বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রমের স্থবিরতা দূর করুন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশে ২৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর ৩৭ শতাংশই নিরক্ষর। অর্থাৎ গোটা শ্রমশক্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি এখন অক্ষরজ্ঞানহীন। অন্যদিকে এ নিরক্ষরতাকেই আবার দায়ী করা হয় কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর বেকারত্বের কারণ হিসেবে। তার পরও পঁচিশোর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ নিরক্ষর রেখেই প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম। পঁচিশোর্ধ্ব কর্মক্ষম এ জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরতার আওতায় আনতে নেয়া হচ্ছে না পর্যাপ্ত বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম। গত দুই দশকে দেশে বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রমে মাত্র একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। সে প্রকল্পটির এখনও বাস্তবায়ন শেষ হয়নি। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, বয়স্ক শিক্ষায় স্থবিরতার বিষয়টি অত্যন্ত হতাশাজনক। দেশে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে বয়স্কদের শিক্ষার বড় কোন উদ্যোগ নেই। একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে- অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণেই বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অর্থ সংকট। সরকার যখন সার্বিক সাক্ষরতা কর্মসূচি নিল, তখন প্রজ্ঞাপন দিয়ে এনজিওগুলোকে বয়স্ক শিক্ষার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হলো। এরপর সে প্রকল্পে লুটপাটের অভিযোগে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদফতর বন্ধ হলো। এরপর সরকারি-বেসরকারি কোন খাত থেকেই বড় উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অথচ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বয়স্ক শিক্ষায় অংশগ্রহণ ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। এ নিয়ে সতর্কবার্তাও এসেছে ইউনেস্কোর তরফ থেকে। প্রশ্ন হলো, বয়স্কদের নিরক্ষরতা মুক্তির বিষয়ে সরকারের কি কোন দায়বদ্ধতা নেই? অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধ করে এ খাতটি চাঙ্গা করতে সরকারি পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না কেন?

সাক্ষরতা মানে যে শুধু নাম দস্তখত শেখা বা ঠিকানা তা লেখা নয়। কর্মক্ষম মানুষকে লেখাপড়ার পাশাপাশি সব ধরনের শোষণ-বঞ্চনার হাত থেকে মুক্ত করে, তাকে দক্ষতাসম্পন্ন আত্মনির্ভরশীল মানুষে পরিণত করাই ছিল সাক্ষরতার মূল লক্ষ্য। সম্প্রতি অনেক দেশই সাক্ষরতার সঙ্গে জীবনব্যাপী শিক্ষার সম্মিলন ঘটিয়ে মানুষকে উৎপাদনশীল জনসম্পদে পরিণত করার ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। ফিলিপাইন, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতের কেরালা কিংবা তামিলনাড়– তাদের সাক্ষরতার হার নব্বইয়ের উপরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। অথচ বিগত দশকে বাংলাদেশে বয়স্ক সাক্ষরতা কার্যক্রম সম্প্রসারিত না হয়ে বরং সঙ্কুচিত হয়েছে। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক।

ইউনেস্কোর সতর্কতার বিষয়টিকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করা অপরিহার্য। বয়স্ক শিক্ষায় সবার সুযোগ ও সুবিধা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে বয়স্ক সাক্ষরতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পুরুষের চেয়ে নারীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে, এ বিষয়টি কোনভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। সরকারের উচিত শুধু প্রকল্পভিত্তিক না করে, সঠিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে কর্মসূচি গ্রহণ করা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বয়স্ক শিক্ষার প্রকল্পে বিভিন্ন দক্ষতামূলক কর্মসূচি যোগ করে দেয়া হয়, যাতে তারা আগ্রহী হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ করা যেতে পারে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029761791229248