শেখ হাসিনা মেডিক্যালে দুর্নীতির নতুন তথ্য

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি |

এসবের মধ্যেই বেরিয়ে এলো আরও নতুন তথ্য। মেডিক্যাল কলেজের সাড়ে ১৫ কোটি টাকার কেনাকাটার পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে জানতেন না দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের সবাই। প্রক্রিয়া শেষে স্বাক্ষর গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয় কমিটির সদস্য তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. সুচীন্ত চৌধুরীকে। এ অবস্থায় স্বাক্ষর দিতে অপারগতা প্রকাশ করে চিঠি পাঠান তিনি। তার স্বাক্ষর ছাড়াই কেনাকাটা সম্পন্ন করে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

২০১৭-১৮ অর্থ বছরের ৯ মে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজে বইপত্র ও সাময়িকী খাতে চার কোটি ৫০ লাখ, এমএসআর সামগ্রী খাতে তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা, যন্ত্রপাতি ও অন্য সরঞ্জাম খাতে পাঁচ কোটি টাকা, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ খাতে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং আসবাবপত্র খাতে এক কোটিসহ মোট সাড়ে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ আসে। বরাদ্দ প্রাপ্তির পরদিন থেকেই দরপত্র আহ্বানে কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ।

দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য পাঁচটি কমিটি গঠন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল দরপত্র প্রস্তাব ও মূল্যায়ন কমিটি। মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি ছিলেন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আবু সুফিয়ান। সদস্য ছিলেন হবিগঞ্জের তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. সুচীন্ত চৌধুরী, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর পক্ষে সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী বিপ্লব পাল, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর পক্ষে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এমএল সৈকত, মেডিক্যাল কলেজের বায়োকেমেস্ট্রি বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর খান ও অ্যানাটমি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. প্রাণকৃষ্ণ বসাক। কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডা. নাসিমা খানম ইভা।

নিয়মানুযায়ী, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভা আহ্বানের আগে কমিটির সবাইকে সভার নোটিশ পাঠানোর কথা। অথচ মাত্র ১০ গজ দূরে সিভিল অফিস থাকা সত্ত্বেও সভায় তাকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠাতে পারেনি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। 

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ১১ জুন দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। অথচ কমিটির অন্যতম সদস্য তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. সুচীন্ত চৌধুরী এ ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। সভার দু’দিন পর দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির কার্যবিবরণীতে স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয় সিভিল সার্জনকে। এসময় তিনি স্বাক্ষর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং সভায় উপস্থিত না থাকা সত্ত্বেও কেন স্বাক্ষর করবেন জবাব চেয়ে চিঠি পাঠান।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের সাবেক সিভিল সার্জন এবং দরপত্র প্রস্তাব ও মূল্যায়ন কমিটির সদস্য ডা. সুচীন্ত চৌধুরী জানান, কমিটির সদস্য হওয়া সত্ত্বেও সভায় উপস্থিত থাকার জন্য আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। সব প্রক্রিয়া শেষে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির কার্যবিবরণীতে স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য বলা হলে আমি স্বাক্ষর না দিয়ে তাদের চিঠি পাঠাই। পরে তারা তাদের নিজের মতো করে সব কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। আমি কোনো ধরনের আপত্তি করিনি।

এ ব্যাপারে কথা বলতে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. আবু সুফিয়ানের মোবাইলে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. নাসিমা খানমকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সম্প্রতি হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের বইপত্র ও মালামাল ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে প্রতিষ্ঠানটিতে। ভ্যাট ও আয়কর খাতে সরকারি কোষাগারে জমা হয় এক কোটি ৬১ লাখ টাকা ৯৭ হাজার ৭৪৮ টাকা। ১৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮১ হাজার ১০৯ টাকা মালামাল ক্রয় বাবদ ব্যয় দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে ওই মালামালের মূল্য পাঁচ কোটি টাকার বেশি নয়। বাকি টাকার পুরোটাই ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে অভিযোগ উঠেছে।

সরবরাহ করা মালামালের মধ্যে ৬৭টি লেনেভো ল্যাপটপের (মডেল ১১০ কোর আই ফাইভ) মূল্য নেওয়া হয় ৯৯ লাখ ৪৯ হাজার ৫শ টাকা। প্রতিটি মূল্য পড়েছে এক লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা। ঢাকার কম্পিউটার সামগ্রী বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ফ্লোরায় একই মডেলের ল্যাপটপ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪২ হাজার টাকায়। এছাড়াও প্রায় প্রতিটি মালামাল অতিরিক্ত মূল্যে দেয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজ এবং পুনম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকার অনিয়মই যেনো নিয়ম! - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকার অনিয়মই যেনো নিয়ম! সনদ জালিয়াতিতে শনাক্ত আরো কয়েকজন নজরদারিতে - dainik shiksha সনদ জালিয়াতিতে শনাক্ত আরো কয়েকজন নজরদারিতে শিক্ষা প্রশাসনে বড় রদবদল - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় রদবদল আকাশে মেঘ দেখলেই স্কুল ছুটি - dainik shiksha আকাশে মেঘ দেখলেই স্কুল ছুটি প্রশ্নফাঁসে শিক্ষক চাই না - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসে শিক্ষক চাই না please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023870468139648