সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরিবিনা মূল্যের আবেদনে ফি বসছে ২০০ টাকা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির নিয়োগে বিনা মূল্যে আবেদনের ব্যবস্থা তুলে দিয়ে ফি আরোপ করা হচ্ছে। এখন থেকে সরকারি ১২টি ব্যাংক ও দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ আবেদনে ২০০ টাকা করে ফি দিতে হবে চাকরিপ্রত্যাশীদের। উচ্চশিক্ষা শেষ করা চাকরিপ্রত্যাশী বেকারদের ওপর চাপ কমাতে মানবিক দিক বিবেচনায় ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বিনা মূল্যে আবেদনের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয় (বিএসসিএস)। কিন্তু এখন আবারও ফি আরোপ করা হচ্ছে। চাকরিপ্রত্যাশীর আবেদনের এই ফি দিয়ে নিয়োগপ্রক্রিয়ার ব্যয় নির্বাহ হবে। শনিবার (২০ জুলাই) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রফিকুল ইসলাম।

বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক  প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অর্ধেক খরচ জোগান দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক আর অর্ধেক সংশ্লিষ্ট ব্যাংক।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ১২টি ব্যাংক ও দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ আবেদনে ফি নেয়া বন্ধ করা হয়। বিএসসিএস জানায়, নিয়োগে অবাঞ্ছিত ব্যয় বন্ধ করতেই ফি আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন থেকে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সূত্রে আবেদন করতে ২০০ টাকা করে ফি দিতে হবে চাকরিপ্রত্যাশীকে।

বিএসসিএসের এমন সিদ্ধান্তকে চাকরিপ্রত্যাশীরা ‘বোঝার ওপর শাকের আঁটি’র মতো মনে করছে। পড়াশোনা শেষ করা উচ্চশিক্ষিত বেকাররা নানামুখী সমস্যার মধ্যে পড়ে। নিজের চলার খরচ জোগাতেই যেখানে হিমশিম অবস্থা, তার ওপর চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে ফি দেয়া কষ্টদায়ক ও ভোগান্তিও বটে।

এদিকে সচিবালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি প্রতিটি নিয়োগ আবেদনে ফি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু কীভাবে এই টাকা নেয়া হবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় তা বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। ফি নেওয়া-সংক্রান্ত জটিলতায় সরকারি ব্যাংকে জনবল প্রয়োজন ও চাহিদা থাকার পরও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারছে না ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয়। সিনিয়র অফিসার, অফিসার ও ক্যাশ অফিসার পদে তিন থেকে চারটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রস্তুত থাকার পরও প্রকাশ করা হচ্ছে না।

জানা যায়, সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে আবেদনের সুযোগ থাকায় পরীক্ষা দেয়ার কোনো ইচ্ছা না থাকা অনেকেই আবেদন করে। কোনো কোনো পরীক্ষায় আবেদনকারীদের এক-তৃতীয়াংশ পরীক্ষায় অংশই নেয় না। কিন্তু সব আবেদনের বিপরীতেই নিয়োগপ্রক্রিয়ার খরচ বহন করতে হয় কর্তৃপক্ষকে। নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে টেন্ডার আবেদনের মাধ্যমে নৈর্ব্যক্তিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর চূড়ান্ত উত্তীর্ণ তালিকা প্রণয়ন করা হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সবচেয়ে কম দরদাতা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা অনুষদভুক্ত কয়েকটি বিভাগ এবং আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় টেন্ডারের মাধ্যমে বরাদ্দ পেয়ে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, চাকরিপ্রত্যাশী আবেদন করার পরও পরীক্ষায় না বসলে টেন্ডার পাওয়া প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়; কিন্তু বড় ধরনের অপচয় হয় বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট নিয়োগদাতা ব্যাংকের।

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয়ে দায়িত্ব পালনরত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম আরিফ হোসেন খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চাকরিপ্রত্যাশীদের জীবন সহজ করতেই সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ আবেদনে কোনো ফি নেয়া হতো না। কিন্তু এখন আবেদনের সঙ্গে প্রত্যেককেই ২০০ টাকা করে দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সবার সঙ্গে আলোচনা করেই এই ফি ধার্য করা হয়েছে।’ যুক্তি হিসেবে তিনি বলছেন, ‘যত প্রার্থী আবেদন করে তার এক-তৃতীয়াংশই পরীক্ষায় বসে না। মূল প্রার্থীর আবেদনের ভিত্তিতেই পরীক্ষা ব্যবস্থা করতে হয়। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হয়। সত্যিকারের আগ্রহী প্রার্থী বাছাই করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ বিশ্বাস বলেন, “উচ্চশিক্ষা শেষের পর চাকরিপ্রত্যাশীদের এক মহাযুদ্ধে নামতে হয়। শিক্ষাজীবন শেষ করার চার-পাঁচ বছর পরও অনেকের চাকরি হয় না। এমন অনেক বেকারের পরিবার থেকেও টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। অগত্যা টিউশনি করে চলতে হয়। সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ আবেদনে ফি মওকুফ করা উচিত। নিজের জীবন চালাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে ফি দিয়ে পরীক্ষায় আবেদন করা ‘বোঝার ওপর শাকের আঁটি’র মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।”


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028460025787354