শিক্ষাকে ধ্বংস করলে জাতি হিসেবে আমরা এগোতে পারব না

হীরেন পন্ডিত |

যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত আছেন, তাদের বলি, ‘আয়নায় নিজেদের মুখ দেখার সময় এসেছে।’ এ কাজটি করে সাময়িক ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করা যাবে, কিন্তু জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে পড়ছি এবং জাতি মেধাশূন্য হয়ে যাওয়ার ভয়কে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না- এ কথাটি মনে রাখতে হবে।

আমাদের এমন কোন পাবলিক পরীক্ষা নেই যেখানে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে না। এ অপতৎপরতা কোনভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হলেই আমরা এ থেকে মুক্তি পাব। এখনো আমাদের প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা শুনতে হয়। কোন ক্ষেত্রে আগেরদিন কোন ক্ষেত্রে পরীক্ষার কিছুক্ষণ আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে।

এ নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা হয়েছে, কিন্তু কোন সফলতা পাওয়া যায়নি। আসলে আমরা এবং আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা একটা কঠিন সময় অতিক্রম করছি। প্রশাসন সাধ্যমতো চেষ্টা করার পরও এ ঘটনাগুলো ঘটছে, আবার এগুলোও প্রশাসনের নাকের ডগায়ই ঘটছে। পাবলিক পরীক্ষা, বিসিএস পরীক্ষা, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রসহ সব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী মাঝে মাঝে মুখ খোলেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। আর পরীক্ষা বাতিল করে নতুন পরীক্ষা নিয়ে সাময়িক সমাধান খোঁজার একটা চেষ্টা করা হয়, কিন্তু স্থায়ী কোন সমাধান আমরা করতে পারছি না। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা কখনও দেখি না।

শিক্ষা ব্যবস্থার এ দুরবস্থার কথা দেশের বিবেকসম্পন্ন মানুষকে না ভাবিয়ে পারে না। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া আমাদের গলার কাঁটা হিসেবে দেখা দিয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা আমাদের জন্য একটি ‘জাতীয় দুর্যোগ’। শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্যজনক অবস্থার কারণে এ ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ক্রমেই আমাদের গ্রাস করছে, ধ্বংস করছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। পাঠ্যপুস্তকে ভুল এবং বিতর্কিত বিষয় সংযোজন বিবেকসম্পন্ন মানুষদের মনে এক ভীষণ নাড়া দিয়েছিল এবং জনসমাজকে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছিল সম্প্রতি।

শিক্ষা নিয়ে আর হেলাফেলা করার দিন নেই। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে। একটি জাতি শিক্ষায় যত উন্নত, সে জাতির উন্নতির মাত্রাও তত বেশি। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস না করে, তাদের সঠিকভাবে শিক্ষিত করে তোলার দায়িত্ব আমাদের সবার, সেখানে শিক্ষকদের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি পিতামাতার দায়িত্ব রয়েছে, নাগরিক সমাজের ভূমিকা রয়েছে, তেমনি প্রশাসনেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে যে খারাপ পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে তা আমাদের কল্পনা বাইরে।

এ পরিস্থিতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসার রাস্তা খুঁজে বের করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন একটি সম্মিলিত প্রয়াস। আমাদের সমাজে যে অস্থিরতা চলছে, শিক্ষাও কিন্তু এর বাইরে নয়, দিন যত যাচ্ছে পরিস্থিতি ততই নাজুক হচ্ছে। সবাইকে মিলেই এই অস্থিরতা ও ধ্বংসের হাত থেকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে হবে। সরকারি দল, বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজসহ সবার দায়িত্ব রয়েছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত এবং দুর্নীতি মুক্ত করে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027458667755127