শাবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির পরিচয়হীন শ্বেতপত্র

শাবি প্রতিনিধি |

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের ফিরিস্থি সম্বলিত নাম পরিচয়হীন একটি শ্বেতপত্র প্রকাশিত হয়েছে। নাম ঠিকানাবিহীন ডাকযোগে প্রেরিত এ শ্বেতপত্রের কপি গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের হাতে এসে পৌঁছায়। শ্বেতপত্রে উপাচার্যের আর্থিক দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, বিএনপি-জামায়াত তোষণ, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা, মেধাবী ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাস থেকে বের করাসহ মোট ৫৩টি পয়েন্টে অভিযোগ তুলে ধরা হয়। অন্যদিকে এ শ্বেতপত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

শ্বেতপত্র প্রকাশিত হওয়ার পর বর্তমানে ক্যাম্পাসে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। উপাচার্যের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিতে দেখা গেছে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের। তবে সবচেয়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্বেতপত্রটি কারা করেছে, তার রহস্য উদ্ঘাটন। এ নিয়ে বেশ কানাঘুষা তৈরি হয়েছে ক্যাম্পাসটিতে। তবে শ্বেতপত্রে অভিযোগকারীরা নিজেদের নাম প্রকাশ না করলেও ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার শাবিপ্রবির শিক্ষক ও কর্মকর্তারা’ নামে প্রচার করছেন। ‘শাবিপ্রবির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বিভিন্ন অপকের্মর শ্বেতপত্র’ নামে প্রকাশিত ২৪ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্রটি প্রথম কিস্তি হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় কিস্তি প্রকাশিতব্য বলে শ্বেতপত্রে দাবি করা হয়।

শ্বেতপত্রে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে উপাচার্যের শাবির গ্র্যাজুয়েটের বিরুদ্ধে অবস্থান ও নিয়োগ বোর্ডে বসে আবেদনকারীদের সঙ্গে বিদ্রƒপাত্মক আচরণের বিষয় উঠে আসে। শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতাসম্পন্ন ও মেধাবীদের বাদ দিয়ে নিজ জেলা কুমিল্লার প্রার্থী, নিজের আত্মীয়-স্বজন, নিজ অনুগত শিক্ষকদের সন্তানদের প্রাধান্য দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ করা হয়। সর্বশেষ একজন সিন্ডিকেট সদস্যের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও প্রার্থীদের মধ্যে সর্বনিম্ন যোগ্যতম সম্পন্ন উপাচার্যের অনুগত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম দিপুর মেয়েকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নিয়োগ প্রদান করা হয় বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া আনোয়ারুল ইসলাম বর্তমানে তার জামাতাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকানোর চেষ্টায় আছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। শাবির বিভিন্ন বিভাগের ১ম শ্রেণীতে ১ম, ২য় ও ৩য় হওয়া শিক্ষার্থীকে বাদ দিয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম, ৫০তম, ৬৩তম এমনকি ৭১তম শিক্ষার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নেয়া হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট কারো নাম বা তথ্য শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়নি।

শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্যবীমা চালুর বিষয়ে উপাচার্যের বিশেষ সুবিধা লাভের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। আরেকটি পয়েন্টে উপাচার্যকে ভিজিটিং ভিসি খেতাব দিয়ে সপ্তাহে তিন দিনের বেশি ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন না বলা হয়। এ ছাড়া উপাচার্যের বাসভবন রিনোভেটের নামে ৪৮ লাখ টাকা অপচয় ও ইন্স্যুরেন্সের নামে চরম আর্থিম অনিয়মের অভিযোগ আনা হয় শ্বেতপত্রে।

অন্যদিকে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট বৈঠকে পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার অভিযোগ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বিভিন্নভাবে আনা হয়েছে। বিগত দুই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত কোন দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি এবং সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূইয়ার সময় বরাদ্দকৃত ২০০ কোটি টাকার অর্থ ব্যয় করতে বর্তমান উপাচার্য অক্ষম বলে শ্বেতপত্রে দাবি করা হয়। এ ছাড়া সীমানা প্রাচীরকে অহেতুক কাজ বলে উল্লেখ করা হয় শ্বেতপত্রে এবং দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়।

এ ছাড়াও প্রমোশন ও আপগ্রেডেশনের ক্ষেত্রে অনিয়ম, নিয়ম বর্হিভূতভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ পরিবর্তন, জোবাইক চালুর নামে প্রতারণা, আইসিভিসি সম্মেলনের নামে অর্থ অপচয়সহ বিভিন্ন বিষয় শ্বেতপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করলে  উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, যারা বেনামে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে তাদের নৈতিক ভিত্তি অনেক দুর্বল। শ্বেতপত্রের অভিযোগকে তিনি অবাস্তব ও হাস্যকর বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আমি সেরা শিক্ষার্থীদের নেয়ার চেষ্টা করেছি। আর্থিক দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতার বিন্দু মাত্র সত্যতা ও প্রমান দিতে পারবে না বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়েন তিনি।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ইন্স্যুরেন্স করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যে ৯৮৭ কোটি টাকার প্রকল্প পাশ করা হয়েছে। এইটি বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত কোন সমস্যা থাকবে। এ ছাড়া ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে বলে দাবি করেন তিনি। জোবাইক চবি, রাবি সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চালু আছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ - dainik shiksha অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা - dainik shiksha সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে - dainik shiksha শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ - dainik shiksha এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে - dainik shiksha যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040178298950195