মাস্টারদা সূর্যসেনের জন্মদিন আজ

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের প্রধান সংগঠক মাস্টারদা সূর্যসেন এর আজ জন্মদিন। তিনি ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম সূর্যকুমার সেন। ডাক নাম কালু। বাবা রাজমনি সেন এবং মা শশীবালা দেবী। স্থানীয় দয়াময়ী বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষার পর নোয়াপাড়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন এবং ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন।

সূর্যসেন যখন নোয়াপাড়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের ছাত্র তখন বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে বাংলায় স্বদেশী আন্দোলন শুরু হয়। ক্রমে এই আন্দোলন বিপ্লবী আন্দোলনে রূপ নেয়।

১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর কৃঞ্চনাথ কলেজে বিএ পড়ার সময় তিনি তার এক শিক্ষক শতীশচন্দ্র চক্রবর্তী কর্তৃক বৈপ্লবিক আদর্শে দীক্ষিত হন। অধ্যাপক শতীশচন্দ্র চক্রবর্তী যুগান্তর নামক বিপ্লবী দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামে ফিরে গিয়ে ব্রিটিশ বিরোধী একটা বিপ্লবী দল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। সূর্যসেন ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামে ফিরে বিপ্লবী যুগান্তর দলকে পুনরুজ্জীবিত করেন। আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে তিনি ‘ন্যাশনাল স্কুল’-এ শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষকতা করার কারণে তিনি পরিচিত মহলে ‘মাস্টারদা’ আখ্যা পান। চট্টগ্রামে তখন বিপ্লবী দলে কাজ করতেন আম্বিকা চক্রবর্তী, অনুরূপ সেন, নগেন সেন (জুলু সেন), চারুবিকাশ দত্তসহ আরো অনেকে। কিন্তু তাদের তৎপরতা ছিলো সীমিত পর্যায়ের। বাংলাদেশে বিপ্লবীরা তখন অনুশীলন ও যুগান্তর  এই দুই দলে বিভক্ত ছিলেন। বহরমপুর থেকে ফিরে এসে সূর্যসেন যুগান্তর দলে যোগ দিয়ে সংগঠনটিকে সক্রিয় করে তোলেন এবং বিবাদমান দল দুইটিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন। ক্রমেই তার দল চট্টগ্রামে সক্রিয় হয়ে ওঠে। 

১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামের জেলা কংগ্রেসের সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। এতে সূর্যসেন সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। একই বছর ১৩ সেপ্টেম্বর লাহোর জেলে একটানা ৬৩ দিন অনশন করে বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মারা যান। এর প্রতিক্রিয়ায় সারা বাংলায় প্রচন্ড বিক্ষোভ দেখা দেয়। বিক্ষোভ মিছিল ও সভায় নেতা সূর্যসেন বিপ্লবের পরবর্তী কার্যক্রমের পরিকল্পনা সদস্যদের সামনে তুলে ধরেন। বিপ্লবীরা স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করার শপথ নেন। এর জন্য তারা ‘মৃত্যুর কর্মসূচি’ ঘোষণা করেন।

প্রাথমিকভাবে হামলার দিন নির্ধারণ করা হয় ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু পুলিশী তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় এর তারিখ পিছিয়ে যায়। এ সময়েই গঠিত হয় সূর্যসেন এর গোয়েন্দা দল। গোয়েন্দা দলের বিপ্লবীরা চট্টগ্রামে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তাদের প্রস্ত্ততি চলে। সূর্যসেন গোপনে ইস্তেহার প্রচার করেন। এতে তিনি কৌশল হিসেবে প্রচার করেন যে, ২১ এপ্রিল চট্টগ্রাম শহরের গান্ধী ময়দানে বিপ্লবীরা নিষিদ্ধ পুস্তক পাঠ করে আইন অমান্য করবেন। এতে সূর্যসেনসহ আরো কয়েকজন বিপ্লবীর নাম ছাপা হয়। কর্মসূচির প্রকৃত তারিখ ছিলো ১৮ এপ্রিল।

১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ এপ্রিলের সশস্ত্র বিদ্রোহ ছিলো সূর্যসেনের নেতৃত্বে বিপ্লবীদের দীর্ঘ সময়ের প্রস্ত্ততি ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার ফসল। প্রাথমিক পর্যায়ে অহিংস ও নিয়মতান্ত্রিক পথ ধরে বিপ্লবের সূচনা হলেও সময়ের ব্যবধানে সংগ্রামের অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে হিংসাত্মক কর্মনীতি বা বিপ্লববাদ দেখা দেয়। 
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জুলাই সরকার চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলা চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইবুনালে শুরু করে। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে মাস্টারদা প্রীতিলতা ও কল্পনা দত্তকে বোমা সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম কারাগার ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেবার নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু সে পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। এই ঘটনায় ১১ জন বিপ্লবী গ্রেফতার হন। ২৪ সেপ্টেম্বর তারিখে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাবে সফল আক্রমণ চালান, তবে তিনি গুলিবিদ্ধ হন এবং সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

এ ঘটনার পরে মাস্টারদা পটিয়ার নিকটে গৈরালা গ্রামে আত্মগোপন করেন। কিন্তু গ্রামবাসীদের একজন সূর্যসেনের লুকিয়ে থাকার তথ্য পুলিশকে জানিয়ে দেয়। ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে একদল গোর্খা সৈন্য গোপন স্থানটি ঘিরে ফেলে। সৈন্যবেষ্টনী ভেঙ্গে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সূর্যসেন ধরা পড়েন। সঙ্গে ছিলেন কল্পনা দত্ত, শান্তি চক্রবর্তী, সুশীল দাস গুপ্ত ও মনিলাল দত্ত সহ আরও কয়েকজন বিপ্লবী।

‘যুগান্তর’ দলের চট্টগ্রাম শাখার নতুন সভাপতি তারকেশ্বর দস্তিদার সূর্যসেনকে চট্টগ্রাম জেল থেকে ছিনিয়ে আনার প্রস্ততি নেন। কিন্তু পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়। তারকেশ্বর এর সঙ্গে আরো কয়েকজন গ্রেপ্তার হন। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে সূর্যসেন, তারকেশ্বর দস্তিদার এবং কল্পনা দত্তের বিশেষ আদালতে বিচার হয়। ১৪ আগস্ট সূর্যসেন ও তারেকেশ্বর দস্তিদার এর ফাঁসির রায় হয় এবং কল্পনা দত্তের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কারাগারে উভয়ের ফাঁসি কার্যকর হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে - dainik shiksha একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে ভর্তি পরামর্শ: কলেজ পছন্দ জরুরি - dainik shiksha ভর্তি পরামর্শ: কলেজ পছন্দ জরুরি শিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচনী হাটে এমপিও শিক্ষকের কপাল ফাটে - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচনী হাটে এমপিও শিক্ষকের কপাল ফাটে অন্ত*র্বাসে লুকানো ডিভাইস, ১০ মিনিটেই শেষ পরীক্ষা - dainik shiksha অন্ত*র্বাসে লুকানো ডিভাইস, ১০ মিনিটেই শেষ পরীক্ষা ১৩ শিক্ষকের ১৪ শিক্ষার্থী, সবাই ফেল - dainik shiksha ১৩ শিক্ষকের ১৪ শিক্ষার্থী, সবাই ফেল সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে - dainik shiksha সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর - dainik shiksha এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00319504737854