মিন্নিকে নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পুলিশ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দেয়ার ব্যাপারে পুলিশের তড়িঘড়ি মনোভাব এখন অনেকটা সংযত। মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এখন আর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চান না। উচ্চ আদালত এই মামলার বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়ার পর পুলিশ এখন সতর্ক রয়েছে। শনিবার (২৪ আগস্ট) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার সময় স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা যেভাবে স্বামীকে রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন, তা সিসিটিভিতে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে। কিন্তু হামলাকারীদের বাদ দিয়ে পুলিশ কেন আয়শাকে ফাঁসানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে, তা কারও কাছেই স্পষ্ট নয়। এখন আয়শাকে মামলার প্রধান আসামি না হুকুমের আসামি করা হবে, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

জেলা পুলিশের সূত্র জানায়, উচ্চ আদালত থেকে এই মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাওয়ার পর অভিযোগপত্র (চার্জশিট) তৈরির ক্ষেত্রে বুঝে–শুনে এগোচ্ছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। মিন্নিকে কোন ধরনের আসামি করা হবে, সে ব্যাপারে আইনি মতামত নেয়ারও প্রক্রিয়া চলছে।

রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাকে কেন জামিন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তাকে মামলার নথিপত্রসহ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

জামিন প্রশ্নে রুল শুনানির জন্য ২৮ আগস্ট দিন ধার্য রেখেছেন আদালত। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত মঙ্গলবার দুপুরে এই আদেশ দেন।

আয়শা সিদ্দিকা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার আগে বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন গত ১৮ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে আয়শার সংশ্লিষ্টতার কথা জানান। সে বিষয়েও এসপির লিখিত বক্তব্য চেয়েছেন আদালত।

জেলা পুলিশের সূত্রটি জানায়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা থানার পরিদর্শক হুমায়ন কবির ২৮ আগস্ট উচ্চ আদালতে মামলার নথি উপস্থাপনের জন্য বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তাঁর সঙ্গে আছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানও। এর আগে পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির অভিযোগপত্র তৈরির ব্যাপারে উচ্চপর্যায়ের মতামত নিতে বেশ কিছুদিন ঢাকায় ছিলেন। তাঁরা বরগুনায় ফিরে যখন অভিযোগপত্র প্রস্তুতের উদ্যোগ শুরু করেন, তখনই উচ্চ আদালত রুল দেন।

আয়শার হয়ে আইনি সহায়তা দেয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বিভিন্ন চাপে আয়শা ও তাঁর পরিবার প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে ছিল। স্থানীয় আদালতে আয়শার পক্ষে কোনো আইনজীবীও ছিলেন না। এই অবস্থায় ঢাকা ও বরিশাল থেকে আইনজীবী পাঠিয়ে আয়শাকে আইনি সহায়তা দেয়া হয়েছে।

অভিযোগপত্রে আয়শাকে আসামি করার ব্যাপারে জেড আই খান বলেন, রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার প্রধান সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকাকে আসামি করা হলে মামলার মান নষ্ট হয়ে যাবে।

আয়শার পক্ষে লড়াই করা এই আইনজীবী মনে করেন, মামলায় আয়শাকে আসামি করার জন্য পুলিশ তড়িঘড়ি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়ার ব্যাপারে প্রস্তুতি নিলেও সম্প্রতি উচ্চ আদালত বিষয়টি নিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্টদের কাছে ব্যাখ্যা তলব করায় পুলিশ বিষয়টি নিয়ে এখন অনেকটা সংযত।

জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, মামলার তদন্তে যেভাবে আসবে সেভাবেই তাঁর (মিন্নি) নাম অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

গত ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন রিফাত শরীফকে। পরে তিনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয় রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নিকে। কিন্তু মিন্নির শ্বশুর মামলা দায়েরের ১৮ দিন পর গত ১৩ জুলাই এই হত্যাকাণ্ডে আয়শা জড়িত—এমন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করার পর মামলার তদন্ত নাটকীয় মোড় নেয়। সংবাদ সম্মেলনের পরদিন আয়শার গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন তাঁরা। সমাবেশে রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ ছাড়াও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ও স্থানীয় সাংসদের ছেলে সুনাম দেবনাথ বক্তৃতা দেন। ১৬ জুলাই আয়শাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

এই মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মামলার দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজীকে পুলিশ ৩ জুলাই গ্রেফতার দেখায়।

পুলিশ জানায়, এই মামলায় এ পর্যন্ত ১৫ জন গ্রেফতার হয়েছেন। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত ৮ জন এবং সন্দেহভাজন ৭ জন। তাঁরা সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আয়শা তাঁর জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য যে আবেদন করেছেন, তা শুনানির অপেক্ষায় আছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.005486011505127