রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে পদোন্নতিতে অনিয়ম, তদন্তে মন্ত্রণালয়

রাজশাহী প্রতিনিধি |

রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ছয় কর্মকর্তাকে পদোন্নতির বিষয়ে রোববার তদন্ত শুরু করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মো. অলিউল্লাহ আজমতগীরের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পরিদর্শক আজিজুর রহমান, মোহাম্মদ মনকিউল হাসনাত ও মো. হেমায়েত উদ্দিন এবং অডিট অফিসার চন্দন কুমার দেব। কমিটির সদস্যরা শনিবার বিকালে রাজশাহীতে পৌঁছেছেন।

তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, কোনো পদ শূন্য না থাকলেও ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মোকবুল হোসেন বোর্ডের ছয় কর্মকর্তাকে সপ্তম বেতন গ্রেড থেকে সরাসরি পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতি দেন। পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা হলেন-উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (জেএসসি) ফরিদ হাসান, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (স্ক্রিপ্ট) রুবী, উপসচিব (ভান্ডার) দুরুল হোদা, উপসচিব (প্রটোকল) খোরশেদ আলম, উপবিদ্যালয় পরিদর্শক (রেজিস্ট্রার) মো. নুরুজ্জামান ও ডকুমেন্টেশন অফিসার সুলতানা শামীমা আক্তার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, উচ্চতর বেতন স্কেলে এসব কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হলেও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে কোনো শূন্য পদ নেই। পদোন্নতির আদেশপত্রে বোর্ড চেয়ারম্যান জালিয়াতিরও আশ্রয় নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে অনুষ্ঠিত ২৩২, ২৩৪ ও ২৪১তম বোর্ড সভার সূত্র উল্লেখ করে এ ছয় কর্মকর্তাকে পদোন্নতির আদেশ জারি করেন চেয়ারম্যান। কিন্তু এসব বোর্ড সভা বেশ কয়েক বছর আগে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে কোনো কর্মকর্তাকে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়নি।

এরও অনেক পরে ২০১৭ সালের ১০ জুন অনুষ্ঠিত ২৪২তম বোর্ড সভায় নয়জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। সেখানে এ ছয় কর্মকর্তার পদোন্নতির বিষয়ে কোনো সুপারিশ ছিল না। গুরুতর অভিযোগ হলো-এ ছয় কর্মকর্তা মেধাক্রমেও তালিকায় ছিলেন না। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বোর্ড চেয়ারম্যান যে কোনো কারণেই হোক জালিয়াতি ও অনিয়ম করে এ ছয়জনকে পদোন্নতি দেন। এর আগে বোর্ড চেয়ারম্যান গোপন নোটে প্রথমে বোর্ড সচিবকে মতামতের জন্য মার্ক করলেও পরে কেটে দিয়ে তার আস্থাভাজন স্কুল পরিদর্শক অধ্যাপক দেবাশিষ রঞ্জন রায়কে মতামত দিতে বলেন। স্কুল পরিদর্শক বোর্ড সভার অনুমোদন সাপেক্ষে পদোন্নতি দেওয়া যেতে পারে বলে নোটে লেখেন। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির একজন সদস্য বলেন, কাউকে পদোন্নতি দিতে হলে প্রথমে শূন্য পদ থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, সিলেকশন কমিটি ছাড়াও ফিন্যান্স কমিটির সুপারিশ লাগবে। তৃতীয়ত, বোর্ড সভার অনুমোদন অবশ্যই আগেই নিতে হবে। বোর্ড চেয়ারম্যান যেসব বোর্ড সভার সূত্র উল্লেখ করে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, সেগুলোয় এ ছয়জনের পদোন্নতির বিষয়ে কোনো মতামত ছিল না। ফলে প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া যেতে পারে এ ছয়জনের পদোন্নতিতে অনিয়মের পাশাপাশি নথি জালিয়াতি হয়েছে। বোর্ড চেয়ারম্যান ১৫ জানুয়ারি পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি করলেও তা কার্যকরের জন্য ২৬ জানুয়ারি বোর্ড সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছে শুধু বেতনশিট পাঠান। বোর্ড সচিব বিষয়টিতে গুরুতর অনিয়ম ও জালিয়াতি হওয়ায় সেই বেতনশিট অনুমোদন করা থেকে বিরত থাকেন। সেই থেকে বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে বোর্ড সচিবের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে। পরে বোর্ড সচিবকে পাশ কাটিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান নিজের ক্ষমতাবলে ছয় কর্মকর্তাকে বেতনভাতা প্রদান করেন। এ খবর জানতে পেরে ৫ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে দুদকের চার সদস্যের একটি দল রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ঝটিকা অভিযান করে। দুদক টিম পদোন্নতি পাওয়া ছয় কর্মকর্তার সব নথি জব্দ করে। জিজ্ঞাসাবাদ করেন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।

দুদক বর্তমানে বিষয়টি অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে।

রাজশাহী দুদকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন ও নাথি সংগ্রহ করে ছয় কর্মকর্তার পদোন্নতিতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। বিদ্যমান জনবল কাঠামোতে কোনো শূন্য পদ না থাকলেও মনগড়াভাবে চেয়ারম্যান ও স্কুল পরিদর্শক মিলে সপ্তম গ্রেড থেকে পঞ্চম গ্রেড দিয়েছেন। মাঝে ষষ্ঠ গ্রেডকে সুপারসিড করা হয়েছে। চেয়ারম্যানের বিশেষ ক্ষমতা আছে তার মানে সবকিছু আইনের ঊর্ধ্বে তা নয়। বিষয়টি দুদকের অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে।

ছয় কর্মকর্তার পদোন্নতির বিষয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোকবুল হোসেন বলেন, ১৯৬১ সালের রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধ্যাদেশে তাকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া আছে। এ ধরনের পদোন্নতি তিনি দিতেই পারেন। এক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়নি। তিনি শতভাগ সততার সঙ্গে কাজ করেছেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0089359283447266