বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ জরুরি

আবু তাহের মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন |

দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ৯৭ শতাংশ শিক্ষা ব্যবস্থা এমপিও (মান্থলি পে অর্ডার) নির্ভর। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত একই সিলেবাসে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান চললেও শিক্ষকদের বেতন-ভাতায় রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে তিন স্তরের পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর একজন প্রার্থী বেসরকারি শিক্ষকতায় আসেন। অথচ প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়ার সময় এবং তৎপরবর্তীকালে তাকে বেতনভুক্ত (এমপিও) হওয়ার জন্য পোহাতে হয় নানা ঝামেলা। এসব শেষ করে যখন তিনি বেতনভুক্ত হন তখন সহকারী শিক্ষক হিসেবে তার বেসিক বেতন হয় ১২ হাজার ৫০০ টাকা, সঙ্গে ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া, ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা ও ১ হাজার টাকা স্পেশাল বেনিফিট। সবমিলিয়ে ১৫ হাজার টাকা। সেখান থেকে আবার বেসিকের ১০ শতাংশ অবসর-কল্যাণ ফান্ডের জন্য কেটে নেয়া হয়। অর্থাৎ সবকিছু কাটছাঁট করার পর তিনি পান ১৩ হাজার ৭৫০ টাকা।

অন্যদিকে একজন প্রভাষক সবকিছু কাটছাঁট করার পর পান ২২ হাজার ৪০০ টাকা। যা দিয়ে একজন শিক্ষককের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে উঠে। ফলে তাকে শিক্ষকতার পাশাপাশি অন্য সোর্স থেকেও আয় করতে হয়, অবশ্যই সবার বেলায় তেমন সুযোগ থাকে না। এতে শিক্ষকতায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। এছাড়াও দুই ঈদে সহকারী শিক্ষকরা উৎসব ভাতা পান মাত্র ৩ হাজার ১২৫ টাকা এবং প্রভাষকরা পান ৫ হাজার ৫০০ টাকা। যা দিয়ে তাদের পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার সুযোগ থাকে না।

অথচ সরকারি স্কুলে বা সমগ্রেডের যেকোনো চাকরিতে বেসিকের পাশাপাশি ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাসা ভাড়া এবং শতভাগ উৎসব ভাতা দেয়া হয়। ফলে মেধাবীরা বেসরকারি শিক্ষক হিসেবে আসতে আগ্রহী হন না। যার প্রমাণ মিলে বিগত গণবিজ্ঞপ্তি গুলোতে। যেখানে শূন্যপদের বিপরীতে ৩০ শতাংশও পূরণ হয়নি। এতে শিক্ষক সংকটে শিক্ষা সেক্টর দিনদিন পিছিয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া বর্তমানে সরকারি স্কুল-কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা। অথচ সেখানে বেসরকারি স্কুল-কলেজে নেয়া হচ্ছে ২৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। ফলে উচ্চ দ্রব্যমূল্যের বাজারে লোকজন তাদের ছেলে-মেয়েদের ভালো স্কুল-কলেজে পড়াতে হিমশিম খাচ্ছেন। 

গতবছরের জুলাই মাসে বেসরকারি শিক্ষকরা শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে টানা ২২ দিন আন্দোলন করেন। ওইসময় তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক উপদেষ্টা কবির বিন আনোয়ার শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তারা জাতীয়করণ না হলেও বেতন-ভাতা বাড়ানোর আশ্বাস দেন। অথচ এর পরে একবছর পার হলেও কোনো কিছুই বাস্তবায়ন করা হয়নি। উল্টো শিক্ষকদের ছুটি কাটছাঁট করা হয়েছে। এতে শিক্ষক সমাজের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

তবে অন্তর্বর্তীকালীন নতুন সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর শিক্ষকরা আবার আশায় বুক বেঁধেছেন। শিক্ষকদের দাবি, সরকার প্রতিষ্ঠানের আয় কোষাগারে নিয়ে সেটা দিয়ে জাতীয়করণ করলে এতবেশি ব্যয় করতে হবে না। এতে শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি- বেতন ভাতা বৃদ্ধি, শতভাগ উৎসব ভাতা, ইএফটিতে বেতন প্রদান ও বদলি চালু হবে এবং কমিটি প্রথার বিলোপ ঘটবে। ফলে শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি মেধাবীরা শিক্ষকতার প্রতি আগ্রহী হবেন। এতে বৈষম্যহীন মেধাভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথ সুগম হবে।

লেখক: প্রভাষক 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল - dainik shiksha জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় - dainik shiksha শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050129890441895