পলাশ রাঙা বিদ্যালয়গরিব শিশুদের মাঝে ছড়াচ্ছে শিক্ষার আলো

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি |

রেলস্টেশনের পাশেই একটি বস্তি। সেখানে একটি বাড়ির আঙিনায় খোলা আকাশের নিচে এক সাথে পড়াশোনা করছে বিশ থেকে ত্রিশ জন শিশু। ওদের কারো বয়স ছয় বছর, কারো সাত, কারো আট। ওদের অনেকের বাবা-মা শুধু নিজের নামটিই লিখতে জানেন। ভালো মতো পড়তেও পারেন না।

এমন পরিবারের সন্তান এসব শিশুর কারো বাবা-মা কাজ করেন দিনমজুরের, কেউ চালায় ভ্যান-রিক্সা, কেউ হোটেল শ্রমিকের কাজ। আবার অনেকের বাবা-মা ভিক্ষাও করেন। অস্বচ্ছল পরিবারের এই শিশুদের অনেকের স্বপ্ন একদিন তারা কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউবা শিক্ষক  হবেন। এদের সবাই পড়াশোনা করছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ওদের বাবা-মা স্বল্প শিক্ষিত হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাইরে বাড়িতে কোন পড়াশোনার দিকনির্দেশনা দিতে কিংবা সাহায্য করতে পারেন না।

বাড়িতে শিক্ষক রেখে প্রাইভেট পড়ানোর মতো সামর্থ্যও নেই তাদের। অস্বচ্ছল পরিবারের এই শিশুদের পড়ালেখায় দিকনির্দেশনা দিতে ও সাহায্য করতে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার রেলস্টেশনের পাশেই কয়েকজন স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী গড়ে তুলেছেন ‘পলাশ রাঙা’ নামে একটি নৈশ্য বিদ্যালয়। প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পাঠদান করেন তারা।

সম্প্রতি বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, কলেজ ও নিম্ন মাধ্যমিক পড়ুয়া তিন জন শিক্ষাথীদের কেউ পাঠ্য বইয়ের পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছেন ওই শিশুদের, আবার কেউ হাতের লিখা শেখাচ্ছেন। বিদ্যালয়ে কথা হয় কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থীর সাথে। রহিম বাদশা নামে এক শিশু বলেন, ‘বিকালে এখানে এসে পড়তে আমার খুব ভালো লাগে। কোন পড়া বুঝতে না পারলে ভাইয়ারা শিখিয়ে দেয়।’ সবুজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্রী সীমা আক্তার দোলা বলল, ‘আমাদের স্কুলের পড়াগুলো এখানে আমাদের বুঝিয়ে দেয়া হয়। বাড়িতে বাবা-মা বুঝিয়ে দিতে পারে না। তাই আমি এখানে এসে ভাইয়াদের কাছে পড়া বুঝিয়ে নিই।’ প্রায় একই রকম কথা জানায় আরো কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থী।

এই বিদ্যালয়টি পরিচালনা করছেন সদ্য এসএসসি পাস শুভ শর্মা নামে এক শিক্ষার্থী। সে বলে, ‘অস্বচ্ছল পরিবারের শিশুরা টাকা দিয়ে বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে পারে না। কিন্তু তারা প্রত্যেকেই মেধাবী। বিদ্যালয়ের বাইরে যদি তাদের একটু সঠিক ভাবে পড়াশোনায় যত্ন নেয়া যায়। তাহলে তারা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারবে। এই ভাবনা থেকে আমার কয়েকজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে আমি বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের পড়ালেখা বুঝিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিই।

আমাদের পড়াশোনার ফাঁকে আমরা এই বিদ্যালয়টি পরিচালনা করছি।’ অপূর্ব শর্মা অপু, হৃদয় ইসলাম, সজল আহমেদ, সাজু ইসলাম, আল-আমিন, লিমন ও অনিকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীই এই ‘রাঙা পলাশ’ বিদ্যালয়টিতে শিশুদের পাঠদান দিচ্ছেন। এই শিশুদের পাঠ্য বইয়ের পড়াশোনার বাইরে সপ্তাহে একদিন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ল্যাপটপের ছোট পর্দায় দেখানো হয়ে থাকে। সেই সাথে নাচ, গান, খেলাধুলারও আয়োজন করা হয়। মাঝে মাঝে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণও বিতরণ করা হয়। এ ব্যাপারে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ ডাব্লিউ এম রায়হান শাহ্ জানান, স্কুলের কথা আমি জানি না, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এখন জানলাম তাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা করা হবে।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ - dainik shiksha অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা - dainik shiksha সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে - dainik shiksha শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ - dainik shiksha এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে - dainik shiksha যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067329406738281