শিক্ষা হোক সরকারি

সাদী মোহাম্মদ, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়েছে নগর সভ্যতা ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। শিক্ষা এক সর্বজনীন প্রক্রিয়া। সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের শিক্ষার অধিকার রয়েছে। তাই শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে দেয়া উচিত, এটি সময়ের দাবি। যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষার এপ্রোচ কী তা নিয়ে ভাবতে হবে। যথোপযুক্ত কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়নের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার একটি পরিশীলিত রূপ দিতে হবে।

বাংলাদেশে মাদরাসা, স্কুল-কলেজের শিক্ষাব্যবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। সবকিছুকে কাছাকাছি একটি প্ল্যাটফর্মে এনে যুগোপযোগী, আধুনিক করতে হবে। আধুনিক সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিলেবাস, বই প্রণয়ণ করতে সরকারকে ভূমিকা নিতে হবে। 

মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম শিক্ষা। পুরো শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ হলে খুব যে সরকারকে অর্থ খরচ করতে হবে এমনটা নয়। প্রতিষ্ঠানের আয় তখন সরকারের ভান্ডারে জমা হবে। শিক্ষকেরা সরকারি বেতন ভাতা ভোগ করবেন। এ বিষয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান গবেষণা করেছে। শিক্ষা জাতীয়করণ হলে সরকারকে যে বড় বাজেট দিতে হবে না সেটি তারা নিশ্চিত করেছে। শিক্ষক হলেন শিক্ষার প্রধান হাতিয়ার। জাতির মননশীলতা গঠনে একজন আদর্শবান শিক্ষক মূখ্য ভূমিকা পালন করেন।

শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত সকল শিক্ষার্থীকে দেখভাল করেন। শিক্ষার্থির সব ভালোমন্দের মেন্টরের ভূমিকায় থাকেন শিক্ষক। অথচ এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা যোগ্য মর্যাদা, বেতন, সরকারি সুবিধা কম পেয়ে থাকেন। যেখানে নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খান। এই দুশ্চিন্তা নিয়ে সঠিকভাবে পাঠদান, শ্রেণিকার্যক্রম পরিচালনা ও গাইডের ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করা অত্যন্ত জটিল।

দেশের এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান ২২ হাজারের বেশি। এই তুলনায় সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ৬৮৪টি। 

একজন এমপিওভুক্ত মাধ্যমিকের শিক্ষক সাকুল্যে ১৩ হাজার ৭৫০ টাকা বেতনে যোগদান করেন। যেখানে সরকারি স্কুলের শিক্ষক বাড়িভাড়া, চিকিৎসাভাতা, লাঞ্চ বিলসহ সাকুল্যে ২৬ হাজার এর বেশি বেতন পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া দুই সন্তানের শিক্ষা ভাতা সুবিধা, শতভাগ উৎসব ভাতা, সুবিধাজনক কর্মস্থলে বদলির সুযোগ রয়েছে। অবসরের পর মাসিক ভাতা রয়েছে। এ ছাড়া এককালীন মূল বেতনের ৩০০ গুণ প্রাপ্ত হবেন। বেতনের কোনো কর্তন নেই। অন্যদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক বাড়িভাড়া এক হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। উৎসব ভাতা মাত্র ২৫ ভাগ। কোনো সন্তানের শিক্ষা ভাতা নেই। অবসরে কোনো মাসিক বেতন পাবেন না। শুধু এককালীন ৭৫ গুণ পাবেন। বদলির সুযোগ সমপদে পারস্পরিক ফলে বদলির সুযোগ নেই বললেই চলে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের মাধ্যমে সবধরনের বৈষম্য দূর করে শিক্ষকদের দুশ্চিন্তামুক্ত করতে পারলে শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে এটা সহজেই অনুমেয়। দেশের ৯৭ শতাংশ শিক্ষকই এমপিওভুক্ত শিক্ষক। তাই বৃহৎ এই জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত রেখে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন কল্পনাতীত। যাতে দেশের শিক্ষকেরা দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে, পারিবারিক খরচের চিন্তামুক্ত হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে পারেন সেই আশু সমাধানের পথে যাওয়াটাই কাম্য।

বলে রাখা ভালো এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা অভিন্ন সিলেবাসে সরকারি স্কুলের মতোই পাঠদান সম্পন্ন করে। তবু এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা বৈষম্যের শিকার। এর সুষ্ঠু সমাধান করা যাবে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা জাতীয়করণের মাধ্যমে। এসব প্রতিষ্ঠানের বাড়তি আয় সরকারি কোষাগারে জমা নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতার জন্য খুব বেশি অর্থ সরকারকে ব্যয় করতেও হবে না। এটা কার্যকর করা গেলে রাষ্ট্র শিক্ষাক্ষেত্রে খুব দ্রুত সুফল পেতে শুরু করবে আশা করা যায়। বর্তমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের কাছে প্রত্যাশা, শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ জরুরি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী (পরবর্তীতে মন্ত্রী) মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক উপদেষ্টা কবির বিন আনোয়ার শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা সম্ভব না হলেও বাড়িভাড়া, শতভাগ উৎসব ভাতা দেয়ার আশ্বাস দেন। অথচ তারা কিছুই বাস্তবায়ন করেননি।

বর্তমানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর শিক্ষকেরা আবার আশায় বুক বেঁধেছেন। শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে গঠিত সরকার শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে সেটাই কাম্য। শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন, যোগ্য সম্মানে এই সরকার আসীন করবে আশা করা যায়। পাশাপাশি ইএফটিতে বেতন/পেনশন প্রদান, পারস্পরিক বদলি চালু এবং কমিটি প্রথার বিলোপের জন্য ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেয়ায় সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য বর্তমান সরকার।  শিক্ষা জাতীয়করণ হলে মেধাবীরা শিক্ষকতার প্রতি আগ্রহী হবেন। শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি বৈষম্যহীন মেধাভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে সে প্রত্যাশা।

লেখক: মোহাম্মদপুর, মাগুরা

(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু - dainik shiksha পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত - dainik shiksha অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে - dainik shiksha গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026509761810303