মেধায় বিশ্বজয়

এসএম জাকির হোসাইন |
jakir
এসএম জাকির হোসাইন

সাড়ে ৪ বছর বয়সেও যে ছেলেটি কথা বলতে পারত না, যে ছেলেটি পড়াশোনায় ছিল পিছিয়ে, অমনোযোগী-আনমনা, স্কুল থেকে প্রায়ই এমন অভিযোগ আসত, যে ছেলেটি স্কুলজীবনে প্রথমবার পরীক্ষায় পাসই করতে পারেনি বলে আরও একটি বছর নষ্ট করে পাস করতে হয়েছিল, মজার বিষয় হলো সেই ছেলেটিই শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ প্রতিভাবান ব্যক্তি হিসেবে সভ্যতার ইতিহাসে জায়গা করে নিল। তার ভেতরের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে পেরেছিল বলেই তিনি বিশ্বজয়ী হয়েছিলেন।

এখন বিশ্বের অল্প শিক্ষিত লোকমাত্রও মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের নামটি জানেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না আইনস্টাইনের ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে চাকরি পেতে কষ্ট হলেও ১৯২১ সালে ঠিকই পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। এটাই হলো মেধার স্বীকৃতি। আইনস্টাইন এত মেধাবী ছিলেন যে তার নিরবচ্ছিন্ন গবেষণার জন্য একটি ল্যাব তৈরি করতে গিয়ে কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করেছিল, আপনার ল্যাবে গবেষণার জন্য কী ধরনের টুলস দরকার? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, একটা টেবিল আর বড় দেখে একটা বাস্কেট, যাতে থিওরি লেখার সময় বাতিল হওয়া পাতাগুলো ঝুড়িতে রাখতে পারি। সেই আইনস্টাইনের এত প্রতিভার উৎস খুঁজতে গিয়ে মৃত্যুর পরও তার ব্রেইন নিয়ে গবেষণা হয়েছে বিস্তর।

স্টিফেন হকিংয়ের কথা আমরা সবাই জানি। এই মানুষটির শুধু একটি আঙুল সচল আছে বর্তমানে। দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে যৌবন শেষ হওয়ার আগেই তাকে হুইলচেয়ারে আশ্রয় নিতে হয়েছে; কিন্তু তাতে থেমে নেই তিনি। মহাবিশ্ব নিয়ে নতুন নতুন তত্ত্ব দিয়ে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। যাকে আইনস্টাইনের মতোই মহান বিজ্ঞানী মনে করা হয়। তিনিও তো কঠিন সব বাধা অতিক্রম করে বিশ্বজয় করে নিয়েছেন। স্টিভ জবসকে দরিদ্রতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হয়েছিল। এমনকি একবেলা ভালো খাবারের জন্য সপ্তাহান্তে মাইলের পর মাইল হেটে গির্জায় যেতেন। সেদিনের সেই ক্ষুধার্ত ছেলেটি বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছেন সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন অ্যাপেল ফোন, অ্যাপেল ল্যাপটপসহ আরও অসংখ্য প্রযুক্তি। আমরা বলতেই পারি, তিনি তার মেধা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা দিয়ে বিশ্বজয়ী হয়েছেন।

বিল গেটসের একটি বয়ান আমার খুবই প্রিয়। ক্লাসের যে ছেলেটি ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম হতো সে এখন মাইক্রোসফট কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট। আর যে ছেলেটি এসবের অত্যাচারে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছিল সেই ছেলেটি ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। বিল গেটসের লক্ষ্য ছিল ৩০ বছর বয়সে মিলিয়নেয়ার হওয়া; কিন্তু ৩১ বছরেই তিনি হয়ে গেলেন বিলিয়নেয়ার। মাইক্রোসফট কোম্পানি তার হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয়। জাকারবার্গের কথাই ধরি না কেন। ফেসবুক ব্যবহার করলে অনেক সময় বাবা-মার বকা খেতে হয়। অথচ সেই ফেসবুক আবিষ্কার করে বিশ্ববাসীর মন জয় করেছেন জাকারবার্গ। তিনি এখন বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন। বছর দুয়েক আগে আমাদের যে ছেলেটি বাড়ি থেকে ৪৩ কিলোমিটার দূরের একটি মাঠে ক্রিকেট বল প্র্যাকটিস করতে যেত, তখন কে জানত যে এই ছেলেটিই একদিন বল হাতে জয় করবে বিশ্ব? বাংলাদেশি বাঙালি বিজ্ঞানী জাহিদ হাসানকে বিশ্ববাসীর সামনে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। টানা ৮৭ বছর যাবৎ তামাম দুনিয়ার বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী যে ভাইল ফার্মিয়ন কণার অস্তিত্ব খোঁজে বেড়াচ্ছেন আর সেটা আবিষ্কার হলো এই জাহিদ হাসানের হাত ধরে। তার এ আবিষ্কার বিজ্ঞানের জগতে আলোড়ন তুলেছে।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া সেদিনের সেই খোকা যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হয়ে বিশ্বের ইতিহাসে নাম লেখাবেন সেটাই-বা কে জানত। কেইবা জানত রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অধিকারী মানুষটি জন্ম দেবে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের। তার কল্যাণেই আমরা আজ বিশ্বমানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। কিছু দিন আগে বিখ্যাত ফরচুন ম্যাগাজিন বিশ্বের ৫০ জন মহান নেতার নামের তালিকা প্রকাশ করে। সেখানে উঠে আসে বঙ্গবন্ধুতনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার নাম। প্রতি মুহূর্তে তিনি দেশ পরিচালনায় তার মেধার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নত বিশ্বের অভিমুখে। যারা এক সময় বাংলাদেশকে খেতাব দিয়েছিল তলাবিহীন ঝুড়ি, তারাই এখন বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও সাফল্য দেখে চমকে যাচ্ছেন। নিজের দুই সন্তানকে সুশিক্ষা দিয়ে মানুষ করেছেন। একমাত্র ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার একমাত্র মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল জাতিসংঘের হয়ে অটিজমে আক্রান্ত শিশুর জন্য কাজ করে বিশ্বদরবারে প্রশংসিত হচ্ছেন।

বঙ্গবন্ধুর আরেক নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের বিরোধী দলের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তার ছেলেমেয়েরা যে খোদ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হবে না সেটাই-বা কে বলতে পারেন? আমি দেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন ক্ষুদ্র কর্মী ও জাতির পিতা আদর্শের অনুগত সৈনিক হিসেবে লক্ষ্য করেছি, এবার মোট ১৬ লাখ ৫১ হাজার শিক্ষার্থী এসএসসি ও মাদ্রাসার অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এদের মধ্যে পাস করেছে ১১ লাখ ৫৩ হাজার। এদের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার পরীক্ষার্থী।

বর্তমানে বিভিন্ন কলেজে অনলাইনে ভর্তি কাজ চলছে। ভর্তি সম্পন্ন হলে কিছুদিনের মধ্যে এসব মাধ্যমিক পাস শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হবে উচ্চ মাধ্যমিকের বিদ্যায়তন। স্কুল পাস করে কলেজের চৌকাঠ মারাবে এ স্বপ্নটা সব শিক্ষার্থীই দেখে। আবার এসব শিক্ষার্থী কলেজ জীবন শেষে ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবে এই স্বপ্নে তারা বিভোর থাকে। এই সময়টাতেই স্বপ্ন দেখতে হবে বিশ্বজয়ের। কারও যদি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড, কেমব্রিজ, মেসাচুসেটস কিংবা অক্সফোর্ডে পড়ার স্বপ্ন থাকে, তাহলে তাকে কলেজ জীবন থেকেই নিজেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপযোগী করে প্রস্তুত করতে হবে। কলেজ জীবনটাই প্রথম ধাপ। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়াটা অকল্পনীয় কিছু নয়।

বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করছে। কিন্তু জীবনে সবার ওপরে রাখতে হবে দেশমাতৃকাকে। তবেই সে মানুষটির লাইনচ্যুতির সম্ভাবনা কমে আসবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীমূলক বই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়লেই বোঝা যায় দেশপ্রেম কী, কীভাবে দেশকে ভালোবেসে জীবনের সবকিছু উৎসর্গ করা যায়। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থী বন্ধুর জীবনে সবার আগে থাকতে হবে দেশ। মনে রাখতে হবে মা, মাটি আর মানুষের কথা। আমরা চাই আমাদের বন্ধুরা প্রত্যেকে এক একজন সুনাগরিক হয়ে বেড়ে ওঠুক। প্রতিটি শিক্ষার্থী বন্ধুর দেশপ্রেমেই গড়ে ওঠুক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, দেশরত্ন শেখ হাসিনার সমৃদ্ধশালী ডিজিটাল সোনার বাংলাদেশ। সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.014153003692627