দৈনিকশিক্ষাডটকম, ডুমুরিয়া (খুলনা) : জনগণের ভালোবাসা সিক্ত হয়ে আবারো খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন শিক্ষক ও সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। এ নিয়ে মোট ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন এ শিক্ষক।
খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন খুলনা ৫। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য মন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন ইউসুফের মৃত্যুর পর প্রথম বার উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সবার প্রিয় শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। তারপর একাধারে চারবার তিনি জনগণের ভালোবাসা নিয়ে সংসদে এ এলাকার প্রতিনিধিত্ব।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ নৌকা এবং ফুলতলা উপজেলা পরিষদের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন ঈগল প্রতীক নিয়ে সরগরম রেখেছিলেন নির্বাচনী মাঠ।ব্যাপক উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন জনগণ।
নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে শিক্ষক ও সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ পেয়েছেন ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৯ ভোট এবং ঈগল প্রতীকে চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন পেয়েছেন ৯২ হাজার ৫৬ ভোট। নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ২০ হাজার ৭৩ ভোট বেশি পেয়ে আবারো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
রঘুনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মেসবাউল আলম টুটুল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকা জিতবে বলে আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু দলের আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে অনেক নেতাকর্মী নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন। তবে তাদের শেষ ভালো হয়নি।
শিক্ষক ও সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার উন্নয়নকে জনগণ সঠিক মূল্যায়ন করেছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীসহ জনগণকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। বিজয়টা যেমন আনন্দের তেমনিভাবে বিজয়কে সুসংহত করার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা আরো কঠিন। আর সেটাকে কার্যকর করার জন্য সকলের সহযোগিতা ও সচেতনতার প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, এবার এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনকে প্রাধান্য দেবো এবং অবশিষ্ট রাস্তা ঘাট, কার্লভাট ব্রিজ নির্মাণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, বেকারমুক্ত করার কাজ করবো এবং সামগ্রিকভাবে মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে উদ্যোগক্তা সৃষ্টির চেষ্টা করবো।
নারায়ণ চন্দ্র চন্দ খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার উলা গ্রামের স্বর্গীয় কালীপদ চন্দের মেঝ ছেলে। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মার্চ তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা ছিলেন স্বর্গীয়া রেণুকা বালা চন্দ। উলাগ্রামের পাঠশালায় তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু। বান্দা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক্যুলেশন পাশ করেন। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে দৌলতপুর বিএল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স এবং ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে একই বিষয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।
মাস্টার্সের ফল প্রকাশের আগেই নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ডুমুরিয়ার সাহস নোয়াকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে এই স্কুল থেকে সর্বপ্রথম শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পায়। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মে ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রচেষ্টায় ডুমুরিয়ায় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র চালু হয়। এর আগে খুলনা শহরে শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষা দিতে হতো। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিএড পাস করেন। তিনি ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মার্চ শিক্ষকতা থেকে অবসর নেন। তার স্ত্রী উষা রানী চন্দও স্কুল শিক্ষক। তার বড় ছেলে অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র চন্দ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য।
১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ করতে প্রতিষ্ঠা করেন থানা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে চন্দ্র চন্দ পর্যন্ত দুই দশক ধরে তিনি ওই পদের দায়িত্বে ছিলেন।