শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে বিশেষ প্রকল্প

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রাণঘাতী করোনার ছোবলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাও অনেকটাই ওলটপালট। কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা কার্যক্রম। তবে করোনায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগামী মাস থেকেই বিশেষ প্রকল্প ‘বাংলাদেশ কোভিড-১৯ স্কুল সেক্টর রেসপন্স’ এর কাজ শুরু করতে চায় সরকার। ১২৬ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার এ প্রকল্পের আওতায় অন্তত ২০ হাজার স্কুলে নেয়া হবে করোনার ফলে সৃষ্ট ক্ষতি সামাল দেয়ার উদ্যোগ। শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়া থেকে শুরু করে উপজেলা থেকে বাছাই করা শিক্ষকদের দেয়া হবে প্রশিক্ষণ। শিক্ষা গ্রহনে তৈরি করা হবে নতুন ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম। রোববার (২০ সেপ্টেম্বর)  জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।  প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়,  প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ আকরাম-আল-হোসেন শনিবার বলেছেন, করোনার কারণে শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে সব ধরনের পদক্ষেপ থাকবে বিশেষ এ প্রকল্পে। আগামী মাস থেকেই আমরা প্রকল্পের কাজ শুরু করতে চাই। সে লক্ষ্যেই আমরা প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা কমিশনে আমাদের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এটা একনেকেও পাসের প্রয়োজন পড়বে না। আশাকরি দ্রুতই আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ কর্মসূচী শুরু করতে পারব। এই প্রকল্পে ১৫ মিলিয়ন বা ১২৬ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিচ্ছে গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন (জিপিই)।

জানা গেছে, করোনায় দেশের অন্তত চার কোটি শিক্ষার্থীর ক্ষতি পোষাতেই ‘বাংলাদেশ কোভিড-১৯ স্কুল সেক্টর রেসপন্স’ নামের বিশেষ প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পের প্রায় পুরো টাকাই দিচ্ছে গ্লোবল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন (জিপিই)। বাংলাদেশের পক্ষে সংস্থাটির কাছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ আকরাম-আল-হোসেন ২০ মিলিয়ন অর্থ চেয়ে আবেদনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এর বিপরীতে ১৫ মিলিয়ন টাকা দিতে সম্মত হয় সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে টাকা ছাড় করা হবে।

২০২২ সালের জুন পর্যন্ত দুই বছর চলবে এই প্রকল্প। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় চাইলে পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)। বাস্তবায়ন কমিটিতে থাকবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রকল্প অনুযায়ী নতুন শিক্ষাবর্ষে বিদ্যালয়ে ভর্তি, শিক্ষার্থী মূল্যায়নে (পরীক্ষা) ও লেখাপড়ার ক্ষতি পূরণে সহায়তা, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা সেবা দেয়া, বর্তমান ও ভবিষ্যত সঙ্কট মোকাবিলার জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থার প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা, দূরশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং বিদ্যালয়ের সঙ্গে দূরশিক্ষণ কার্যক্রম একীভূত করা হবে।

দীর্ঘসময় স্কুল বন্ধের পরিস্থিতিতে কৌশল ও মানসম্মত কার্যপ্রণালি প্রণয়নে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা সেবা নিশ্চিত করা হবে প্রকল্পের মাধ্যমে। ২০ হাজার বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী দেয়া হবে প্রকল্পের মাধ্যমে। পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে বিশেষ স্কিম।

প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কমকর্তারা বলছেন, প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে কোভিড-১৯ সঙ্কট মোকাবেলা এবং উত্তরণের জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত করোনা সংক্রান্ত ভবিষ্যৎ সঙ্কট মোকাবেলার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা, প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ২৫ লাখ শিক্ষার্থীকে একীভূত দূরশিক্ষণ (টিভি, রেডিও ও অনলাইন) সহায়তা দেয়া।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য পূরণে ৩২ লাখ ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের সরকারী বিদ্যালয়ে পুনঃভর্তি (যারা চলতি শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছিল) নিশ্চিত করা হবে। এর মধ্যে ১৫ লাখ ৯০ হাজার ছাত্র ও ১৬ লাখ ৫০ হাজার ছাত্রী রয়েছে।

বিদ্যালয় ব্যবস্থার সঙ্গে দূরশিক্ষণ কার্যক্রম পুরোপুরি কার্যকর ও একীভূত করা হবে প্রকল্পের মাধ্যমে। প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর পুরো শিক্ষাবর্ষের জন্য পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ ডিজিটাল কনটেন্টসমৃদ্ধ ৩৫টি বিষয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। দুর্গম এলাকার এক লাখ ৫০ হাজার শিশুকে শিক্ষা উপকরণ দেয়া হবে। স্কুল বন্ধ থাকায় ১৫ লাখ শিশু-শিক্ষার্থীকে করোনার নেতিবাচক প্রভাব থেকে উত্তরণ ঘটাতে প্রচার চালানো হবে।

শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরি, বিদ্যালয় বন্ধের কারণে শিক্ষার ক্ষতি পরিমাপ করতে তিন লাখ ৫০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। এছাড়া শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রতি উপজেলা থেকে নির্দিষ্টসংখ্যক শিক্ষককে বাছাই করে দেয়া হবে প্রশিক্ষণ।

করোনার সঙ্কটে যেসব শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে তাদের আবার স্কুলে ভর্তিতে সহায়তা করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে (পরীক্ষা) ও লেখাপড়ার ক্ষতি পূরণে সহায়তা করা এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সেবা দেয়া হবে নতুন এ প্রকল্পের মাধ্যমে। প্রকল্প থেকেই সব কার্যক্রমের কারিগরি সহায়তা সেবা নিশ্চিত করা হবে। বিদ্যালয় ব্যবস্থার জন্য মানসম্মত জরুরী পরিচালনা কার্যপ্রণালি তৈরি করা এবং শিখন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে সরাসরি ইন্টারভেশন থেকে ৩ কোটি ৫৯ লাখ শিক্ষার্থী উপকৃত হবে। অসম পঠন-পাঠন সমস্যার সমাধান করাও হবে এই প্রকল্পের একটি কাজ।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ আকরাম-আল-হোসেন বলছিলেন, স্কুল খোলার সঙ্গে সঙ্গেই প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধা পাবে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে যেসব নির্দেশনা তৈরি হয়েছে তা বাস্তবায়নে অর্থ সহায়তা দেয়া হবে। এতে সরকারের কোন অর্থ ব্যয় হবে না।

তিনি আরও জানান, প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর পুরো শিক্ষাবর্ষের জন্য পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ ডিজিটাল কনটেন্ট সমৃদ্ধ ৩৫টি বিষয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। শিশু-শিক্ষার্থীকে করোনার নেতিবাচক প্রভাব থেকে উত্তরণ ঘটাতে প্রচার চালানো হবে। ২০ হাজার বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী দেয়া হবে প্রকল্পের মাধ্যমে। নতুন এ প্রকল্পটি দেশের জন্য খুবই জরুরী। আশাকরি দ্রুতই শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে আমরা কাজ শুরু করতে পারব।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054709911346436