শিক্ষক নিবন্ধন: ৯০ দিনের মধ্যে সমন্বিত মেধা তালিকা তৈরির নির্দেশ

সাঈদ হোসেন |

৯০ দিনের মধ্যে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়ে একটি সমন্বিত জাতীয় মেধা তালিকা তৈরি ও প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। নিবন্ধন উত্তীর্ণদের সনদের কোনো মেয়াদ থাকবে না বলে আদালতের আদেশে বলা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক তালিকা ও নিয়োগ পদ্ধতিও বাতিল এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রার্থীদের একটি বয়সসীমা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ই ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি রেজা-উল হক এবং বিচারিপতি মোহাম্মদ উল্লাহর বেঞ্চ এমন আদেশ দিয়েছেন।

আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলাম, এ বি এম আলতাফ হোসেন, হুমায়ুন কবির, সাহাবুদ্দীন খান লার্জ ও ইশরাত হাসান প্রমুখ। শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী কাজী মাঈনুল হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

নিবন্ধন সনদধারী রাজশাহীর আরিফুল ইসলামসহ ১১২ জন নিবন্ধন সনদের মেয়াদ তিন বছর এবং জেলা ও উপজেলাভিত্তিক মেধা তালিকা পদ্ধতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে চলতি বছর রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে কয়েক হাজার ব্যক্তি পৃথক রিট করলে রুল হয়। পৃথক ১৬৬টি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া রুলের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়। বৃহস্পতিবার আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করে রায় দেওয়া হয়।

রায়ে সাত দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে রিট আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী হুমায়ুন কবির ১৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) দৈনিকশিক্ষাডটকমকে বলেন,  রায়ের কপি পাওয়ার পর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে উত্তীর্ণদের নিয়ে একটি জাতীয় মেধা তালিকা করতে বলা হয়েছে।

প্রথম থেকে ত্রয়োদশ পরীক্ষায় ‍উত্তীর্ণদের মধ্যে তালিকা না-কি প্রথম থেকে দ্বাদশ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের? দৈনিকশিক্ষার এমন প্রশ্নের জবাবে হুমায়ুন কবির বলেন, ‘নিবন্ধন পদ্ধতির শুরু থেকে অদ্যাবধি ১৩টি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। জাতীয় মেধা তালিকা তৈরির আদেশ দিয়েছেন আদালত, তাই উত্তীর্ণ সবাইকেই এই মেধা তালিকার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’  রায়ে বলা হয়েছে, জাতীয় মেধা তালিকা দৃশ্যমান হতে হবে, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএর) ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করতে হবে।

রায়ের পর এক প্রশ্নের জবাবে  এনটিআরসিএর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও বলেন, প্রথম থেকে দ্বাদশ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে মেধা তালিকা তৈরি করা হবে।

রায়ে দেওয়া সাত দফা নির্দেশনায় বলা হয়—১. নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সনদ দিতে হবে। নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সনদ বহাল থাকবে। ২. রায়ের কপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে উত্তীর্ণদের নিয়ে একটি জাতীয় মেধাতালিকা করতে হবে। এই তালিকা এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। ৩. একটি জাতীয় মেধাতালিকা করতে হবে। বিভাগ, জেলা, উপজেলা তালিকা নামে কোনো তালিকা করা যাবে না। ৪. এনটিআরসিএ প্রতিবছর মেধাতালিকা হালনাগাদ করবে। ৫. সম্মিলিত মেধাতালিকা অনুযায়ী রিট আবেদনকারী এবং অন্যান্য আবেদনকারীর নামে সনদ জারি করতে হবে। ৬. নিয়োগের উদ্দেশ্যে এনটিআরসিএ কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বরাবর কোনো সুপারিশ করলে কপি পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য গঠিত ব্যবস্থাপনা কমিটি বা গভর্নিং কমিটি বাতিল করবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড এবং ৭. বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নির্ধারণ করতে শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে সরকার।

জানা যায়, ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করে আইন প্রণয়ন করে সরকার। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগগের প্রাক-যোগ্যতা হিসেবে নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সনদ অর্জন বাধ্যতামূলক করা হয়। ওই বছরই প্রথম নিবন্ধন পরীক্ষা হয়। চলতি বছর ত্রয়োদশ নিবন্ধন পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। তবে, প্রথম থেকে দ্বাদশ নিবন্ধন পরীক্ষা ছিলো এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশের প্রাক-যোগ্যতা নির্ধারণের।

অপরদিকে, ত্রয়োদশ নিবন্ধন পরীক্ষা হয় এন্ট্রি লেভেলে [সহকারী শিক্ষক, প্রভাষক, মৌলভী ইত্যাদি] নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী ত্রয়োদশ থেকে পরবর্তী পরীক্ষাসমূহে উত্তীর্ণ হলে আর কোনো পরীক্ষা দিতে হবে না প্রার্থীদের। শূন্যপদ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠানো হবে উত্তীর্ণদের এবং প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দেয়া নিয়োগপত্র নিয়ে যোগদান করতে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ধর্ম নিয়ে কটূক্তি: জবি ছাত্রী তিথির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড - dainik shiksha ধর্ম নিয়ে কটূক্তি: জবি ছাত্রী তিথির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে - dainik shiksha একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে ভর্তি পরামর্শ: কলেজ পছন্দ জরুরি - dainik shiksha ভর্তি পরামর্শ: কলেজ পছন্দ জরুরি মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না: হাইকোর্ট - dainik shiksha মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না: হাইকোর্ট শিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচনী হাটে এমপিও শিক্ষকের কপাল ফাটে - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচনী হাটে এমপিও শিক্ষকের কপাল ফাটে অন্ত*র্বাসে লুকানো ডিভাইস, ১০ মিনিটেই শেষ পরীক্ষা - dainik shiksha অন্ত*র্বাসে লুকানো ডিভাইস, ১০ মিনিটেই শেষ পরীক্ষা ১৩ শিক্ষকের ১৪ শিক্ষার্থী, সবাই ফেল - dainik shiksha ১৩ শিক্ষকের ১৪ শিক্ষার্থী, সবাই ফেল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর - dainik shiksha এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050489902496338