শিক্ষা থেকে বঞ্চিত চা শ্রমিকের সন্তান

সিলেট প্রতিনিধি |

শ্রম আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের কোনো চা-বাগানে ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকলেই সেই বাগান কর্তৃপক্ষকে সেখানে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অথচ নিয়ম থাকলেও শ্রীমঙ্গলের অনেক চা-বাগানে এখনো মালিক কর্তৃপক্ষ স্কুল তৈরি করেনি। সরকারিভাবে এখানকার চা-বাগানগুলোতে স্কুল তৈরি করা হলেও জনসংখ্যার অনুপাতে তা অপর্যাপ্ত। আর স্কুলগুলোর শিক্ষার মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। মাত্র দু-একজন শিক্ষক দিয়েই স্কুলগুলো পরিচালিত হচ্ছে। অনেক স্কুলে আবার চা শ্রমিকদের দিয়েই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। আর এ বিষয়গুলো যথাযথভাবে মনিটর না করায় চা শ্রমিকের সন্তানরা তাদের মৌলিক অধিকার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতারা বলেন, আগের তুলনায় শ্রীমঙ্গলের চা শ্রমিক ও তাদের সন্তানদের মধ্যে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেলেও এখনো এখানকার অনেকেই যাতায়াত ও আর্থিক সমস্যার কারণে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না। বাড়ি থেকে স্কুল দূরে হওয়ায় এই শিক্ষার্থীদের অনেকে স্কুলে যায় না। ফলে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই কিশোর বয়সেই অনেকে চা শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করে।

গান্ধিছড়া চা-বাগানের শ্রমিক শিল্পী উপাইধা। দুই মেয়ে ও এক ছেলে তার। শিল্পীর ছেলে তার মতো চা শ্রমিক হয়ে জীবিকা নির্বাহ করুক তা তিনি চান না। তাই ছেলে রুপমকে কুলাউড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়ি রেখে লেখাপড়া করাচ্ছেন। রুপম মাস্টার্স পাস করেছেন। তার মা-বাবার স্বপ্ন, রুপম একদিন সরকারি চাকরি করবেন। কিন্তু চা শ্রমিকদের চাকরি পাওয়া এত সহজ নয় বলে শিল্পী জানান। তিনি বলেন, ‘যোগ্যতা থাকলেও আমাদের সন্তানদের চাকরির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। চাকরির জন্য উল্টো ঘুষ চাওয়া হচ্ছে। ’

এই বাগানের শ্রমিকরা জানান, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা নেওয়ার জন্য তাদের ছেলেমেয়েদের বাড়ি থেকে ৩ কিমি দূরে যেতে হয়। আর এত দূরে গিয়ে স্কুল করার জন্য কোমলমতি এসব শিক্ষার্থীর শারীরিক কষ্টও বেশি হয়। শ্রমিকরা জানান, স্কুলের ফি, বইপত্র, খাতা কিনতে অর্থের প্রয়োজন। আর সে অর্থ জোগাড় করতে না পেরে অনেকেই তাদের সন্তানদের ঋণ করে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন।

সুদাস প্রধান নামের আরেক চা শ্রমিক জানান, অনেক কষ্টে ঋণ করে তিনি তার ছেলে স্বপনকে ডিগ্রি পর্যন্ত পড়িয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চা শ্রমিক হিসেবে যে জীবন কাটাচ্ছি তা অত্যন্ত অমানবিক। বাবা হিসেবে আমি চাই না আমার সন্তানও আমার মতো কষ্ট করে বেঁচে থাকুক। এজন্য ছেলেকে পড়ালেখা করিয়েছি। ’ আর সুদাসের সন্তান স্বপন বলেন, ‘বাবা অনেক পরিশ্রম করে আমাকে বড় করেছেন। আমি ভালো সম্মানজনক কোনো কাজ করে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। তার বাকি জীবন তাকে ভালোভাবে রাখতে চাই। ’

জানা যায়, আগে এই চা-বাগানে বেসরকারি এনজিও ব্র্যাক শিশুদের শিক্ষা প্রদান করলেও প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে চা শ্রমিকদের সন্তানরা সে সুযোগও পাচ্ছে না। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাম ভজন কৈরী বলেন, ২০১৫ সালের শ্রম বিধিমালায় বাগান মালিকদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, যদি কোনো বাগানের দেড় কিমির মধ্যে সরকারি স্কুল থাকে, তবে বাগান কর্তৃপক্ষ সেখানে স্কুল না দিলেও সমস্যা নেই। আর এ সুযোগে অনেক মালিক স্কুল তৈরির ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027010440826416