মৃত ছাত্রের উপবৃত্তির টাকা লুট!

মিরাজ খান, নড়াইল প্রতিনিধি |

মৃত ছাত্রের নামে উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করে তা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে নড়াইল সদর উপজেলার হবখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে। এতে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে ২৪ আগষ্ট সদর থানা শিক্ষা অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেয়া হয়েছে।

ঘটনা জানাজানি হলে ম্যানেজিং কমিটির চাপে একমাস পরে ওই টাকা রাতের অন্ধকারে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ অনুযায়ী, হবখালী ইউনিয়নে সাধুখালী গ্রামের দিনমজুর আকতার মোল্যার দুই ছেলে আনিছুর রহমান ৩য় শ্রেণিতে আর  হাসিবুল ২য় শ্রেণিতে পড়তো। এর মধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আনিছুর রহমান সাপের কামড়ে মারা যায়।

গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বার মাসের উপবৃত্তির টাকা প্রদানের দিন ধার্য হয় ১৭ জুলাই। ওইদিন দুই ছেলের উপবৃত্তির টাকা তুলতে স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক উপবৃত্তি রেজিষ্টারে দুই নামে সই করায়ে একজনের টাকা দেন।

তখন প্রধান শিক্ষককে আকতার হোসেন প্রশ্ন করলে জবাব দেন “ওর টাকা আসেনি ”এই বলে।

দুটি স্থানে স্বাক্ষর করে একজনের টাকা পাওয়ায় সন্দেহ হয় অভিভাবকের। তিনি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবদুর রহমানকে ঘটনাটি অবগত করলে স্থানীয় হবখালী কৃষি ব্যাংকে খোজ করে মৃত ছাত্র আনিসের নামে উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের খবর জানতে পারেন।

মৃত শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত করায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা হতে থাকে। ১০ আগষ্ট স্কুলেল ম্যানেজিং কমিটির  সদস্য সবুর ফকির প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে ওই ছাত্রের টাকা দেবার কথা বললে, প্রধান শিক্ষক আমিনুর রহমান বলেন, ওর (আনিছুর) নামে কোন টাকা আসেনি। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এলাকাবাসী।

শনিবার (২০আগস্ট) তারা স্কুলের ম্যানিজিং কমিটিসহ স্কুল ঘেরাওয়ের আয়োজন করলে ১৯ আগষ্ট রাতে প্রধান শিক্ষক আকতারের বাড়ি গিয়ে উপবৃত্তির ৬’শ টাকা দিয়ে আসেন এবং আর বাড়াবাড়ি না করার জন্য বলেন।

আকতার হোসেন বলেন, টাকা না আসলে তো আমরা টাকা দাবি করতাম না, কিন্তু আমার মরা ছেলের নামে টাকা হেডস্যার কোন আক্কেলে মেরে দিয়েছিলেন তা আমার মাথায় আসেনা।

হবখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক, অভিযোগ পেয়ে আমি প্রধান শিক্ষককে একাধিকবার বললেও তিনি আমাকে মিথ্যা বলেছেন। গত ফেব্রুয়ারী মাস থেকে এ পর্যন্ত ৬ মাসে একটিও সভা হয়নি। তিনি যা করেছেন তা একাই করেছেন এবং এর দ্বায়দ্বায়িত্ব সম্পূর্ন তার। এতে স্কুলের ভাবমূর্তি অনেকটাই নষ্ট হয়েছে।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, টাকা তো ব্যাংকের লোকের মাধ্যমে দেয়া হয়,আমি নিজে কিছু দেই না,তবে ওই টাকাটা পরে দেয়া হয়েছে। টাকা না আসার কথা বলার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

হবখালী কৃষিব্যাংক ব্যবস্থাপক নিজামউদ্দিন বলেন,একই দিনে আরো ৪টি স্কুলে উপবৃত্তির টাকা বিতরনের কথা ছিলো। সেদিন অনেক ভীড় হওয়ায় রাত ১০টার দিকে ব্যাংকের লোকেরা কিছু টাকা প্রধান শিক্ষকের কাছে দিয়ে আসে। তবে যে টাকার অভিযোগ উঠেছে তা পরে পরিশোধ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে নড়াইল সদর থানা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, মৃত ছাত্রের টাকা উত্তোলন করে তা প্রদান না করা অমার্জনীয় অপরাধ। অভিযোগ পাওয়া গেছে ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028929710388184