শিশুর মানসিক বিকাশে বিদ্যালয় সমাজকর্মীর ভূমিকা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিশুর মানসিক ও জ্ঞানগত বিকাশে বিদ্যালয় সমাজকর্মী নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। সমাজকর্ম আজ সাহায্যকারী পেশা হিসেবে সারাবিশ্বে পরিচিত। বিশেষ করে পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহ যেমন: যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, জার্মানি এবং আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও আধুনিক সমাজকর্ম বা পেশাদার সমাজকর্মের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। বিশ্বায়নের এই যুগে সমাজকর্মের বিভিন্ন শাখার প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা ক্রমবর্ধমান সমস্যায় জর্জরিত দেশসমূহ উপলব্ধি করছে! আজকের আধুনিক সমাজকর্ম তার যাত্রা প্রাক্কালে কেবল মনোসামাজিক সমস্যা সমাধানে কাজ করত কিন্তু বিশ্বায়ন এবং আধুনিকায়নের এই যুগে ক্রমাগত মানুষের সমস্যা বাড়ছেই, সমস্যার ধরন, প্রকৃতি, পদ্ধতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজকর্মের শাখা যুগোপযোগী হয়ে বাড়তে শুরু করেছে ফলে সমাজকর্মের অনুশীলনের ক্ষেত্র উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, বিদ্যালয় সমাজকর্মের প্রথম যাত্রা শুরু যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক, বোস্টন এবং শিকাগো শহরে স্কুলগামী শিশুদের মানসিক বিকাশ, উপযুক্ত পরিবেশে খাপ খাওয়ানো, শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যমান নানাবিধ সমস্যা দূর করে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার মাধ্যমে শিশুর সঠিক বিকাশে ১৯০৭-৮ সালের দিকে বিদ্যালয় সমাজকর্ম চালু হয় এবং বেতনভুক্ত বিদ্যালয় সমাজকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পর ৭০-এর দশকে জার্মানিসহ অন্যান্য উন্নত দেশেও বিদ্যালয় সমাজকর্ম নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়। আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতেও ১৯৭০ সালের দিকে পেশাদার বিদ্যালয় সমাজকর্মী নিয়োগ দেওয়া শুরু করে এবং সেখানকার প্রায় ৮০০টিরও বেশি অভিজাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যালয় সমাজকর্মীর নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়।

বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিশুদের পড়াশোনার দিকটি অনেকাংশে কম গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। আমাদের দেশের স্কুল থেকে ঝরেপড়া শিশুর সংখ্যা নেহাত্ কম নয়। প্রথম শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি, নবম-দশম থেকে একাদশ শ্রেণি—এ সময়গুলোতেই বিভিন্ন আর্থিক, সামাজিক, মানসিক কারণসহ নানা কারণে শিশুদের পড়াশোনার পথ বন্ধ হয়ে যায় অথবা করে দেওয়া হয়। এখানে বন্ধ হওয়া মানে এখানেই তাদের শিক্ষাজীবনের অবসান ঘটে। আমাদের দেশে অল্প বয়সে শিক্ষাজীবন থেকে ঝরেপড়া শিশুদের হয়ে কথা বলার কেউ নেই! কি কারণে শিশুটি স্কুলে যাচ্ছে না, শিশুটির স্কুলে না যাওয়ার পেছনে কোন্ কোন্ কারণগুলো দায়ী, শিশুর শিক্ষার সঙ্গে জড়িত যাবতীয় পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক ইত্যাদি সমস্যার কি সমাধান হতে পারে এসব নিয়ে ভাবার মতো বিশেষজ্ঞ কোনো ব্যক্তি আমাদের দেশে নেই। এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে না বলেই আমাদের দেশের শিশুরা অন্য দেশের শিশুদের মতো গুণগত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে না। শিশুর শিক্ষা সম্পর্কিত যাবতীয় সমস্যার সমাধান এবং পরামর্শ প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বিদ্যালয় সমাজকর্মী যা আমাদের দেশে অনুপস্থিত।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশে শিশুর পরিপূর্ণ মানসিক বৃদ্ধি এবং জ্ঞানগত বিকাশের অন্যতম অন্তরায় এবং প্রতিবন্ধকতা হলো ৫৬ ভাগ পিতা-মাতাই তাদের সন্তানদের ঠিকভাবে বুঝতে পারে না। তাছাড়া শিশুদের বড়ো একটা অংশের কোনো বন্ধু থাকে না যা তাদের মানসিক ও জ্ঞানগত বিকাশের অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। কিন্তু একজন বিদ্যালয় সমাজকর্মী শিশুদের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তাদের বুঝার চেষ্টা করে এবং তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে যা বিদ্যালয় সমাজকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। তাছাড়াও আমাদের দেশের শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো পিতা-মাতার আর্থ-সামাজিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে খারাপ হওয়ার কারণে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে না।

আজকাল অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের প্রত্যাশিত বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ থাকে না, আর থাকলেও তাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। এক্ষেত্রে তাদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি এবং সুবিধা সৃষ্টিতে বিদ্যালয় সমাজকর্মী বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের দেশে আরেকটি সমস্যা যা অনেকেই চিন্তা করেন না সেটি হলো দেশের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানোর সুযোগ খুবই নগণ্য কিন্তু তারাও এদেশের নাগরিক। তাদেরও তো শিক্ষার প্রয়োজন। তবে তারা তাদের অধিকার থেকে কেন বঞ্চিত হবে? তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অধিকার নিশ্চিতকরণে একজন বিদ্যালয় সমাজকর্মী বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, সরকার এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতকরণেও ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই আমাদের দেশেও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিশুর পরিপূর্ণ মানসিক ও জ্ঞানগত বিকাশে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতোই পেশাদার সমাজকর্মী নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।

রাজু আহমেদ : শিক্ষার্থী, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046930313110352