শিক্ষা ভবনেই বহাল এমপিও জালিয়াত প্রোগ্রামার সাইফুর!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বেসরকারি স্কুল-কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওর তথ্য ভান্ডার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ইএমআইএস সেল। কিন্তু এ ইএমআইএস সেলেই বহাল তবিয়তে কর্মরত আছেন এমপিও জালিয়াত প্রোগ্রামার সাইফুর। এমপিও জালিয়াতিতে অভিযুক্ত ও ১৮ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে দুদুকের মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পরে বরখাস্ততো হননি উল্টো পুরষ্কৃত হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া সাইফুরকে রাজস্বখাতে স্থানান্তর করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাকে ঢাকার বাইরে থেকে গতবছর শিক্ষা ভবনে বদলি করে আনা হয়েছে। ভবনে পদায়ন নিয়েই আবারও এমপিও জালিয়াতি শুরু করেছেন সাইফুর। দৈনিক শিক্ষাডটকমের অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। 

প্রোগ্রামার সাইফুর 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষা প্রশাসনের স্তরে স্তরে লুকিয়া থাকা দুর্নীতিবাজদের মাধ্যমেই সাইফুরের মত জালিয়াতরা সুযোগ পাচ্ছেন। দুদুকের মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পরেও সাইফুরকে বরখাস্ত করা হয়নি। এর কারণ আগেও অধিদপ্তর গ্রেফতার হওয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। উপপরিচালক আখতারুজ্জামান নারী নির্যাতন মামলায় গ্রেফতার হলেও তিনি বহাল তবিয়তে অধিদপ্তরেই কর্মরত আছেন। 

ঘুষ নেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পরেও প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে স্থানান্তরে ও প্রাইজ পোস্টিং পাওয়ার পরে আবারও দুর্নীতি শুরু করেছেন সাইফুর। দৈনিক শিক্ষা ডটকমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘুষ থেকে ইএমআইএস সেলের তথ্যে নয় ছয় করেছেন সাইফুর। কোন আদেশ নির্দেশনা ছাড়াই একজন শিক্ষককে সহকারী প্রধান শিক্ষকের গ্রেড পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। অথচ কাম্য যোগ্যতা না থাকায় সে শিক্ষকের এমপিওভুক্ত হওয়ার কথাই ছিল না।  

জানা গেছে, নাটোরের বাগাতিপাড়ার চিথলিয়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে যোগদান করেন মনোয়ার খাতুন। তিনি আগে প্রতিষ্ঠানটিতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে তিনি এমপিওর আবেদন করেন। আগের পদ থেকে ইস্তফা না দিয়ে বেতনভাতা নেয়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে তার আবেদন বাতিল করা হয়। পরে তিনি এপ্রিল মাসে আবারও এমপিওর আবেদন করেন। দ্বিতীয়বার আবেদন করার পরে বিষয়টি তদন্তে নামে নাটোরে জেলা শিক্ষা অফিস। তদন্তে দেখা যায়, সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের কাম্য যোগ্যতা ছিলনা মনোয়ারা খাতুনের। তাই, আবারও এমপিওভুক্তির আবেদন বাতিল হয়। কিন্তু এমপিও জালিয়াত প্রোগ্রামার সাইফুর সে বছরের জুলাই মাস থেকে ইএমআইএস সেলের তথ্যে গড়মিল করে মনোয়ারা খাতুনকে সহকারী প্রধান শিক্ষকের কোডে বেতন পাইয়ে দেন। ভায়বহ এই জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরও। শিক্ষকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ নিয়ে সাইফুর এ জালিয়াতি করেছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

এছাড়াও সরকারি আদেশ নির্দেশ ছাড়াই ইএমআইএস সেলের অনেক তথ্যে নয়-ছয় করেন প্রোগ্রামার সাইফুর। কোন আদেশ ছাড়াই নরসিংদীর রায়পুর উপজেলার কোহিনুর জুট মিলস হাইস্কুলের এমপিও শিটে পোস্ট অফিসের নাম বদলে দেন তিনি। পরে কর্মকর্তাদের কাছে ধরা পড়ে যাওয়ায় ইএমআইএস ডাটাবেজ থেকে দেশের সব স্কুল-কলেজের পোস্ট অফিসের নাম গায়েব করে দেন সাইফুর। সম্প্রতি ইএমআইএস সেলের দুর্নীতির নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দেয়া এক গোপনীয় প্রতিবেদনে এসব বিষয় জানিয়েছে অধিদপ্তর। 

দৈনিক শিক্ষাডটকমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে সাইফুরের এমপিও জালিয়াত হয়ে ওঠার তথ্যও। মাধ্যমিক শিক্ষাখাত উন্নয়ন’ প্রকল্পে প্রোগ্রামার হিসেবে নিয়োগ পান সাইফুর রহমান। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ৩০ জুন প্রকল্পটি সমাপ্ত হয়। পরে, প্রকল্পের ননটেকনিক্যাল কর্মীদের ছাটাই করা হয়। আর সাইফুরসহ প্রকল্পের টেকনিক্যাল কর্মীরা সেসিপ প্রকল্পের অধীনে ইএমআইএস সেলে কাজ করতে থাকেন। তখন থেকেই জালিয়াতির হাতেখড়ি শুরু সাইফুরের।  

দৈনিকশিক্ষার হাতে থাকা তথ্য প্রমাণে দেখা যায়, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের মে থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে কুড়িগ্রামের আশু নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে মোট সাড়ে আঠারো লাখ টাকা আসে। ওই টাকার গ্রহীতা সাইফুর রহমান। কুরিয়ারে ব্যবহার করা সাইফুরের মোবাইল নম্বর ০১৫৫৮৪৮০৩১৮। তবে, কয়েকমাস যাবত ওই মোবাইলটি সাইফুর ব্যবহার করেন না। এখন যে নম্বরটি সাইফুর ব্যবহার করেন তার শেষে ৪০৯৭। টাকা প্রেরণকারী আশুর মোবাইল ০১৭১৬৪৮০৮৭২।বিষয়টি তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন। শাহবাগ থানায় সাইফুরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। সেসময় সাইফুর বরিশাল আঞ্চলের উপপরিচালকের কার্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। বরিশাল থেকে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর দুদক সাইফুরকে গ্রেফতার করে। কিন্তু সাইফুরের বিরুদ্ধে কোন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, গ্রেফতার হলে তার বরখাস্ত হওয়ার কথা থাকলেও সে প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হয়নি। 

গ্রেফতার হওয়ার পরেও ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে সাইফুর রহমানকে রাজস্বখাতে স্থানান্তর করা হয়। ভয়ংকর দুর্নীতিতে জড়িত সাইফুরকে রাজস্বখাতে স্থানান্তর করে তাকে সিলেট অঞ্চলে পদায়ন দেয়া হয়। পরে তদবির করে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে সাইফুর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ইএমআইএস সেলে পদায়ন পান। নতুন করে শুরু করেন দুর্নীতি। 

যোগ্যতা না থাকা শিক্ষককে সহকারী প্রধান শিক্ষকের গ্রেড দেয়া ও সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পোস্ট অফিস গায়েব করে দেয়াসহ গত এক বছরে অনেক দুর্নীতির সাথে সাইফুরের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে অভিযোগ আছে।

 
সাইফুরের নিজ বাড়ী চুয়াডাঙ্গা জেলায়। নানার বাড়ী নোয়াখালী। একজন  সাবেক শিক্ষা সচিবের আনুকূল্য পেয়েছিলেন সাইফুর। 
 
অভিযোগ সম্পর্কে মতামত জানার জন্য সাইফুরের অফিসিয়াল ফোন ও ব্যক্তিগত মোবাইলে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। 
 
তবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাকে বলেছেন তদন্ত সাপেক্ষে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে। 
 
আরও পড়ুন:
 
 
 

পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025560855865479