মেডিক্যালের উত্তরপত্র ছেঁড়ার অভিযোগ: বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

চলতি বছর মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষায় এক শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগের ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। হুমাইরা ইসলাম ছোঁয়া নামের ওই শিক্ষার্থী যখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলেন তখন তার ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা ব্যক্তিই ছিলেন তদন্ত কমিটির প্রধান। এ কারণে এই তদন্তে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে সন্দিহান ঐ ছাত্রীর বাবা। তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে, শিক্ষার্থী ও তার পরিবারকে আজ সোমবার দেখা করার জন্য ডেকেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।

এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র যদি ছিঁড়ে ফেলা হয়, সেটা ফৌজদারি অপরাধ। কারণ এই পরীক্ষাটা একজন শিক্ষার্থীর জীবনের প্রশ্ন। সত্যি যদি এমন ঘটনা হয়ে থাকে, তাহলে ঐ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। উত্তরপত্র ছেঁড়ার অধিকার তাকে কে দিয়েছে? কেউ পরীক্ষার রুমে অপরাধ করলে তিনি খাতা নিয়ে সুপারভাইজারকে জানাতে পারতেন। অপরাধ করলে তিনি প্রয়োজনী পদক্ষেপ নিতেন।

সে দিন কী ঘটেছিল : হুমাইরা জানান, তিনি মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শেখ কামাল ভবনের অষ্টম তলার ৮২৩ নম্বর কক্ষে। পরীক্ষা শুরুর প্রায় ৪০ মিনিট পর তার পাশের ডেস্কে বসা এক পরীক্ষার্থীর থেকে ইলেকট্রনিক ডিভাইস জব্দ করেন পরীক্ষক ঐ নারী। সঙ্গে সঙ্গে ঐ পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলেন তিনি। এক পর্যায়ে তিনি হুমাইরার উত্তরপত্রও কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন। পরে তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করে তাকে নতুন একটি ওএমআর শিট দেন। তবে তখন সময় হাতে ছিল মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি। এত অল্প সময়ে আর উত্তর দেওয়া সম্ভব ছিল না। অথচ যখন তার উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলা হয় তখন তিনি ৭৫টি উত্তর দিয়ে ফেলেছিলেন। হুমাইরা বলেন, কক্ষের দায়িত্বে থাকা পরীক্ষকের খামখেয়ালিপনা ও ভুলের শিকার হয়েছেন তিনি। ঐ রুমের আরেক জন অর্থাত্ মোট তিন জন শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলা হয়। ঐ কক্ষে পরীক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিত্সক ডা. নাফিসা ইসলাম। 

বিচার চাইতে গিয়ে নাজেহাল : উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ জানাতে গত রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গিয়েছিলেন হুমাইরা, তার বাবা ও পরিবারের সদস্যরা। হুমাইরার ভগ্নীপতি ডা. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, অধিদপ্তরের বেশ কয়েক জন আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। আমাদের গায়ে হাত তুলেছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক কাজী আফজালুর রহমান। বিভিন্ন ভিডিওতেও সেটা ধরা পড়েছে। দুঃখজনক বিষয় হলো, তাকেই করা হয় এই ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রধান। ফলে এই কমিটির রিপোর্ট কী হবে—তা সহজেই অনুমান করা যায়।

হুমাইরার বাবা মাসুদ রানা বলেন, আমার মেয়ে গত বছর মেডিক্যালে চান্স পায়নি। ফলে সে কোথাও ভর্তি না হয়ে দিনরাত পড়াশোনা করে এবার ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। অথচ তার সঙ্গে এমন অমানবিক ঘটনা ঘটল। এতে তার মেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। আমি মনে করি, বিচার বিভাগীয় তদন্ত হলেই সঠিক তথ্য বের হয়ে আসবে। এই কমিটির ওপর আমাদের কোনো আস্থা নেই।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর যা বলছে : স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা বলেন, ঘটনাটি আমরা জানার পরপরই স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক কাজী আফজালুর রহমানকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়। কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয় রিপোর্ট দেখে ব্যবস্থা নেবেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওখানে এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ঐ শিক্ষার্থীর অভিযোগ মিথ্যা।’

এদিকে, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত চিকিত্সক নাফিসা ইসলামকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে সাংবাদিকরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলা কিংবা কোনো পরীক্ষার্থীর কাছে ইলেকট্রিক ডিভাইস পাওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।  আমাকে যতটুকু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, আমি ততটুকু পালন করেছি। কারো ওএমআর শিটও পরিবর্তন করে দেওয়া হয়নি বলে তিনি দাবি করেছেন।

ঘটনার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছিলেন, আমি দেখব মেয়েটির সঙ্গে যাতে কোনো অন্যায় না হয়।

প্রসঙ্গত, মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল যে প্রকাশ হয়েছে সেখানে ৯ দশমিক ৫ নম্বর পেয়েছেন হুমাইরা। হুমাইরা জানিয়েছেন, পরীক্ষা শেষ হওয়ার মাত্র পাঁচ মিনিট আগে তাকে যে নতুন শিট দেওয়া হয়েছিল তাতে মাত্র অল্প কয়েকটি উত্তর দিতে পেরেছিলেন তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
১৮তম প্রিলির ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ - dainik shiksha ১৮তম প্রিলির ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৫ হাজার ৪৫৬ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৫ হাজার ৪৫৬ সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন - dainik shiksha সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ - dainik shiksha শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল - dainik shiksha শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054569244384766