ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম বলেছেন, শিক্ষা আইনে যদি বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টার বন্ধ না করে শুধু নোট-গাইড নিষিদ্ধ করা হয় তবে তাতে কোনো লাভ হবে না। কারণ কোচিংয়ের সঙ্গে নোট-গাইড বাণিজ্যের একটি যোগসূত্র রয়েছে। আর পড়াশোনার জন্য যদি বাণিজ্যিক কোচিংকেই উৎসাহিত করা হয় তবে স্কুলের কাজটা কী? বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আকতারুজ্জামান। সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত-
প্রখ্যাত এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, শিক্ষা আইন অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু আমরা আশা করেছিলাম বাস্তবতা সামনে রেখে এ আইন প্রণয়ন করা হবে। শিক্ষা আইনের খসড়ায় নোট-গাইড নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এটা ইতিবাচক। কোচিং বাণিজ্য যদি বন্ধ না হয় নোট-গাইড নিষিদ্ধ করে কোনো লাভ হবে না। কোচিং সেন্টার থেকেই নোট-গাইড পড়তে শিক্ষার্থীরা উদ্বুদ্ধ হয়।
তিনি বলেন, আইনের খসড়ায় আরও বলা হয়েছে- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলাকালে কোচিং সেন্টার চালানো যাবে না। কিন্তু সারা দেশের কোচিং কখন খোলা থাকবে, কখন বন্ধ রাখবে তা মনিটরিং করা অসম্ভব ব্যাপার। এসব কোচিং সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করতে না পারলে তা ক্ষতিকারক হবে। স্কুলের পড়াশোনা স্কুলেই হওয়া উচিত। যত দিন কোচিংয়ের ওপর আমাদের নির্ভরতা থাকবে তত দিন স্কুলের পড়া স্কুলে হবে না। এটা একটা চক্র হয়ে গেছে। এ চক্র ভাঙার একটা বিষয় হতে পারত যে, কোনো কোচিংই থাকবে না। আরেকটি বিষয় হলো, আইনের খসড়ায় শিক্ষকদের জন্য কোচিং নিষিদ্ধ করা হলো, কিন্তু উন্মুক্ত করা হলো বাণিজ্যের জন্য। এটি একটি দ্বিমুখী নীতি।
সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম বলেন, এ খসড়া আইন নিয়ে আরও চিন্তার অবকাশ রয়েছে। কারণ, আইনের এসব ধারায় বাণিজ্যিক কোচিংয়ের বৈধতা দিয়ে স্কুলে পড়াশোনা না করাকে উৎসাহিত করছি কিনা তা দেখতে হবে। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার কথা বলে কোচিংকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। এখানে রাস্তায় হাঁটতেও তো প্রতিযোগিতা করতে হয়। প্রতিযোগিতা কোথায় নেই? অন্য প্রতিষ্ঠানে গিয়ে যদি প্রতিযোগিতার জন্য যোগ্য হতে হয় তবে স্কুল কী শেখাচ্ছে? আসলে বর্তমানে কোচিং সেন্টার আর স্কুলকে সমান্তরাল হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে। এটি নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের।
তিনি বলেন, শিক্ষকদের বেতন-ভাতাসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে যেন কেউ কোচিংয়ের দিকে না গিয়ে সম্মানজনকভাবে জীবনযাপন করতে পারেন। তাহলে স্কুলের পড়া স্কুলেই হবে, কোচিংয়ের প্রয়োজন হবে না। মেধাবীদের শিক্ষা সেক্টরে আকৃষ্ট করতে হবে, সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, এতে কোচিং নির্ভর শিক্ষা বন্ধ হবে।