শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মোতালেব হোসেন এবং মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিনের ব্যক্তিগত নথির অভাবে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে ঢিলেঢালা ভাব দেখা দিয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মোতালেব-নাসিরের ব্যক্তিগত নথি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানোর কথা থাকলেও অদ্যাবধি পাঠায়নি। দুদকের উর্ধ্বতন সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত জানুয়ারি মাসে গোয়েন্দা পুলিশের কর্তৃক গ্রেপ্তার হওয়ার পরপরই দুদক থেকে তাদের অবৈধ সম্পদ ও দুর্নীতির বিষয়টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত জানায় সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। এরপরই দুদক উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারির নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিমকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই অনুসন্ধানের স্বার্থে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে ওই দুই কর্মচারির ব্যক্তিগত নথি চেয়ে চিঠি পাঠায় অনুসন্ধান কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে দুদকের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, গত ১২ ফেব্রুয়ারি মধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোতালেব ও উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিনের ব্যক্তিগত নথির অনুলিপি চেয়ে দুদক থেকে চিঠি দেওয়া হলেও তা এখনো পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে টেলিফোনে তাগিদ দেওয়া হয়। ব্যক্তিগত নথি পাওয়ার পর ওই নথির তথ্যানুসারে ৪০ এর অধিক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কাগজপত্র তলব করা হবে। আর ওই কাগজপত্রের তথ্যের আলোকে শুরু হবে অবৈধ সম্পদের প্রকৃত অনুসন্ধান।
শিক্ষামন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনুসন্ধানের বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বিষয়ে আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি।আমাদের তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে।
ওই দুইজন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেই দুদকের এই উদ্যোগ নয় জানিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধান ও তদন্ত সর্বক্ষেত্রেই বিস্তৃত। কেবল সরকারিই নয়, বেসরকারি ক্ষেত্রেও আমাদের কার্যক্রম বিস্তৃত। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের অর্জন এবং ভোগ দখলে রাখা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, গোয়েন্দার হাতে ধরা পড়ার পর পরই মোতালেব কিছু বিষ্ময়কর তথ্য দেন। যা রীতিমতো গা শিউরে ওঠার অবস্থা। থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়ায় ভয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনেকেই।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই দুইজনের এবং ঢাকার লেকহেড গ্রামার স্কুলের অন্যতম মালিক খালেদ হাসান মতিন বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে বন্ধ থাকা ওই স্কুল খুলতে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে।
শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মোতালেব হোসেন ও লেকহেড গ্রামার স্কুলের অন্যতম মালিক খালেদ হাসান মতিনকে গত ২০ জানুয়ারি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ ও বিতরণ শাখার উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিন ১৮ জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ জানিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়েছিল।
গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই তিনজনই তাদের হেফাজতে আছে। পরে সোমবার রাতে ঢাকার বনানী থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ডিবির এসআই মনিরুল ইসলাম মৃধা। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৬১, ১৬২ ও ১৬৫ ধারায় দায়ের করা এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নানা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মোতালেব ও নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নাসিরের কাছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। আর মতিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগে।
শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোতালেব হোসেনের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নে। ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কম্পিউটার টাইপিস্ট পদে চাকরি নিলেও পিও হিসেবে পদোন্নতি বাগিয়ে নেন। প্রায় সাত বছর যাবত শিক্ষামন্ত্রীর পিও হিসেবে কাজ করেন মোতালেব। রাজধানীর বছিলায় নিজস্ব জমিতে তিনি ছয়তলা বাড়ি নির্মাণ করছেন। সেখান থেকেই তাকে তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছিল পরিবার।
নাসিরের বিরুদ্ধে এমপিও জালিয়াতির অভিযোগ থাকায় শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে বদলি করা হয় ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে। একদিনের জন্যও নাসির ওই কলেজে যোগদান করেননি। নতুন একটি সমিতি তৈরি করেন। সেই সমিতির অভিষেকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিবসহ বড় বড় কর্মকর্তাদের নিমন্ত্রণ জানানো হয়। তদবির করে গত বছরের জুলাই মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডেপসাস সংযুক্ত হন নাসির।