প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড হচ্ছে : ৩০ লাখের বেশি সমাপনী পরীক্ষার্থীর চাপ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ৩০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর চাপ সামলাতে দ্রুত প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠনের কাজ শেষ করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর ইতোমধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড আইনের খসড়া তৈরির কাজ অনেকটা শেষ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। আগামী মাসেই খসড়া জমা হতে পারে মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবছর ৩০ লাখেরও বেশি সমাপনী পরীক্ষার্থীর চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা। পরীক্ষা সামাল দিতে গিয়ে প্রাথমিকের অন্য সকল কাজ স্থবির হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় আগামী বছরেই শিক্ষা বোর্ড গঠন করতে চায় মন্ত্রণালয়। শনিবার (৩০ নভেম্বর) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন শুক্রবার বলেছেন, ‘আমরা আইনের খসড়া তৈরির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে বলেছিলাম। ইতোমধ্যেই অধিদফতর কাজ অনেকটাই করে ফেলেছে। তাদের একটি ঘরোয়া সভা আছে খসড়া নিয়ে। এটি করেই হয়তো আগামী মাসে খসড়া মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে অধিদফতর। জমা দিলেই আমরা আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে দ্রুত ক্যাবিনেটে দিয়ে দিব। যেভাবে কাজগুলো শেষ করতে চাই তা ঠিকভাবে এগোলে আগামী অর্থবছরেই প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আলাদা বোর্ড কার্যকর করতে পারব ইনশাল্লাহ।’

অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. এ এফ এম মঞ্জুর কাদির বলেছেন, এসএসসি বা এইচএসসিতে সব বোর্ড মিলিয়ে যে পরীক্ষার্থী হয় তার চেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী হয় প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায়। তাই পরীক্ষার জন্য অবশ্যই একটি শিক্ষা বোর্ড থাকা উচিত। এই পরীক্ষা নিতে গিয়ে আমরা প্রচ- চাপে রয়েছি। অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরীক্ষার সময় বিজি প্রেসসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। তখন আমাদের প্রধান অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। হাজার হাজার কাজের মধ্যে পরীক্ষা নেয়াটা খুব কষ্টকর।

এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, আসলে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা থাকবে। এ পরীক্ষা তুলে দেয়া হবে না। কারণ আপনি সিঙ্গাপুর, ফিনল্যান্ডের মতো দেশে দেখেন তাদেরও প্রাথমিকে পরীক্ষা আছে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে প্রাথমিকে প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষা রাখতে হবে। তাই পরীক্ষা কিন্তু রাখতেই হবে। আর এ পরীক্ষা রাখলে একটি বোর্ড জরুরী হয়ে পড়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও পরীক্ষা শীঘ্রই বাতিল হবে না। তাই পরীক্ষা চালু রাখতে হলে কি প্রক্রিয়ায় শিক্ষা বোর্ডকে কার্যকর করা যায় তার পথ বের করতে এখন কাজ করছেন কর্মকর্তারা।

বোর্ডের জন্য জনবল নিয়োগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক এ এফ এম মঞ্জুর কাদির বলেছেন, ‘বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিট’ এখন আর কার্যকর নেই। অর্থাৎ ইউনিটের কাজ নেই। তাই আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড হলে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিট বিলুপ্ত করে এর জনবল শিক্ষা বোর্ডে একীভূত করা হবে।

খসড়া তৈরির কাজের সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা শিক্ষা বোর্ড গঠনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলছিলেন, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৩০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর পরীক্ষার চাপ সামলাতে পারছে না অধিদফতর। এসএসসি ও এইচএসসিতে যেখানে ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষার জন্য বোর্ড আছে ১০টি, সেখানে প্রাথমিকের ৩০ লাখের জন্য বোর্ড নেই একটিও।

জানা গেছে, এবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বোর্ড গঠনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশ আসার পরই কাজ শুরু হয়। ৩০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর পরীক্ষার জন্য কোন বোর্ড না থাকা শিক্ষার মানের জন্য সুখকর নয় বলে দ্রুত বিষয়টিতে নজর দেয়ার তাগিদ দেন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি না থাকায় জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না বলেও সংসদীয় কমিটি মত দেয়। কমিটি শিক্ষার মান বাড়াতে মন্ত্রণালয়কে তাদের কাজে গতিশীল হওয়ারও সুপারিশ করে। তার পরই অধিদফতর শিক্ষা বোর্ড গঠনে একটি প্রস্তাব পাঠালে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

২০১৩ সালে ২৬ হাজার স্কুল জাতীয়করণ হওয়ায় এখন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৩ হাজারের ওপরে। শিক্ষকের সংখ্যা চার লাখ। প্রতিষ্ঠান বাড়লেও অধিদফতরের লোকবল আছে আগের মতোই। স্কুল ও শিক্ষকের দেখভাল করাই একটি অধিদফতরের পক্ষে কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সময়মতো অনেক কাজই করা সম্ভব হয় না। এরপরও আবার থাকে পরীক্ষার দায়িত্ব।

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শেখ ইকরামূল কবির বলছিলেন, ৩০ থেকে ৩২ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষার বোঝা অধিদফতরের ওপর দিলে আসলে তা নেয়া কঠিন। একটি বিকল্প চিন্তা করতেই হবে। বোর্ড হতে দেরি হলে কমপক্ষে বর্তমানের ১০ বোর্ডকে এ পরীক্ষার দায়িত্ব দেয়া যায়। তাতেও সুফল পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন এ শিক্ষাবিদ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর - dainik shiksha এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অভিযুক্ত নারায়ণ চন্দ্র নাথের কাহিনী - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অভিযুক্ত নারায়ণ চন্দ্র নাথের কাহিনী সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে - dainik shiksha সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034639835357666