পরীক্ষা বাতিলফরম পূরণের টাকা কি ফেরত পাবেন পরীক্ষার্থীরা?

নিজস্ব প্রতিবেদক |

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের পর শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কেউ কেউ ফরম পূরণের টাকা ফেরতের দাবি তুলেছেন। বোর্ডের ফি যা-ই থাকুক ফরম পূরণের ১০/১৫ হাজার টাকাও নিয়েছে অনেক কলেজ। 

তবে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, ফরম পূরণে যে বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে সেই কাজগুলো তারা করেছেন। এতে সেই টাকা খরচ হয়ে গেছে।

ঢাকা কলেজর অধ্যক্ষ নেহাল আহমদ দৈনিক শিক্ষার লাইভে যুক্ত হয়ে বলেছেন, প্রশ্নপত্র বানানো, খাতা কেনাসহ বিভিন্ন কাজে টাকা খরচ হয়ে  গেছে। 

এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা দৈনিক শিক্ষায় ইমেইল ও টেলিফোন করে টাকা ফেরতে দাবি জানান। 

বুধবার (০৭ অক্টোবর) অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি। পরীক্ষা বাতিল করা হলেও জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।

করোনা পরিস্থিতির উৎকণ্ঠা নিয়ে ছয় মাস পর পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত পেল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। মহামারির কারণে শিক্ষার্থীদের অনেকেই পরীক্ষা না দিয়ে অটো পাসের দাবি তুলেছিল। অভিভাবকদেরও কেউ কেউ পরীক্ষা না নেওয়ার পক্ষে মত দেন।

শিক্ষা বোর্ড থেকে জানা যায়, এইচএসসির ফরম পূরণের জন্য গত বছরের নভেম্বরে কেন্দ্র ফি সহ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ২৫০০ টাকা এবং মানবিক ও বাণিজ্য শাখার শিক্ষার্থীদের ১৯৪০ টাকা করে ফি ধরা হয়। এরমধ্যে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের বোর্ড ফি ১৬৯৫ টাকা, মানবিক ও বাণিজ্যে ১৪৯৫ টাকা করে এবং বিজ্ঞানে কেন্দ্র ফি (ব্যবহারিক ফি সহ) ৮০৫ টাকা এবং মানবিক ও বাণিজ্যে ৪৪৫ টাকা করে নেওয়া হয়।

কেন্দ্র ফি থেকে থেকে ট্যাগ অফিসারের সম্মানীসহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করতে বলা হয়। কিন্তু যাদের ব্যবহারিক বিষয় আছে তাদের টাকার সঙ্গে প্রতি পত্রের জন্য আরো ২৫ টাকা করে দিতে হয়েছে। এছাড়া ব্যবহারিক উত্তরপত্র মূল্যায়নে অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত পরীক্ষকের জন্য পত্র প্রতি ২৫ টাকা করে কেটে নেওয়া হয়।

ফরম পূরণের জন্য একজন নিয়মিত শিক্ষার্থীকে প্রতি পত্রের জন্য ১০০ টাকা, ব্যবহারিক প্রতি পত্রের জন্য ২৫ টাকা, একাডেমিক/ট্রান্সক্রিপ্ট ফি ৫০ টাকা, সনদ ফি ১০০ টাকা, রোভার স্কাউট/গার্লস গাইড ফি ১৫ টাকা এবং জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি ৫ টাকা ধরা হয়েছিল।

কিন্তু বাস্তবে কলেজগুলো ফরম ফিলাপের সময় বোর্ডের ধার্য করা ফি’র চাইতে অনেক বেশি টাকা নিয়েছে নানা অজুহাতে। 

এখন পরীক্ষা বাতিলের পর শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের অনেকেই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পর নেওয়া রেজিস্ট্রেশন ফি এবং পরীক্ষার আগে ফরম পূরণের টাকা ফেরত চাচ্ছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএম আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন এবং ফরম ফিলাপ করেছি। এগুলো (টাকা ফেরত) কেন বলছে? অনেকে বলছে কেন্দ্র ফি, কেন্দ্র ফি তো কেন্দ্রে চলে গেছে। আর আমরা তো কাজ করেছি।

আমরা রেজিস্ট্রেশনের কাজ করেছি, ফরম ফিলাপের কাজ করেছি, আমরা ফলাফল দেব, খাতা বানানো হয়েছে, প্রশ্ন তৈরি করেছি। এতে আমাদের সব টাকা তো খরচ হয়ে গেছে। ’

ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘কেউ যদি বলে আমরা কেন্দ্র ফি ফেরত চাই, ঠিক আছে কেন্দ্র ফি ফেরত চাইলে পরীক্ষা দাও! অষ্টমের জেএসসি-জেডিসি এবং মাধ্যমিকের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল থেকে এ বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের ফল দেওয়া হলে তাতে সবাই উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। ’

পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘তোমারা তো সবই পেয়ে যাচ্ছ। আর আমরা তো জায়গায় জায়গায় টাকা খরচ করেছি, এরা এটা বুঝতেছে না। ’

করোনা সংক্রমণের বছরে এত বড় পাবলিক পরীক্ষা না নিয়ে ভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়নকে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেন ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।

এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘যে যাই বলুক দেশের ইতিহাসে কোভিডের এই ক্রিটিক্যাল মোমেন্টে এর‌ চেয়ে যুগান্তকারী ডিসিশন আর হতে পারে না। সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। ’

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘কীভাবে রেজাল্ট দেওয়া হবে, ডে বাই ডে দেখা যাচ্ছে একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ আসতেছে। আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করছি। আগে তো গড্ডালিকা প্রবাহে পরীক্ষা নিয়েছি, এখন একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ আসবে। কোন সাবজেক্ট কীসের ভিত্তিতে মূল্যায়ন, কারিগরিতে যারা আছে, মাদ্রাসা থেকে পাস করে যারা এসেছে সাধারণ বোর্ডে, সাধারণ বোর্ড থেকে গেছে কারিগরিতে। মাদ্রাসা বোর্ডে কীভাবে, কারিগরি বোর্ডে কীভাবে...। জেএসসি রেজাল্ট কত পারসেন্ট ও কীভাবে, এসএসসির কত পারসেন্ট, এগুলো বিশাল ব্যাপার-স্যাপার। আমরা এখন বসতেছি আর একটার পর একটা সমস্যা আসতেছে। সমাধান করতে আমাদের সময় নিতে হবে। ’

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033619403839111