রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রথম ও প্রাচীনতম প্রশাসনিক ভবন বড়কুঠি ভবনের মালিকানা সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের বাসভবনে অনুষ্ঠিত ৪৯১তম সিন্ডিকেট সভায় একাধিক সদস্যের বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর আগেও ২০১১ ও ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে বড়কুঠির মালিকানা চেয়েছিল রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। শিক্ষকদের প্রতিবাদের মুখে সিটি কর্পোরেশন ভবনটি নিতে পারেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ অধিদপ্তর আইন-১৯৭৬ আইন অনুযায়ী সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই ভবনটি সংরক্ষিত প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে। একইসঙ্গে ভবনটি সংস্কার করে হেরিটেজ করার জন্য ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জুনে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় একটি গেজেট প্রকাশ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি তোলা হয়। সভায় আলোচনা সাপেক্ষে ভবনটির মালিকানা সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে হস্তান্তর করা হয়।
সিন্ডিকেট সভা সূত্রে জানা গেছে, সিন্ডিকেটের তিন সদস্য ওই সময়ই বিষয়টির প্রতিবাদ করেন। তারা এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তাদেরকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। সভার পরদিন রবিবার তিন সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আব্দুল আলীম, অধ্যাপক হাবীবুর রহমান ও মোহা. মনিরুল হক এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত বিবৃতি দেন।
সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক হাবীবুর রহমান বলেন, ‘বড়কুঠি ভবনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীনতম ভবন। ভবনটিতে জড়িয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেকড়। ভবনটি আমাদের আবেগের জায়গা। আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের মালিকানা আমরা অন্য কাউকে দিতে পারি না।’
অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি করেছে বলেই যে ভবনটি তাদেরকে দিয়ে দেয়া হবে তার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের মতো বড়কুঠিও আমাদের সম্পত্তি। কার্জন হল যেমন তারা নিতে পারে না তেমনি বড়কুঠি ভবনটিও তারা নিতে পারে না।’
জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এমএ বারী বলেন, ‘সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ হয়েছে। আমরা সরকারের বিরোধিতা করতে পারি না। এ ছাড়া সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ভবনটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
উল্লেখ্য, রাজশাহী শহরের পদ্মাতীরে বড়কুঠি ভবনটি অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে নির্মাণ করা হয়। এটি প্রথমে ডাচদের ব্যবসা কেন্দ্র ছিল। দেশ ভাগের পর ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে বড়কুঠি সরকারি সম্পত্তিতে পরিণত হয়। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেখান থেকে প্রথম প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করা হয়। সেই থেকেই ভবনটির মালিকানা পায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।