শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফি আদায় ও ব্যয়ের নীতিমালা হচ্ছে, থামবে কমিটির দৌরাত্ম

নিজস্ব প্রতিবেদক |

অবশেষে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে আদায়যোগ্য ফি নির্ধারণের পরিকল্পনা নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।  সঙ্গে অর্থ ব্যয়ের দিকনির্দেশনা তৈরি করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এর নাম হবে, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ফি কাঠামো এবং আয়-ব্যয়সংক্রান্ত নীতিমালা।

অভিযোগ আছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায়ে বেপরোয়া বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আদায় করা টাকা ব্যয়েও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও পরিচালনা কমিটি স্বেচ্ছাচারী। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে অর্থ আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা নেই। এ নিয়ে প্রচুর অভিযোগ জমা পড়ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে। সরকারের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) প্রতিটি প্রতিবেদনেই এমন তথ্য উঠে আসছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও অভিযোগ জমা রেকর্ড আছে।  নতুন বছরে নীতিমালাটি বাস্তবায়ন হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ নিয়ে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়।

নীতিমালায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সরাসরি বা নগদে কোনো প্রতিষ্ঠান অর্থ আদায় করতে পারবে না। নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সব ধরনের ফি আদায় করতে হবে। অর্থ ব্যয়ও করতে হবে ব্যাংক থেকে নিয়ে। সব ধরনের ব্যয় পরিচালিত হবে গঠিত কমিটির মাধ্যমে। আয়-ব্যয়ের অর্থ থাকবে একটি সাধারণ হিসাবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন, ফাউন্ডেশন এবং বেসরকারিভাবে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে। পাশাপাশি ওইসব অর্থ ব্যয়ে নেই স্বচ্ছতা। সরকারের বিধিনিষেধের আওতার বাইরে থাকার জন্য সাম্প্রতিককালে নতুন স্টাইল চালু হয়েছে। সেটি হচ্ছে, এমপিও সারেন্ডার (গ্রহণ বন্ধ) করা। এ তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এছাড়া ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোও ফি আদায়ে অনেকটাই কঠোর বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। প্রতিষ্ঠানগুলো ফি নির্ধারণে অযৌক্তিক হলেও সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে অভিভাবকরা মুখবুঝে সব সহ্য করে থাকেন বলে জানা গেছে।

নীতিমালায় বেতন, ভর্তি ও পরীক্ষার ফি : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৫ ভাগ করে ফি প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, ঢাকা শহর, অন্য মেট্রোপলিটন, জেলা ও পৌর এলাকা, উপজেলা এবং সুবিধাবাঞ্চিত-দুর্গম অঞ্চল। এলাকা ভেদে টিউশন ফি প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে ১২ থেকে ২৫ টাকা নেয়া যাবে। এভাবে চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১৫ থেকে ৪৫ টাকা। ভর্তির আবেদন ফি ৭৫ থেকে ২০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ভর্তি বা পুনঃভর্তি ফি প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে থাকতে হবে। দুই পরীক্ষার ফিও (ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক) শ্রেণি এবং এলাকা ভেদে ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ৮০ থেকে ১৫০ টাকা। অনলাইন আবেদন, রেজিস্ট্রেশন ফি, উন্নয়ন ফি ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী হবে। তবে প্রতি বিষয়ে অভ্যন্তরীণ ফি ৫০ থেকে ৪০ টাকা।

নীতিমালায় আদায়যোগ্য ফির খাত প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ৫০ টাকা, ম্যাগাজিন ফি ১০০ টাকা, মুদ্রণ বাবদ ১৫০ টাকা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক ও বিভিন্ন দিবস উদযাপনে ৫০ থেকে ৭৫ টাকা, কম্পিউটার চার্জ ২৫ থেকে ৫০ টাকা, কৃষি ও বাগান ফি (যদি থাকে) ৩০ টাকা, কমন রুম ফি ২০ থেকে ৩৫ টাকা, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি ৫ টাকা, বিএনসিসি ফি ৫ টাকা, রেডক্রিসেন্ট ফি ২০ টাকা, মসজিদ ও উপাসনালয়ের জন্য ২৫ থেকে ৫০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। ৮ম ও ৯ম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন ফি ও পরীক্ষার সংক্রান্ত সব ফি শিক্ষা বোর্ড নির্ধারণ করে দেবে। আর স্কাটাউ, ক্রীড়া, কল্যাণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফিও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড থেকে নির্ধারণ করে দেবে। উন্নয়ন ফি ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী আদায় করা যাবে।

কলেজে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। কল্যাণ ফি বাবদ ২০ টাকা, পরিচয়পত্র ফি ৩০ টাকা, লাইব্রেরি ফি ২৫ টাকা, ল্যাবরেটরি/বিজ্ঞানাগার ফি ১০০ টাকা, আইসিটি ফি ২০ টাকা, ম্যাগাজিন খাতে ৩০ টাকা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যয় ৩০ টাকা, সাংস্কৃতিক, বিতর্ক ও বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে ৫০ থেকে ১০০ টাকা নেয়া যাবে।

ব্যয়ে কমিটি ও মাধ্যম ব্যাংক : শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সব ফি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে নিতে হবে। এমপিওভুক্ত স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি এবং কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতির নেতৃত্বে তিনজন সিনিয়র শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি অর্থ কমিটি গঠন করতে হবে। কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিনিয়র শিক্ষকের সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট বেতন ও ফি আদায় কমিটি সব প্রকার ফি ও বেতন আদায় সম্পর্কিত মাসিক প্রতিবেদন কমিটি বরাবর দাখিল করবে। প্রতিষ্ঠান প্রধান রিকুইজিশন দিয়ে প্রতি মাসে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় ব্যয় গ্রহণ করবেন। হিসাব দাখিল করে পরের মাসের অর্থ নেবেন। অর্থ কমিটি যাচাই-বাছাই করে সে অর্থ ছাড় করবে। এভাবে বিভিন্ন কমিটির প্রস্তাব করা হয়েছে। অডিট কমিটি পরের বছরের ৩১ জানুয়ারি মধ্যে নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি এবং মাউশিতে জমা দেবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032000541687012