শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দায় কার?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সবারই কম-বেশি আর্থিক টানাপড়েন, লেখাপড়া, পরীক্ষা, ভবিষ্যত্, চাকরি নিয়ে হতাশা, বিষণ্নতা ও বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কের মতো ঘটনা ঘটেই থাকে। যতই দিন যাচ্ছে এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে আত্মহত্যার মতো ঘটনা গুরুতর রূপ নিচ্ছে। বাস্তবতা এটাই যে, উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাথী‌র্দের আত্মহত্যা নিয়ে যাদের ভাবার কথা, সেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও রাষ্ট্র আদৌ কি কিছু ভাবছে? এদেশে শিক্ষার সঙ্গে বর্তমান চাকরিবাজারের মিল নেই। এ কারণেই শিক্ষাব্যবস্হা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। করোনাকালে বেকারত্ব ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায় সম্প্রতি এক গবেষণা বলছে, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০২১ সালে ১০১ জন শিক্ষাথী‌র্ আত্মহত্যা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যাকারীদের ৬১ শতাংশের বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথী‌র্। সব ঘটনা পত্রিকায় আসে না। বাস্তবে এ সংখ্যা আরো বেশি। শিক্ষাজীবনে মানসিক স্বাস্হ্য একটা বড় বিষয়। করোনাকালে শিক্ষাথী‌র্দের মানসিক স্বাস্হে্যর ওপর চাপটা পড়েছে বেশি। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাথী‌র্দের জন্য কাউন্সেলিং সেন্টার নেই। হাতেগোনা কোনো কোনো উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকলেও সেগুলো নিষ্ক্রিয়।

কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আর্থিক টানাপড়েন, প্রেমঘটিত বিষয়, বিষণ্নতা, একাকিত্ব, চাকরি পাওয়ার জন্য পরিবারের চাপ, লেখাপড়া ও পরীক্ষার চাপ এগুলো সাধারণ বিষয় বটে। তবে সার্বিক উন্নয়নে সরকারের এত এত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুফল কোথায় যাচ্ছে? কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাষ্ট্র কোটি কোটি টাকা খরচ করে শিক্ষাথী‌র্দের দেশ গড়ার জন্য তৈরি করছে। আর সেই উচ্চশিক্ষিতরা যদি সামাজিক সমস্যার কাছে হার মেনে নিজেদের আত্মহননের দিকে নিয়ে যায় তাহলে তা ভীতিকর বটে। একথা ঠিক যে, সবচেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি হচ্ছে বেকারত্ব নিয়ে।

পড়াশোনা শেষে নিজ নিজ দক্ষতা কাজে লাগানোর জন্য উচ্চশিক্ষিতরা চাকরি করবে কিংবা উদ্যোক্তা হবে—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ দেশের প্রেক্ষাপটে এ পথটা অতটা সহজ নয়! তরুণদের স্বপ্নগুলো যেন তিলে তিলে ক্ষয়ে যাচ্ছে! কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা তরুণ-তরুণীরা কত স্বপ্ন দেখে, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়, পরিবার-সমাজ সর্বোপরি দেশের জন্য কিছু করতে চায়। তরুণদের এগিয়ে যাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা ঘুষ-দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি। তরুণরা স্বপ্ন দেখে এ দেশে কোনো ঘুষ-দুনী‌র্তি থাকবে না। এদেশ হবে তারুণ্যবান্ধব। পড়ালেখা শেষে নিজ যোগ্যতা বলে শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা চাকরি পাবে। কিন্তু বাস্তবতা কি সে কথা বলে? কোথাও নিরপেক্ষতা নেই! 

দেশের নীতিনির্ধারকরা কি কখনো বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, প্রতিবছর কত তরুণ-তরুণী পড়ালেখা শেষ করে বের হচ্ছে, আর কত জন চাকরি পাচ্ছে। দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় চাকরির বাজারে কোন খাতের চাহিদা বেশি আর সেই খাতের বর্তমান অবস্হাওবা কেমন—এ কথা রাষ্ট্র কি ভাবে? বর্তমান চাকরিপ্রত্যাশী তরুণ-তরুণীদের বৃহত্ একটা অংশ ব্যাপকভাবে হতাশ। পরিবার-পরিজন পথ চেয়ে বসে আছে কখন পড়ালেখা শেষ করে সন্তান পরিবারের হাল ধরবে। তরুণরা কেন হতাশাগ্রস্ত হয়, কেন মাদকাসক্ত হয়, কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নেই, কেন বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে লাশ হয়ে ফেরে, কেন বিপথে যায়, কেন তরুণদের স্বপ্নগুলো চুরি হয়ে যায়? বাস্তবতা হলো, তরুণরা তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছে না। তারুণ্যের সময় খেয়ে ফেলছে চাকরির নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা। তরুণরা কারিগরি শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত।

তরুণদের নিয়ে কত কথা বলা হয়, কত স্বপ্ন দেখানো হয়, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বেকারত্বের জ্বালা কেউ বোঝে না, কেউ জানতে চায়ও না। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে কর্মসংস্হান বাড়ছে না। বাস্তবতার যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে তরুণদের স্বপ্ন, চেতনা, দিনবদলের আশা ফিকে হয়ে যাচ্ছে। অথচ এই তরুণরাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে।

নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে, মধ্যম আয়ের দেশ ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনে তরুণরাই সবচেয়ে বড় শক্তি। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা নিজের জীবন দিয়ে শোষণ-বৈষম্যমুক্ত অর্থনৈতিক মুক্তির যে স্বপ্ন দেখে গেছেন তা বাস্তবায়নে তরুণরাই সবচেয়ে বড় ভরসা। উচ্চশিক্ষিতরা কেন আত্মহত্যা করছে—বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবার সময় এসেছে। তরুণদের কথা শুনতে হবে, তাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে।

লেখক : সাধন সরকার


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর - dainik shiksha এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অভিযুক্ত নারায়ণ চন্দ্র নাথের কাহিনী - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অভিযুক্ত নারায়ণ চন্দ্র নাথের কাহিনী সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে - dainik shiksha সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির উদ্ভাবক হওয়ার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষকদের বেতন আটকে সর্বজনীন পেনশন যোগ দিতে চাপের অভিযোগ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028131008148193