শিশু ধর্ষণে মৃত্যুদণ্ডের আইন নয় কেন : হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ষোল বছর বা তার কম বয়সী শিশু ধর্ষণের শিকার হলে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রেখে আইন করতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ।

ধর্ষণ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বিশেষ আদালত গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।  

পাশাপাশি ধর্ষকের ডিএনএ ডেটাবেইজ তৈরি করে তা সংরক্ষণ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, প্রতিটি জেলায় ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের মাধ্যমে ভিকটিমকে সহায়তা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, ভিকটিমের ছবি গণমাধ্যমে প্রচার-প্রকাশের ক্ষেত্রে কেন সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দেওয়া হবে না- রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এই রুল জারির পাশাপাশি অন্তবর্তীকালীন একটি নির্দেশনাও দিয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এবং চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ (সিসিবি) ফাউন্ডেশনের পক্ষে আইনজীবী ইশরাত হাসানের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি করে রোববার এ আদেশ দেয় আদালত।

সারাদেশে ধর্ষণ প্রতিরোধ এবং ভিকটিমকে সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও সহায়তা দিতে এক মাসের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়কে একটি কমিশন গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে এ কমিশনে চিকিৎসক, বিচারক, মানবাধিকার কর্মী, নারী অধিকার কর্মী, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকদের রাখতে বলা হয়েছে। 

ধর্ষণ প্রতিরোধে একটি সুপারিশমালা তৈরি করে আগামী ৬ মাসের মধ্যে তা আদালতে দাখিল করতে হবে এই কমিশনকে।

আইন, স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র ও মহিলা বিষয়ক সচিব, পুলিশের আইজিসহ মামলার সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

রাজধানীর কুর্মিটোলায় ফুটপাত থেকে তুলে নিয়ে বিমানবন্দর সড়কের পাশের ঝোপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরেএক ছাত্রীকে পাঁচ ঘণ্টা ধরে ধর্ষণের ঘটনার পর হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার এম এস কাউসার।

ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন প্রণয়ন ও ধর্ষণ প্রতিরোধে কমিশন গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয় কাউসারের আবেদনে।

রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রাবেয়া ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

আইনজীবী খন্দকার এম এস কাউসার পরে সাংবাদিকদের বলেন, “দেশব্যাপী ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ক্রমবর্ধমান ধর্ষণের ঘটনা নাগরিক হিসেবে আর মেনে নেওয়া খুবই কষ্টের। সংক্ষুব্ধ হয়েই ধর্ষণের প্রতিকারে এ রিট আবেদনটি করেছি।”

বাংলাদেশের বর্তমান আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তবে ধর্ষণের ঘটনায় ভিকটিমের মৃত্যু হলে স্বাভাবিকভাবেই সর্বোচ্চ শাস্তি হয় মৃত্যুদণ্ড।    

সাম্প্রতিক সময়ে পুরো দেশকে নাড়িয়ে দেওয়া কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনার পর এ আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার দাবি তোলা হয় বিভিন্ন মহল থেকে। ধর্ষণ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বিশেষ আদালত গঠনের দাবিও তোলা হয়।

এদিকে ধর্ষণ ঠেকাতে স্বয়ংক্রিয় ‘অ্যান্টি রেপ সিকিউরিটি এলার্ম’ নামের একটি ডিভাইসের সঙ্গে জাতীয় জরুরি সেবার নাম্বার ৯৯৯ যুক্ত করা যায় কিনা, সে বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে হাই কোর্টের আরেকটি বেঞ্চ।  

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একজন অধ্যাপককে এই কমিটিতে রাখতে বলেছে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আব্দুল হালিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

আব্দুল হালিম পরে সাংবাদিকদের বলেন, ধর্ষণ থেকে নারী ও শিশুদের সুরক্ষা ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং অ্যান্টি রেপ সিকিউরিটি এলার্ম’ নামের ডিভাইস সবার কাছে পরিচিত ও সহজলভ্য করে তুলতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছে আদালত।

মন্ত্রিপরিষদ, আইন, স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিবসহ ১২ বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি - dainik shiksha আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি - dainik shiksha ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027928352355957