ফের সেশনজটের ফাঁদে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশে দেড় বছরেরও বেশি সময় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। মাত্র কয়েক মাস আগে শিক্ষার্থীরা আবারও ক্লাসরুমে ফিরেছিল। এরই মধ্যে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এসএসসির ফলাফলও প্রকাশিত হয়েছে। আগামী মাসে এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের কথা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছিল। এ অবস্থায় আবারও স্কুল-কলেজ আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একই সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়।

চিঠিতে আরও জানা যায়, করোনাভাইরাসের অমিক্রন ধরনের সংক্রমণের কারণে উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে সরকার গত শুক্রবার এ ঘোষণা দেয়। নতুন বছরে নতুন সংকটের মুখোমুখি শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আবারও হতাশা নেমে এল। কারণ, এরই মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করেছে। কখন সেসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, পাস করে কখন পেশাগত জীবন শুরু করবে, কখন পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

১৯৯২ সালে উচ্চশিক্ষায় সেশনজট নিরসনের কথা বলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল। দীর্ঘ ২৯ বছরে পা রেখেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর ২০১৪ সালে সেশনজট নিরসন হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই পুরোনো সংকট এখন নতুন গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। মহামারির কারণে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জীবনে এখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে—হয়তো এ ছুটি আরও বাড়ানো হবে।

এ করণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আটকে যাওয়া স্নাতক শেষ বর্ষের পরীক্ষা কবে হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে স্নাতক দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার মতো একটা সিদ্ধান্ত কিন্তু আত্মঘাতী, যা দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। করোনার কারণে সৃষ্ট অনেক ক্ষতি হয়তো সময়ের পরিক্রমায় পূরণ হবে, তবে শিক্ষা খাতের ক্ষতি সমাজে ক্ষতচিহ্নের মতো দগদগে হয়ে থাকবে।

করোনা মহামারিকে পরাজিত করা না গেলেও অন্ততপক্ষে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে, যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে আর যেতে না হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে বুদ্ধিবৃত্তিক পুঁজি লাভের দিক থেকে দেশ মৃত হয়ে যায়। দেশভেদে প্রেক্ষাপটের ভিন্নতা অবশ্যম্ভাবী। তবুও বলব, এ মুহূর্তে এসে করোনার কারণে আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ নয়, বরং শিক্ষাদানের পদ্ধতির পরিবর্তন হোক। কেননা, শারীরিক উপস্থিতির পরিবর্তে অনলাইন ক্লাসে যাওয়া যেতে পারে; কিন্তু যেখানে ইন্টারনেটের সুবিধা নেই, সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে চালানো সম্ভব।

পরিশেষে এটাই বলতে চাই, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজটের সংকট দূর করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আগে কলেজগুলোর শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসের আয়োজন করতে হবে। পরীক্ষার প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী পরীক্ষা নিতে হবে। শিক্ষার অধিকার ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক অধিকার চেতনার বিকাশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে গড়ে তুলতে হবে। তাই আমরা চাই, খোলা থাক সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জ্ঞানের প্রবাহ হোক বাধাহীন। এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

লেখক : জেসমিন আক্তার, শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, জয়নাল হাজারী কলেজ, ফেনী


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026180744171143