বিভিন্ন বাহিনীর ১ হাজার সদস্যের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হচ্ছে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

এবার সেনাসহ বিভিন্ন বাহিনীর গেজেটভুক্ত এক হাজার ২২৬ সদস্যের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে বিজিবির (সাবেক বিডিআর) এক হাজার ১৩৪, সেনাবাহিনীর ৪৪, বিমানবাহিনীর ৩৯ এবং বিমান সেনা ও এমওডিসির (বিমান) ৯ সদস্য রয়েছেন। 

তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন সময়ে এসব বাহিনীতে যোগ দেয়ার সময় নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিয়ে গেজেটভুক্ত হয়েছেন। অথচ তাদের গেজেটভুক্তির কোনো নথি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। শিগগিরই তাদের সনদ বাতিলের বিষয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৬৬তম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর মন্ত্রীর অনুমোদন শেষে গত ১২ জানুয়ারি বিভিন্ন বাহিনীর বাতিল হওয়া সদস্যদের তালিকাসহ ১৪৬ পৃষ্ঠার কার্যবিবরণী মন্ত্রণালয়ে পাঠান জামুকার মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর সেনাসহ বিভিন্ন বাহিনীতে যোগদান করে যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন, তাদের অধিকাংশের কোনো তথ্য-উপাত্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। অথচ তারা গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বছরের বছর ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত জামুকার ৬১তম সভায় স্বাধীনতার পর গেজেটভুক্ত বিভিন্ন বাহিনীর সব মুক্তিযোদ্ধার সনদ যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর তিন দফায় বিভিন্ন বাহিনীর ৯৫ জন সদস্যের সনদ ও গেজেট বাতিল করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সিাংবাদিকদের বলেন, এমন সিদ্ধান্ত নতুন নয়। এটি গত বছরই জামুকার সভায় নেয়া হয়েছিল। আমরা সংশ্নিষ্ট বাহিনীগুলোকে চিঠি দিয়ে স্বাধীনতার পর যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছিল তাদের তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছিল। তাদের পাঠানোর তালিকার ভিত্তিতেই বিভিন্ন বাহিনীর সাড়ে ১১শ'র বেশি সদস্যের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। 

মন্ত্রী বলেন, তারা কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছিলেন, এমন কোনো তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। তিনি জানান, বাতিল হওয়া এসব ব্যক্তি ফের গেজেটভুক্ত হতে চাইলে সেই সুযোগ তাদের দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে তাদের আবেদন ফের উপজেলা ও জামুকায় যাচাই-বাছাই করা হবে। তাতে তারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তথ্য-উপাত্তসহ প্রমাণ করতে পারলে আবারও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হতে পারবেন। মুক্তিযোদ্ধার একটি নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য তালিকা প্রণয়নের জন্যই এসব করা হচ্ছে।

জামুকার ৬৬তম কার্যবিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩ নভেম্বর বিজিবি (সাবেক বিডিআর) থেকে এক হাজার ১৩৪ জনের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এ ছাড়া একই স্মারকে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের পর যেসব অসামরিক কর্মচারী বিমানবাহিনীতে যোগদান করে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে গেজেটভুক্ত হয়েছেন এমন ৩৯ জন এবং বিমান সেনা ও এমওডিসির (বিমান) ৯ জন সদস্যের তালিকাও পাঠানো হয় মন্ত্রণালয়ে। 

অন্যদিকে পৃথক একটি চিঠিতে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় ৪৪ সেনা সদস্যের নাম, যারা একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের পর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে গেজেটভুক্ত হয়েছেন। এ বিষয়ে জামুকার সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়, 'সংশ্নিষ্টরা বিভিন্ন বাহিনীতে যোগদান করে কীভাবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বিধায় তাদের গেজেট বাতিলের বিষয়ে সভায় সম্মানিত সদস্যগণ একমত পোষণ করেন।' সভায় বিমানবাহিনীর ২৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ তথ্য না থাকায় সংশ্নিষ্টদের বিষয়ে বিমানবাহিনী ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ফের চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। 

বিভিন্ন বাহিনীর বাতিল হওয়া সদস্য সেনাসদস্যরা : 
নাটোরের বাগাতিপাড়ার মিশ্রিপাড়া গ্রামের আজম উদ্দিন, সরদার মো. আলতাফ হোসাইন, পাবনার অটোয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম খান, ফরিদপুরের সালথার যদুনন্দি গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ, টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ভাবানীপুর গ্রামের প্রয়াত দেলোয়ার হোসেন, প্রয়াত নবুর আলী, এলেঙ্গা উত্তরপাড়া গ্রামের আজিজুল হক, কস্তুরিপাড়া গ্রামের সিরাজ সিকদার, ভবানীপুর গ্রামের ফজলুল হক, ফুলতলা গ্রামের সোহরাব হোসেন, হাসেম আলী, আউলিয়াবাদ গ্রামের আব্দুর রশিদ, বীরবাসিন্দা গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন, করুয়া গ্রামের আব্দুর রহমান, সখিপুর উপজেলার বেতুয়া মধ্যপাড়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিন, নলুয়া গ্রামের রজব আলী আহমেদ, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার সালামতপুর গ্রামের আব্দুর রশিদ, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের বজলুর রশিদ মোল্লা, নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার ভোমনমারা গ্রামের আজিম উদ্দিন, বেলাব উপজেলার প্রয়াত শওকত আলী, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার লুন্দি গ্রামের প্রয়াত লুৎফুর রহমান, শিবচরের মোজফফরপুর গ্রামের প্রয়াত আব্দুল লতিফ, মানিকগঞ্জ সদরের পশ্চিম বন্দুটিয়া গ্রামের শামসুদ্দিন, সিঙ্গাইরের দাশেরহাটি গ্রামের প্রয়াত আব্দুল কাদের, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মাথাপাড়া গ্রামের মোতালেব মিয়া, মধুখালীর সালামতপুর গ্রামের আব্দুর রশিদ শখ, আলফাডাঙ্গার ধুলজড়ি গ্রামের আব্দুস সাত্তার শেখ, ওলিউর রহমান, বোয়ালমারীর চতুল গ্রামের প্রয়াত রায়হান, খুলনার রূপসা উপজেলার আনন্দনগর গ্রামের ওয়াজেদ আলী, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের কাদিরাবাদ গ্রামের আলী হোসেন খলিফা, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার নন্দিকাঠি গ্রামের আব্দুল হালিম, সদর উপজেলার ভেদুরিয়া গ্রামের এমএ খালেক প্রমুখ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027389526367188