও রাষ্ট্রের কাছ থেকে পাই নি । অত্যন্ত লজ্জার বিষয় জাতি গড়ার কারিগরদের বেতন গ্রেড ১৩তম (স্কেল: ১১০০০-২৬৫৯০ টাকা) । রাষ্ট্রের আরো জানা আছে বিসিএস পরীক্ষায় স্নাতকে ৩য় শ্রেণি পেয়েও আবেদন করতে পারে অথচ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে আবেদন করার শিক্ষাগত যোগ্যতা নূন্যতম স্নাতক ২য় শ্রেণি। অথচ এই শিক্ষাগত যোগ্যতায় তাদের দেয়া হচ্ছে ১৩তম গ্রেড। আবার পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের দেয়া হচ্ছে ১০ম গ্রেড অথচ তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা আর আমাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা একই চাওয়া হয় এবং উভয়েরই একই কারিকুলামে পাঠদান করতে হয়।

যার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা কোনো রকমের একটু সুযোগ পেলেই অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন যা দেশের প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। উপর্যুক্ত যুক্তিগুলোর গুরুত্ব যথাযথভাবে অনুধাবন করলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদ ১০ম গ্রেডে উন্নীত না করার কোনো বিকল্প নাই । 

লেখক : সিনিয়র সহসভাপতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পরিষদ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042970180511475