পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম বাড়াতে হবে : অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান

ড. জিয়া রহমান |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, কোনো সমাজে যখন হঠাৎ করে পরিবর্তন ঘটে তখন সেই সমাজের মধ্যে কিছু বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। এটা আমরা পৃথিবীর অনেক দেশেই দেখেছি। ইংল্যান্ডে ১৯ শতকের শুরুতে যখন শিল্পায়ন শুরু হয় তখন সেখানে নানা রকম সমস্যা দেখা গিয়েছিল। যেমন সেখানে শহরায়ন, হাউজিং সমস্যা এবং নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন এতিমখানা থেকে কিশোরদের নিলামে কিনে এনে কাজে লাগান হতো। এই কিশোরদের ওপর অস্বাভাবিক, অমানুষিক নির্যাতন চালান হতো। এমনিভাবে প্রতিটা যুগসন্ধিক্ষণে নানা ধরনের অসংগতি দেখা যায়। ১৯২০ সালে এ ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছিল। তখনকার সময়ে আমেরিকার বস্তি এলাকায় যারা বসবাস করত এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে যে মানুষগুলো আমেরিকার শহরগুলোতে ভিড় করেছিল তারা সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে উঠতে পারেনি। সেখানে ছোটখাটো চুরি, ভায়োলেন্ট ক্রাইম, হত্যাসহ নানা ধরনের অপরাধ সংগঠিত হতো। এর কারণ ছিল সমাজ পরিবর্তন এবং ওই জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য এবং সমাজের সঙ্গে মানিয়ে উঠতে না পারা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে গত ১০-১৫ বছর ধরে সমাজে এক ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে টেকনোলজি। আমাদের সনাতনি মূল্যবোধ আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেট, ফেসবুক, টেলিভিশন, বিদেশী অনুষ্ঠান দেখে আমরা ভিনদেশী সংস্কৃতিকে গ্রহণ করছি। আমরা মডার্ণ ভ্যালুসগুলো নিচ্ছি কিন্তু‘ সেটাকে পুরোপুরি ব্যবহার করছি না। ফলে এক ধরনের সাংস্কৃতিক ব্যবধান দেখা দিয়েছে। আমরা টেকনোলজি যত দ্রুত গ্রহণ করছি, অনুরূপ মূল্যবোধ আমরা সমানতালে গ্রহণ করতে পারছি না। এর জন্য সময় প্রয়োজন। আমাদের কাছে এখন যেটাকে খারাপ মনে হচ্ছে কয়েক বছর পর সেটাই সংস্কৃতির অংশ হয়ে যাবে। আমেরিকার সমাজে লিভ টুগেদারের সময় সে দেশে নিষিদ্ধের মতো ছিল, যা বর্তমানে স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেছে। আমরা যখন টেকনোলজি ব্যবহার করছি, তখন আমরা বুঝতে পারছি না আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে কতটুকু নেয়া উচিত। দেশের মানুষের জীবনধারা উন্নত হচ্ছে। দিনদিন মানুষের আর্থিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে। ফলে উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের হাতে বাড়তি টাকা যাচ্ছে। এই বাড়তি টাকা তাদের নানা ধরনের নেতিবাচক কাজে যেতে সাহায্য করে। ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলগুলোর বাচ্চাদের মাঝে তথাকথিত আধুনিক সংস্কৃতির জন্ম নিচ্ছে।

আমাদের শহরগুলোতে পর্যাপ্ত খেলার মাঠের সংকট, সাংস্কৃতিক চর্চায় উদ্বুদ্ধ হওয়া, রচনা প্রতিযোগিতাসহ সহ-শিক্ষা কার্যক্রম কিশোরদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে না ওঠায় তারা বিকল্প বিনোদন চর্চা করছে। আমরা আগে স্কুল থেকে এসে বিকালে খেলতে যেতাম, সন্ধ্যার সময় পড়তে বসতাম, রাতে ঘুমাতাম, সকালে উঠতাম এই সেটাপে এখন ছন্দপতন ঘটেছে। পুঁজিবাদী মূল্যবোধও এখানে কাজ করছে। কিশোরদের মধ্যে মাদকতা ছড়াচ্ছে। আমাদের বর্তমান ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম দিয়ে এটা রোধ করা যাবে না। আমাদের পুলিশিং-এর ব্যবস্থা ভালো নয়। অতীত সময় থেকেই পুলিশের মধ্যে রাজনীতিকরণ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি ঢুকে আছে। পুলিশ জনগণের বন্ধু হতে পারেনি, তারা ফোর্স হিসেবেই রয়ে গেছে, সার্ভিস হিসেবে পরিচিত হতে পারেনি। আদালতের বিচার প্রক্রিয়ায় ধীর গতি। আমাদের যে কিশোর অপরাধ সংশোধন কেন্দ্র আছে, তা কতটা আধুনিক, সেখানে কি কি প্রযুক্তি আছে?

আমাদের দেশে মাসুদ রানাসহ বেশ কয়েকটি গোয়েন্দাধর্মী ও রহস্যধর্মী উপন্যাস যখন জনপ্রিয় হয়েছিল তখন কিশোরদের মাঝে গোয়েন্দাগিরি করার এক ধরনের প্রবণতা আমরা দেখেছি। বর্তমানে বিভিন্ন ভয়ংকর ভিডিও গেমস, অ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্র কিশোরদের মাঝে প্রভাব ফেলছে। এগুলো দেখে দেখে তারাও তা অনুকরণ করার চেষ্টা করছে। উত্তরায় এক কিশোর নিহত হওয়ার ঘটনার পিছনে এ ধরনের ডেয়ারিং মানসিকতা কাজ করেছে। স্কুলগুলো অতিমাত্রার বাণিজ্যিকিকরণ হওয়ার কারণে সেখানে সবাই পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছে না। বর্তমানে কিশোরদের জন্য কাউন্সিলিং জরুরি হলেও তাদের কাউন্সিলিং করানো হচ্ছে না। বাবা-মা হয়তো সন্তানকে কাউন্সিলিং কেন্দ্রে নিয়ে যেতে লজ্জাবোধ করছেন। শুরুর দিকেন যদি কিশোরদের সংশোধন করা যায় তবে অনাকাক্সিক্ষত অনেক ঘটনা এড়িয়ে চলা যেত।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034489631652832